নির্বাচন প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ‘অতি দ্রুত’ সংলাপের দাবি করার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবার বলেছেন, তারা সরকারকে সময় দিতে প্রস্তুত, তবে সেটি ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য নয়’।
জাতির উদ্দেশে দ্বিতীয় ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের মেয়াদের বিষয়টি নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য না রাখার দিন গতকাল রোববার সিলেটে এক আয়োজনে এই কথা বললেন দেড় যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির নেতারা। অবশ্য ড. ইউনূস ভাষণ দিয়েছেন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়, আর ফখরুল বক্তব্য রেখেছেন তার ঘণ্টা চারেক আগে। খবর বিডিনিউজের।
গ্র্যান্ড সিলেট হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত মতবিনিময়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান সংস্কার করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময় সময় দিতে চাই, তবে এটি অনির্দিষ্টকালের জন্য নয়। বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার মাত্র তিন মাসে সব জঞ্জাল দূর করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিয়েছিলেন।
২০০১ সালে প্রথমবারের মত বাংলাদেশের কোনো সরকারপ্রধান হিসেবে পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করে শেখ হাসিনা ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে। সংবিধান অনুযায়ী এই সরকারের নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা না থাকলেও সেই সরকার এই ধরনের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয় এবং উচ্চ পদে অনেকগুলো রদবদল করে অক্টোবরে নির্বাচন দেয়। সেই নির্বাচনে বিএনপি–জামায়াত জোট দুই তৃতীয়াংশের বেশি আসনে জিতে ক্ষমতায় আসে।
গত ৫ অগাস্ট ছাত্র–জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। তিন দিন পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকার শপথ নেয় সংবিধান মেনে চলার অঙ্গীকার করে। সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। কোনো দৈব দুর্বিপাকে সেটা করা না গেলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন আয়োজনের সময়সীমা নিয়ে কিছু বলছে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল পত্রিকায় কলাম লিখে সংবিধান স্থগিত বা রদ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল জাতির উদ্দেশে দ্বিতীয় ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তার সরকারের দীর্ঘ কর্ম পরিকল্পনা প্রকাশ করলেও সরকারের মেয়াদ দিয়ে কোনো ধারণা দেননি।
গত শনিবার ঢাকায় এক আলোচনায় ফখরুল অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, আমি নির্বাচন কথাটার ওপর জোর দিতে চাই। এই যে সংস্কারের বিষয়টা এসেছে, সব সময় আসছে, সেই সংস্কারের জন্য নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেটা কীভাবে আসবে? সেটা আসবে একটা নির্বাচিত পার্লামেন্টের মধ্য দিয়ে, তাদের মাধ্যমে সেটা আসতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। সুতরাং কয়েকজন ব্যক্তি একটা সংস্কার করে দিলেন এটা আমি বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি জনগণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তাদের মাধ্যমে সেই সংস্কার আসতে হবে।
তবে ইউনূস তার সরকারের দীর্ঘ কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করে বলেছেন, তারা একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়তে যান।