মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বেতারের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন স্বাধীন বাংলা বেতারের কথা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। দেশ বিনির্মাণে বেতার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গণমাধ্যম কর্মী ও সমপ্রচার আইন হলে গণমাধ্যম কর্মীদের বেতন কাঠামো থেকে শুরু করে সবকিছু সুরক্ষিত হবে। তবে আইন পাস করা কোনো মন্ত্রণালয়ের একক বিষয় নয়। আইন পাসের সঙ্গে মন্ত্রীসভা, আইন মন্ত্রণালয়, সংসদ ও সংসদীয় কমিটি যুক্ত। যেহেতু তথ্য মন্ত্রণালয়ের একক দায়িত্বে এটি করা সম্ভব নয়, সুতরাং এটি নিয়ে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়াও সম্ভব নয়। তবে এটি সহসা করার চেষ্টা করছি। গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে বাংলাদেশ বেতারের উদ্যোগে বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি (এপিএ) বিষয়ক প্রশিক্ষণের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ঢাকা কেন্দ্রের মতো চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠানও খুব সহসা সারাদেশে শোনানো হবে। সেই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই উদ্বোধন করা হবে। এটি চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, বেতারের অনেকগুলো অনুষ্ঠান অত্যন্ত ভাল এবং গণমানুষের কাছে সেই অনুষ্ঠানমালার ব্যাপক আবেদন রয়েছে। আমাদের কৃষ্টি সংস্কৃতিকে লালন করার ক্ষেত্রে বেতার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। দুর্যোগ-দুর্বিপাকে বেতারই মানুষের কাছে খবর পৌঁছায়।
মন্ত্রী বলেন, নোয়াখালীর ঘটনাটা কোন টেলিভিশন কিংবা কোন পত্রপত্রিকায়, এমনকি কোন অনলাইনেও প্রথম প্রকাশ করেনি। এটি প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, এরপর অন্যান্য মূলধারার গণমাধ্যম সেটি নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করেছে। অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে কিন্তু এখন কোন ঘটনাই ঢাকা থাকে না। এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভালো দিক।
তিনি বলেন, বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্মার্টফোনের ব্যাপকতা বেড়েছে। এ অবস্থায় একটি রেডিও বহন করা সম্ভব নয়। তাই রেডিওকে অ্যাপসের মাধ্যমে টেলিফোনে আনার উদ্যোগ নিয়েছি। এখন অ্যাপসের মাধ্যমে বিভাগীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ বেতার মোবাইলেও শোনা যায়।
তিনি বলেন, ১০০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও আশপাশে পাহাড়সহ নানা কারণে ফেনীতেও চট্টগ্রাম বেতারের অনুষ্ঠান শোনা যায় না। অথচ ১০০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন খুলনা কেন্দ্রের অনুষ্ঠান প্রতিবন্ধকতা না থাকায় এখানে শোনা যায়। গুরুত্ব বিবেচনায় ব্যবসা বাণিজ্য ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিসহ নানা সংবাদ ও কৃষ্টি সংস্কৃতির চাহিদা রয়েছে সারাদেশে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি ঢাকা কেন্দ্রের মতো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে আপলিঙ্ক করে সেটি আবার বিভিন্ন বেতার কেন্দ্রে ডাউনলিঙ্ক করে সারাদেশে শোনানো হয়।
বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক হোসনে আরা তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ, বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রের পরিচালক এসএম আবুল হোসেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তারা দলগতভাবে এসব অপকর্ম করেছে। নৌকায় ভোট দেয়ার অপরাধে আট বছরের শিশু থেকে শুরু করে অন্ত:সত্ত্বা নারী এবং ষাট বছরের বয়স্ক নারীও রক্ষা পায়নি বিএনপির লেলিয়ে দেয়া বাহিনীর হাত থেকে। যারা নারী নির্যাতন-ধর্ষণ দলগতভাবে অতীতে করেছে এনিয়ে যখন তারা কথা বলে, তখন হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়। তাই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য হাস্যকর।
তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেবরা যখন কথা বলেন তখন ভুলে যান তারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন কি করেছেন। এজন্য এরকম লাগামহীন কথা বলতে পারেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার এ ধরণের ঘটনা অতীতে যেগুলো ঘটেছে সেগুলোর বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়েছে। এখন যেগুলো ঘটেছে সেগুলোরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।
চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান শেষে নারী ও শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারকে আর সময় দেয়া যাবে না বিএনপির মহাসচিবের এমন মন্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকরা তথ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, উনারা অবশ্য আমাদেরকে সময় দিচ্ছেন না বহু আগে থেকে। ২০০৯ সালে আমরা সরকার গঠনের তিন মাস পর থেকে উনারা আমাদেরকে সময় দিতে চাননি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে জনগণ আমাদের সময় দিয়েছে। প্রায় পৌনে ১২ বছর ধরে জননেত্রী শেখ হাসিনা একটানা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন, সুতরাং ফখরুল সাহেব সময় দিলেন কি দিলেন না, সেটি বড় কথা নয়, জনগণ সময় দিচ্ছে কিনা সেটিই মূখ্য বিষয়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আজকে যেই ঘটনাগুলো ঘটেছে এগুলো যে আগে ঘটেনি তা নয়। কিন্তু আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপকতা ছিল না বিধায় সেগুলো মানুষ জানতে পারতো না।