সব পয়েন্টে ট্রাফিক ব্যবস্থা কার্যকর আজকালের মধ্যে

নগরীর ৮৫ শতাংশ মোড় ও ক্রসিংয়ে সক্রিয় ট্রাফিক পুলিশ জরুরিভিত্তিতে অটো সিগন্যাল সিস্টেম উন্নয়নের আহ্বান

হাসান আকবর | শুক্রবার , ১৬ আগস্ট, ২০২৪ at ৯:৪০ পূর্বাহ্ণ

আজকালের মধ্যে নগরীর সবগুলো পয়েন্টে ট্রাফিক ব্যবস্থা পুরোপুরি কার্যকর হয়ে উঠবে। গতকাল সিএমপির অন্তত ৮৫ শতাংশ মোড় ও ক্রসিংয়ে পুলিশ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করেছে। একই সাথে শিক্ষার্থীরাও রাস্তায় রয়েছে। তারা যতদিন ইচ্ছে পুলিশকে সহায়তা করতে রাস্তায় থাকতে পারবে বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। পুলিশ কাজে যোগ দিলেও অটো ট্রাফিক সিগন্যালিং সিস্টেম চালু না হলে নগরবাসীর ভোগান্তি কমবে না বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাফিক বিশেষজ্ঞরা। তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে হিমাঘারে থাকা অটো ট্রাফিক সিগন্যাল সিস্টেমের উন্নয়নে ইতোপূর্বে গৃহীত প্রকল্পটি জরুরিভিত্তিতে বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।

পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে সর্বমোট ১৩৫টি ক্রসিং রয়েছে। এরমধ্যে চৌরাস্তার মোড় রয়েছে ৯৭টি এবং তিন রাস্তার মোড় রয়েছে ৩৮টি। নগরীর অধিকাংশ মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যাল রয়েছে। সিএমপির চারটি বিভাগের আওতায় এসব ট্রাফিক সিগন্যালে দায়িত্ব পালন করেন অন্তত দুই হাজার সদস্য।

কোটা আন্দোলন ইস্যু এবং পরবর্তী গণঅভ্যুত্থানের জের ধরে পুলিশ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। ইন্সপেক্টর থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত সদস্যরা ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে কর্মবিরতি শুরু করলে দেশব্যাপী ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বিশৃংখলা তৈরি হয়। এই সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে শুরু করে। শিক্ষার্থীদের নিরলস চেষ্টায় রাস্তায় শৃংখলা ফিরে। নগরবাসীও শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান। বহু মানুষ শিক্ষার্থীদের খাবার এবং পানি দিয়ে উৎসাহিত করে। শিক্ষার্থীদের অনভিজ্ঞতা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাড়তি সময় ব্যয় হলেও যানবাহন মালিক এবং চালকেরা তা মেনে নিয়ে উৎসাহ দিতে থাকেন। তাদের এই নিরলস কষ্টের জন্য কৃতজ্ঞতাও জানান।

পরবর্তীতে অন্তবর্তীকালিন সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আশ্বাস এবং আইজির আহ্বানে পুলিশ সদস্যরা কাজে যোগ দিতে শুরু করেন। সাতদিন পর গত ১২ আগস্ট থেকে নগরীর পাঁচটি পয়েন্টে ট্রাফিক মোতায়নের মাধ্যমে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ফিরতে শুরু করে পুলিশ।

সিএমপি সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার নগরীর ট্রাফিক পয়েন্টগুলোর ৮৫ শতাংশে কাজ করেছে পুলিশ। এরমধ্যে বন্দর এবং পশ্চিম জোনে শতভাগ পয়েন্টে পুলিশ দায়িত্ব পালন করেছে। অন্য দুইটি জোনের ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ পয়েন্টে ছিল ট্রাফিক পুলিশ। পয়েন্টগুলোর অধিকাংশটিতে পুলিশের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও কাজ করেছে। আজ এবং কালকের মধ্যে নগরীর শতভাগ পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ পুরোপুরি দায়িত্ব পালন শুরু করবে।

এই ব্যাপারে গতরাতে সিএমপির এডিশনাল কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহাম্মদ বলেন, আমাদের ৮৫ শতাংশ কাভার হয়ে গেছে। আজ বাকি ১৫ শতাংশও কাভার হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমাদের পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও চাইলে দায়িত্ব পালন করতে পারবে। তারা যতদিন ইচ্ছে ততদিন রাস্তায় থাকবে। আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

তিনি বলেন, শুক্র এবং শনিবার যানবাহনের চাপ কম থাকে। তাই আমাদের অনেকগুলো পয়েন্টে লোকবল লাগে না। রোববার থেকে বৃহস্পতিবার চাপ বেশি থাকে। আবার সকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকার সময়ও আমাদের বাড়তি পুলিশ লাগে। আমাদের পুলিশ সদস্যরা পুরোদমে কাজ করছে। কোথাও কোনো সমস্যা আর থাকবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি নগরীর যানবাহন নিয়ন্ত্রণে নগরবাসীর সহায়তা কামনা করে বলেন, ট্রাফিক আইন মেনে গাড়ি চালালে শুধু পুলিশের ভোগান্তিই কমে না, রাস্তায় চলাচলকারী নগরবাসীও স্বস্তি পাবে।

তবে নগরীর যান চলাচল নিয়ে ভোগান্তিতে থাকা মানুষদের বিশ্বাস, অটো ট্রাফিক সিগন্যাল সিস্টেম চালু করা সময়ের দাবি। এটাকে উপেক্ষা করে একটি সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তাই তারা অন্তবর্তীকালিন সরকারের কাছে নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে অটো ট্রাফিক সিগন্যাল সিস্টেম চালু করার উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, নগরীতে যান চলাচলে শৃংখলার নিয়ন্ত্রণ পুলিশ করলেও ট্রাফিক সিগন্যালের দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাসিনাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু
পরবর্তী নিবন্ধজন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে নতুন নির্দেশনা