সমালোচনা হলেও নতুন শিক্ষা কারিকুলাম বাস্তবায়ন করতে হবে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, নতুন শিক্ষা কারিকুলামের সমালোচনা হলেও এর বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সমালোচনার ভয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন থেকে সরকার পিছপা হবে না বলেও মন্তব্য করেছেন নতুন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেছেন, ভালো কিছু করার লক্ষ্যে সরকার দৃঢ়তার সঙ্গে কিছু বিষয়ে অবশ্যই সিদ্ধান্ত নেবে। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সমালোচনা, অপপ্রচার ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তার করণীয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু সমালোচনা হবে। সমালোচনার পরও আমাদেরকে যে সিদ্ধান্তগুলো শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসে নেওয়া হয়েছে সেসব সমালোচনা মেনে নেওয়ার সক্ষমতা রাজনীতিবিদদের থাকতে হবে। সেই সক্ষমতা আশা করি আমাদের আছে। আমরা সেটা পারব।
সমালোচিত হব এই ভয়ে যে সিদ্ধান্ত যথার্থ এবং সঠিক সেটা নেব না; তা হতে দেওয়া যায় না। দৃঢ়ভাবে কিছু সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন আমাদের অবশ্যই করতে হবে। এটার কোনো বিকল্প নেই।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এসময় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এখানে আমি রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আছি। আমাদের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা তাদের জায়গা থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষা পরিবারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
নতুন কারিকুলাম নিয়ে সমালোচনা ও গুজব সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হলেও পজিটিভ কিছু প্রচার হচ্ছে না সাংবাদিকের এমন কথার জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নেগেটিভ জিনিস ভাইরাল হয় বেশি। নিবন্ধিত, আইনত ও স্বীকৃত গণমাধ্যম সেটা আপনারা যেভাবে অনুসন্ধান করে একটি তথ্য দেন সেভাবে কিন্তু সাধারণ মানুষ বা যারা অপপ্রচার করে বা আমরা যারা ব্যবহার করি তারা দেই না। নেগেটিভ প্রচারণার প্রতি আমাদের দৃষ্টি বেশি থাকে। অজান্তে আমরা এসব প্রচারণায় জড়িয়ে পড়ি। সেটা মোকাবিলা করা সারা বিশ্বব্যাপী একটি চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে এটা যখন মোকাবিলা করতে যাওয়া হয় তখন অন্যান্য দেশের ষড়যন্ত্র ও কুচক্রীকারীরা আছে তারা সেখানে বাকস্বাধীনতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা বলে। প্রতিক্রিয়াশীল এবং সামপ্রদায়িক, নারীবিদ্বেষী গোষ্ঠীকে শিক্ষার কারিকুলাম নিয়ে কথা বললেই বা কোনো বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ নিতে গেলেই আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে তারা অপপ্রচার করে। বাকস্বাধীনতা রোধ করা হচ্ছে বলে সেটা নিয়ে অপপ্রচার করে।
মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিয়ে কীভাবে অপপ্রচার হয়েছে সেটা আপনারা দেখেছেন। সেখানে প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা ছিল। সমস্যা ছিল না তা কিন্তু নয়। সমস্যাগুলো নিরসন করার চেষ্টা করছি। আমাদের চ্যালেঞ্জটা একটু কমপ্লেঙ।
এই সরকারকে জনসেবায় কিভাবে আরো বেশি করে কাজে লাগানো যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করবেন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরো বেশি ইন্ডাস্ট্রির সাথে, অর্থনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত করতে পারি সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করব।
চট্টগ্রাম নগরীর বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে তিনি কি ভাবছেন এমন প্রশ্নে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, চট্টগ্রামকে ঘিরে অনেক উন্নত, আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো তিনি করে দিয়েছেন। সুদূর টেকনাফ থেকে শুরু করে সেই ফেনী পর্যন্ত। নানা ধরনের অবকাঠামো এখানে হয়েছে। এই অঞ্চলকে ঘিরে যে বাণিজ্য এবং অর্থনীতিতে যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান, সে সমস্ত জায়গায় তরুণরা কিভাবে ভূমিকা রাখতে পারে, তরুণদের কিভাবে কর্মসংস্থান হতে পারে, সেটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আমাদের ভাবতে বলেছেন। নারী–পুরুষ, শ্রেণি–পেশা ও ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে কীভাবে এ অঞ্চলকে ঘিরে তরুণরা অবদান রাখতে পারে, এ বিষয়ে তিনি আমাদের বিশেষভাবে কাজ করতে বলেছেন। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই করণীয় নির্ধারণ করবেন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের নেতৃবৃন্দ এখানে যারা আছেন, যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ এবং প্রগতিশীল অন্যান্য রাজনৈতিক দল সমূহের যারা আছেন, তাদের সবার সাথে আলোচনা করে একটা ইকোনমিক ইকো–সিস্টেম আমরা যাতে করতে পারি এবং ইকোনমির সাথে এডুকেশনের একটা সম্পর্ক, সেটা যাতে আমরা সৃষ্টি করতে পারি। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে চাই। আমাদের সন্তানরা শুধুমাত্র ভবিষ্যতের আশায় বিদেশে পাড়ি দেবে এবং বিদেশে যাওয়া ছাড়া যদি তাদের আর কোনো গতি না থাকে তাহলে বুঝে নিতে হবে আমরা যারা চট্টগ্রামে আছি এটা আমাদের ব্যর্থতা। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করব।
শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তার কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার নওফেল বলেন, কোনো রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ক্ষমতার দম্ভ, অহংকার– এ ধরনের কাজে আমি বিশ্বাস করি না। আমার বাবা চট্টলাবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সাড়ে ১৬ বছর চট্টগ্রামের মেয়র ছিলেন। আমি দেখেছি কিভাবে তিনি জনসেবা দিয়েছেন।
প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় তিনি ছিলেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছেন। রাজনৈতিক ক্ষমতা, আমি যেহেতু শৈশব থেকে দেখে এসেছি সেগুলোর প্রতি তাই আমার কোনো লোভ–লালসা নেই।
এর আগে বৈঠকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসান, উপ পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমানসহ স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।