প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য মর্যাদাপূর্ণ জীবন ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসার জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল জি–২০ শীর্ষ সম্মেলনে ‘এক পরিবার’ শীর্ষক অধিবেশনে বক্তৃতাকালে তিনি বলেন, বৈশ্বিক পরিবারের সমান সদস্য হিসেবে আমাদের অবশ্যই সকলের মর্যাদাপূর্ণ জীবন এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সব চ্যালেঞ্জ ৯ম পৃষ্ঠার ১ম কলাম
মোকাবেলা করে আগামী দিনে একটি উন্নত বিশ্ব গড়ার লক্ষে জি–২০ নেতাদের কাছে পাঁচ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। তিনি প্রথম সুপারিশে বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়ন জি–২০ সহ সকল বহুপাক্ষিক উদ্যোগের আলোচ্যসূচির শীর্ষে থাকা উচিত। দ্বিতীয় সুপারিশে বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জি–২০–এর উচিত শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার এবং একতরফা শুল্ক অগ্রাধিকারের বর্ধিতকরণ এবং মসৃণ ও টেকসই রূপান্তর নিশ্চিত করতে উত্তরণের পর একটি উল্লেখযোগ্য সময়সীমার জন্য ধারাবাহিকভাবে ট্রিপস (টিআরআইপিএস) ছাড়ে সহায়তা করা। খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় মতামতে বলেন, জি–২০ কৃষিসহ প্রয়োজনীয় পণ্যের মসৃণ, সময়োপযোগী এবং অনিশ্চিত সরবরাহ নিশ্চিত করতে তাদের বাজার খোলা রেখে দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলোর পাশে দাঁড়াতে পারে। চতুর্থত তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ, ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের জন্য বিশ্ব জনসংখ্যার অর্ধেক নারীর প্রতি সমান মনোযোগ দিতে হবে।
শেখ হাসিনা তঁাঁর চূড়ান্ত সুপারিশে বলেছেন, বিশ্বব্যাপী মানব উন্নয়ন নিশ্চিত করতে অংশীদার, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি খাত এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সহায়তায় দক্ষিণ–দক্ষিণ এবং ত্রিভুজাকার সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।
বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতিকে বিবেচনায় রেখে একটি ন্যায্য ও সুষ্ঠু অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার সময় এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি জি–২০ উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সহায়ক হবে। কোভিড–১৯ মহামারী, নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞা যা বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলাকে ব্যাহত করেছে এবং খাদ্য, জ্বালানি এবং সার সংকট সারা বিশ্বের মানুষের ওপর অসহনীয় জীবনযাত্রা চাপিয়ে দিয়েছে।
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, যদিও আমরা এক বিশ্ব, এক পরিবারের কথা বলি, আমরা কি সেটা দেখানোর জন্য কিছু করছি? প্রতি রাতে ৮০ কোটিরও বেশি মানুষ বা বিশ্ব জনসংখ্যার ১০ শতাংশ ক্ষুধা নিয়ে ঘুমাতে যায়। যেখানে বিশ্ব প্রতি বছর সামরিক খাতে ১.৯ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করে, অথচ ২৬ ঘণ্টার সামরিক ব্যয়ের মাত্র ৫.৫ বিলিয়ন দিয়ে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব। এছাড়া, বিশ্বব্যাপী বছরে নষ্ট হওয়া খাদ্য দিয়ে ২শ কাটি মানুষের খাদ্যের যোগান দেওয়া সম্ভব।
শেখ হাসিনা বলেন, বরং এর পরিবর্তে দুঃখজনকভাবে ধনী দেশগুলো বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মতো দরিদ্রদের জন্য সাহায্য কমিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে গণতন্ত্র ও জনগণের মৌলিক অধিকার ফিরে আসে। পরবর্তী সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব আর্থসামাজিক পরিবর্তন হয়েছে।
তিন বলেন, সরকার দারিদ্র্য ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে, চরম দারিদ্র্য ৫ দশমিক ৬ শতাংশে এবং মাথাপিছু আয় পাঁচ গুণ বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, টেকসই উন্নয়নের জন্যে ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়ন আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এসডিজি বাস্তবায়ন ও অর্জনের জন্য ‘সমগ্র সমাজ’ পদ্ধতি গ্রহণ করেছি। বাংলাদেশ ২০২১ সালে এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার পেয়েছে। সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষায় বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। শিক্ষার হার ২০০৬ সালের ৪৫ শতাংশ থেকে গত দেড় দশকে ৭৫.৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ৯৮ শতাংশ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য খাতেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। যেখানে গড় আয়ু ২০০৬ সালের ৫৯ বছর থেকে বেড়ে এখন ৭৩ বছর হয়েছে। আমাদের শিশুমৃত্যুর হার ৮৪ থেকে প্রতি হাজারে ২১– এ নেমে এসেছে এবং মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ৩৭০ থেকে ১৬১ হয়েছে। ১৮,৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিক এবং গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্বাস্থ্যসেবা গ্রামীণ মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘ একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে এই প্রচেষ্টাকে ‘শেখ হাসিনা উদ্যোগ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরা কোভিড–১৯ ব্যবস্থাপনায়ও প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ শক্তিশালী চ্যাম্পিয়ন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের জেন্ডার গ্যাপ ইনডেঙ রিপোর্ট–২০২২ অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের জ্ঞানভিত্তিক, আধুনিক, উন্নত দেশ বা সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করতে চাই।