সম্পর্কের মেঘ দূর করতে চায় বাংলাদেশ-ভারত

ভিসা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নয়া দিল্লি, বললেন উপদেষ্টা রিজওয়ানা

| মঙ্গলবার , ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৬:৫২ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে নানা কারণে যে মেঘ জমেছে তা উভয় দেশই দূর করতে চায় বলে জানিয়েছেন পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির বৈঠকের বিষয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রিজওয়ানা হাসান বলেন, ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে এবং আরও জোরদারে আগ্রহী।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নানা বিষয় নিয়ে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বক্তব্য ও পাল্টা বক্তব্যের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে এদিন ঢাকায় আসেন বিক্রম মিশ্রি। ওই বৈঠকের পর বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব। খবর বিডিনিউজের।

এর আগে দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর ১৯ কূটনীতিক। এ দুই বৈঠকের বিষয়ে জানাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার গেটে ব্রিফিং করেন রিজওয়ানা হাসান। বিক্রম মিশ্রির সঙ্গে বৈঠকের

বিষয়ে রিজওয়ানা বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সার্ককে শক্তিশালী ভূমিকায় দেখতে চাই। আমরা যে একসঙ্গে বিমসটেকে আছি, সেটাও বলেছি। আমাদের বিষয়ে বিভিন্ন যে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে; সেটার বিষয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে।

গতকাল বিকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব। সেখানে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন তিনি। বিক্রম মিশ্রির এ উদ্বেগ ও ভারতের সংবাদমাধ্যমের অপপ্রচার নিয়ে বাংলাদেশ কিছু বলেছে কিনা জানতে চাইলে রিজওয়ানা বলেন, প্রোপাগান্ডার জবাব লিখিত ও মৌখিক বহুভাবে দিয়েছি। যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোকে সাম্প্রদায়িক দেখানোর সুযোগ কম। সেগুলো ব্যক্তিগত এবং বেশিরভাগ রাজনৈতিক। আমাদের স্পষ্ট অবস্থান হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার এটার অংশ নয় এবং কোনো ঘটনা বরদাশত করা হচ্ছে না। এমন প্রেক্ষাপটে ভারতের সচিবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন কারণে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে যে মেঘ জমেছে, তা দূর করতে হবে। আমরাও বলেছি, মেঘটা দূর করতে হবে।

৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতে আশ্রয় পান শেখ হাসিনা। তার প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, সেখান থেকে তার (শেখ হাসিনা) বিভিন্ন কথাবার্তার মাধ্যমে এক ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে উদ্বেগ জানানো হয়েছে।

তিনি বলেন, সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি রয়েছে, তা প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। জুলাইআগস্টের অভ্যুত্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। এগুলোর বিষয়ে তাদের বক্তব্য হচ্ছে, ভারত সরকার এজন্য কোনোভাবে দায়ী নয়।

৫ আগস্টের পর বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া সীমিত করে দেয় ভারত সরকার। এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে রিজওয়ানা বলেন, ভারতের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তার ভিসা বাড়ানোর উদ্যোগ নেবে। আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই ঘটনায় আমরা আগেই প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং তারা দুঃখ প্রকাশ করেছে। আজ যেহেতু তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ও জোরদার করার কথা বলেছে, তাই আমরা ধরেই নেব সেই ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশের অবস্থানে তারা এখনো আছে। নতুন করে এটা বলা হয়নি। উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের প্রশ্নে আমরা স্পষ্ট বলেছি, অবাধ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভোট হবে।

ইইউ কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কেবল বাংলাদেশে যে সমস্ত ইউরোপীয় দূতাবাস রয়েছে, তাদের সঙ্গে কাজ করি। কিন্তু আজকের বৈঠকে দিল্লিতে আছেন এমন রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে কখনো হয়নি। নতুন বাংলাদেশের যাত্রায় এটি বড় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি এবং বিশ্বাস করি।

রিজওয়ানা বলেন, তারা আমাদের কাছে মানবাধিকারের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। নির্বাচন ও শ্রমিক অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন। উত্তরে আমরা বলেছি, প্রত্যেকটা বিষয়ে প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। আমরা অবশ্যই একটি অবাধ, স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিকে যাব।

তিনি বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কথা জানিয়েছি। বিভিন্ন সংস্কার কমিশন কোন কোন ক্ষেত্রে কী পদ্ধতিতে কাজ করছে তা জানিয়েছি। শ্রম অধিকার নিয়ে ইইউকে বলেছি, সেখানে একটি সংস্কার কমিশন হয়েছে।

ইইউভুক্ত অনেক দেশের ভিসার আবেদন করতে বাংলাদেশিদের দিল্লি যেতে হয়। উপদেষ্টা বলেন, তাদের কাছে সুস্পষ্ট অনুরোধ ছিল, তারা যেন ভিসা সেন্টারগুলো দিল্লি থেকে অন্যত্র নেয়।

বাংলাদেশ নিয়ে ক্রমাগত অপপ্রচারের বিষয়ে ইইউকে জানানো হয়েছে মন্তব্য করে রিজওয়ানা বলেন, কেন জুলাইয়ে বিপ্লব হলো, তার আকাঙ্ক্ষা কী, সেটাকে ধারণ করে বিভিন্ন বিষয়ে জাতীয় ঐক্য গঠনের চেষ্টা হচ্ছে, সেটা জানানো হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে ঢাকায় আনার অনুরোধ
পরবর্তী নিবন্ধঅর্ধশত বিচারক-কর্মকর্তার বিষয়ে তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট