সমাধানের পথ খুঁজতে আসছেন ৪ উপদেষ্টা

নগরে জলাবদ্ধতা । ১৮ জানুয়ারি খাল নালা পরিদর্শন করবেন, ১৯ জানুয়ারি বৈঠক সিডিএর ৩৬ খালের প্রকল্পে আওতাভুক্ত হবে ৫৭টি খাল : মেয়র

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:২৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিতে আগামী ১৯ জানুয়ারি নগরে বৈঠক করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের চারজন উপদেষ্টা। চার উপদেষ্টাকে নগরের জলাবদ্ধতা সমস্যার পুরোপুরি সমাধানের পথ খুঁজে বের করার দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ তথ্য আজাদীকে জানিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। চার উপদেষ্টা হচ্ছেন শিল্প এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিষযক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। এর মধ্যে তিনজন উপদেষ্টার উপস্থিতিতে গত ৫ জানুয়ারি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে করণীয়’ শীর্ষক একটি সভাও হয়। সভায় চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরির লক্ষ্যে ১৮ জানুয়ারি জলাবদ্ধতা প্রকল্পের বাস্তব অবস্থা জানতে বিভিন্ন খাল ও ড্রেন সরেজমিনে পরিদর্শন এবং ১৯ জানুয়ারি সংস্থাগুলোর সাথে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়। একই বৈঠকে আগামী বর্ষার আগে শহরের সব খাল ও ড্রেন পরিষ্কার, স্লুইসগেটের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত, কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং করা, সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের তাগিদ দেওয়া হয়।

এদিকে গতকাল বিকালে চসিক পাবলিক লাইব্রেরির সম্মেলন কক্ষে দুস্থদের মাঝে বিতরণের জন্য নগরে থানা ও ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মাঝে কম্বল প্রদানকালেও চার উপদেষ্টার সম্ভাব্য বৈঠকের বিষয়টি জানান মেয়র। শাহাদাত বলেন, বর্ষা এলেই চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা হয়, এটা পুরনো কীর্তন। তবে এ সমস্যার পুরোপুরি সমাধান খুঁজতে চার উপদেষ্টাকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, সিডিএর ৩৬টি খালের যে প্রকল্প ছিল, সেটি বাড়ানো হচ্ছে। সামনের প্রকল্পে ৫৭টি খাল আওতাভুক্ত হবে। এতদিন আশা ছিল, জলাবদ্ধতার যে সমস্যা সেটির ৬০ শতাংশ কাজ হলে সমাধান পাব। এবার যেহেতু ৫৭টি খাল হচ্ছে সেই হিসেবে জলাবদ্ধতার সমস্যার ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ সমাধান পাব বলে আশা করছি।

তিনি বলেন, আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি, যে ২১টি খাল বাদ আছে, এসবের কারণে জলাবদ্ধতা পুরোপুরি যাবে না। শেষ পর্যন্ত সেই বার্তা প্রধান উপদেষ্টা পর্যন্ত পৌঁছেছে। তাই সকল উপদেষ্টাকে ডেকে, বিশেষভাবে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার জন্য চারজন উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। যেখানে শুধু জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্যই ১৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামে একটি বিশেষ মিটিং হবে।

আগামী নির্বাচনে যারা কাউন্সিলর প্রার্থী হতে ইচ্ছুক তাদের ফোকাস করার জন্য এখনই মোক্ষম সময় উল্লেখ করে মেয়র বলেন, আগামী নির্বাচনের আর বেশিদিন নেই। হাতে আছে আর একটি বছর। যারা কাউন্সিলর নির্বাচন করতে চান তারা স্ব স্ব ওয়ার্ডে নালা নর্দমা পরিষ্কার এবং মশার স্প্রে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন অভিযানে নিজেরা গিয়ে সবকিছু দেখিয়ে দেবেন।

তিনি বলেন, চসিকের পরিচ্ছন্নকর্মী আছে, আপনারাও (বিএনপি নেতা) নিজেদের কিছু কর্মী সৃষ্টি করে তাদের এ কাজের আওতায় আনেন। সামনে বর্ষাকাল আসবে, এখন নালা খাল পরিষ্কার করবেন বেশি করে। চসিকের যে খাল পরিষ্কার করার লোক আছে তাদের সাথে থেকে দেখিয়ে দেবেন। তাই এটা নিয়ে আপনাদের কাজ করার সুবর্ণ সুযোগ। এটা দলের ভাবমূর্তিও বাড়াবে।

মেয়র বলেন, আপনি যখন দলের একজন নেতা হিসেবে কাজ করতে থাকবেন তখন সাধারণ মানুষও দেখবে যে, বিএনপি জনগণের পক্ষে ও জনগণের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। যেখানে যেখানে মশার উৎপাত বেশি সেগুলো নিয়ে লিখিত অভিযোগ জানাবেন। মশার স্প্রে হচ্ছে কিনা, মেশিন ঠিকমতো আছে কিনা এসব দেখভাল করবেন।

বিএনপি নেতাদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ওয়ার্ড সচিবদের সঙ্গে কথা বলবেন, তারা জন্মনিবন্ধন সঠিক সময়ে দিচ্ছে কিনা। তবে তাদের সঙ্গে ঝামেলা করার দরকার নেই। শুধু জানতে চাইবেন দিতে কেন দেরি হচ্ছে। সেসব বিষয় নোট করে আমাকে দিবেন। তখন তাদের আমি তলব করে জিজ্ঞেস করব।

শাহাদাত বলেন, আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের অধীনে বড় বড় রাস্তার কাজ শুরু হয়ে যাবে। আর যেখানে খানাখন্দ আছে, সেখানে দ্রুত কাজ করার জন্য আমাদের তালিকা করে দিবেন। বিশেষ করে আগ্রাবাদ, মোগলটুলি এলাকায়, কমার্স কলেজের সেদিকে যারা আছেন, তারা আরো জোরালোভাবে ভূমিকা রাখবেন। যাতে করে আমি ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে খুব দ্রুত কাজ করাতে পারি। আর কাজ যেহেতু চলছে, তাই চাই এ কাজ চলমান থাকুক। এটার জন্য একটা বিশাল বাজেট দিয়েছি।

নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়ার সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হাজী মো. সালাউদ্দীন, মো. কামরুল ইসলাম, মশিউল আলম স্বপন, মোশাররফ হোসেন ডেপটি, মো. আজম, ইসমাইল বালি, মন্‌জুর রহমান চৌধুরী, আবদুস সাত্তার সেলিম, মো. সেকান্দর, আবদুল্লাহ আল হারুন, জাকির হোসেন, জাহিদ হাসান, মো. শাহাবুদ্দীন, হাজী বাদশা মিয়া, জসিম উদ্দিন জিয়া, মনির আহম্মেদ চৌধুরী, গিয়াস উদ্দিন ভূইয়া, কাওসার হোসেন বাবু ও জেলী চৌধুরী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদে ৯ নাম প্রস্তাব চসিকের
পরবর্তী নিবন্ধফটিকছড়িতে অস্ত্রসহ দুই যুবককে পুলিশে দিল জনতা