পাঁচ–ছয়টি নৌকার ওপর বসানো হয়েছে এক একটি কল্প জাহাজ। ছুটছে নদীর এপার থেকে ওপারে। রঙিন কাগজ, বাঁশ–কাঠের অর্পূব কারুকাজে তৈরি প্রতিটি জাহাজই নজর কাড়া। আকর্ষণীয় নির্মাণ শৈলী আর বৈচিত্র্যে ভরা প্রতিটি জাহাজে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, জাদী, পঙীরাজ, ময়ূরসহ বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি।
বৌদ্ধদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে গতকাল রোববার দুপুরে কক্সবাজারের রামুর বাঁকখালী নদীতে এ কল্প জাহাজ ভাসা উৎসবের আয়োজন করা হয়। উৎসব ঘিরে নদীর দুই পারে উৎসবের আনন্দে মেতেছে হাজারো নর–নারী। উৎসব পরিণত হয় এক অসামপ্রদায়িক মিলন মেলায়।
আয়োজকরা জানান, এবার হাইটুপি–শ্রীকুল, পূর্ব মেরংলোয়া, উত্তর মিঠাছড়ি, হাজারীকুল, দ্বীপ শ্রীকুল, পূর্ব রাজারকুলসহ আটটি কল্প জাহাজ নদীতে ভাসানো হয়েছে।
গতকাল বিকাল তিনটার দিকে প্রধান অতিথি হিসাবে উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান। উৎসব কমিটির সভাপতি অর্পন বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তাপ্তি চাকমা, রামু উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা মোস্তফা, থানার অফিসার ইনচার্জ আবু তাহের দেওয়ান প্রমুখ।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, আমার মনে হয়েছে বৌদ্ধদের কল্প জাহাজ ভাসা উৎসব সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত। এ ধরনের উৎসব উদযাপনের মধ্যদিয়ে দেশের মানুষ উদ্বুদ্ধ হবে অসামপ্রদায়িক চেতনায়।
বিকেল ৪টায় রামু উপজেলার বাঁকখালী নদীর চেরাংঘাটে গিয়ে দেখা যায়, লোকে লোকারণ্য নদীর তীর। গান–বাজনা, কীর্তন ও ফানুস উড়ানোতে মেতে উঠেছে বিভিন্ন বয়সের নারী–পুরুষ।
চট্টগ্রাম শহর থেকে উৎসব দেখতে আসা হেমা তঞ্চঙ্গা বলেন, সত্যিই অসাধারণ এক উৎসব। এখানে না এলে বুঝতে পারতাম না, এ উৎসব কতটা দৃষ্টি নন্দন ও প্রাণবন্ত।
কলেজ ছাত্রী প্রেরণা বড়ুয়া স্বস্থি বলেন, এটি আমাদের প্রাণের উৎসব। এ উৎসব মূলত বৌদ্ধদের হলেও প্রতি বছর এটি অসামপ্রদায়িক মিলন মেলায় পরিণত হয়।
উৎসবে আসা সংগীত শিল্পী মিনা মল্লিক বলেন, যুগ যুগ ধরে আমরা এ উৎসব উদযাপন করে আসছি। বৌদ্ধ সমপ্রদায়ের হলেও প্রতিবছর এ উৎসব হয়ে ওঠে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির মিলনমেলা। প্রতিবছর আমরা বাঁকখালী নদীতে জাহাজ ভাসানোর আনন্দে মেতে ওঠি। এ যেন আমাদের প্রাণের সম্মিলন। রামু সরকারি কলেজের শিক্ষক মানসী বড়ুয়া বলেন, শত বছর ধরে চলে আসা এই উৎসব আমাদের অস্প্রদায়িক চেতনার তাগিদ দেয়। এই উৎসব বৌদ্ধ সমপ্রদায়ের হলেও সবার অংশগ্রহণে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির মিলন মেলায় পরিণত হয়।
রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের আবাসিক প্রধান প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, আজ হতে দুইশ বছর আগে থেকে এ জাহাজভাসা উৎসবের প্রচলন হয় পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে। সেদেশের মুরহন ঘা নামক স্থানে একটি নদীতে মংরাজ ম্রাজংব্রান প্রথম এ উৎসবেরর আয়োজন করেন। শতবছর ধরে রামুতে মহাসমারোহে এ উৎসব হয়ে আসছে।