সন্ধ্যা নামলেই বসে অপরাধীর আড্ডা

কক্সবাজার-খুরুশকুল সেতু

শাহেদ মিজান, কক্সবাজার | শনিবার , ২৬ জুলাই, ২০২৫ at ৫:২৭ পূর্বাহ্ণ

২৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে কক্সবাজার শহরখুরুশকুল সংযোগ সেতু। আধুনিক স্থাপত্যে ৫৯৫ মিটার দীর্ঘ সেতুটি অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দনভাবে তৈরি করা হয়। তার অংশ হিসেবে রাতের বেলায়ও সেতুটির সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে পুরো সেতুতে স্থাপন করা হয় নানা আলোক বাতি। কিন্তু সেই আলোক বাতি কোনোভাবেই জ্বালানো যাচ্ছে না। চোরছিনতাইদের উপদ্রবের কারণে সেতুটি চালুর প্রথম সপ্তাহেই খুলে ফেলা হয়েছে বাতিগুলো। প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও নিরাপত্তা ঘাটতির কারণে এখনো আলোকবাতিগুলো লাগানো যায়নি। এরমধ্যে পিলার খোদাই করে চুরি করে নিয়ে গেছে তারগুলোও। এতে সন্ধ্যা নামলেই এক ভূতুড়ে পরিবেশে জেঁকে বসে পুরো সেতুতে।

সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, চালুর প্রথম সপ্তাহে বহু বাল্ব চুরি করে নিয়ে গেছে চোরের দল। পরে বিচ্ছিন্নভাবে সেতুর পিলার খোদাই করে তারগুলোও নিয়ে গেছে। এতে কোনোভাবেই চালু করা যাচ্ছে না আলোকবাতিগুলো।

আধুনিক ডিজাইনে এই সেতু নির্মাণের পর এটি ঘিরে এই অঞ্চলের লোকজনের মাঝে এক ভিন্ন আমেজ সৃষ্টি হয়। চালুর সাথে সাথেই সেতুটি দর্শনার্থীদের বেড়ানোর কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। প্রতিদিন দুপুর পেরিয়ে বিকাল নামতেই সেতুর উপর বসে বিভিন্ন স্তরের দর্শনার্থীদের মিলনমেলা। এমনকি দূরদূরান্ত থেকে বেড়াতে পর্যটকরাও এই সেতুটি দেখতে আসে। এতে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কিন্তু আলোকবাতি না থাকায় সূর্য ডুব দিতেই নেমে আছে রাজ্যের অন্ধকার। তাই সন্ধ্যার পর আর দর্শনার্থীরা থাকতে পারে না।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অন্ধকার নামলে লোকজন চলে গেলে রাতের রাজ্যে ছিনতাকারী ও মাদকসেবীসহ অপরাধীদের আস্তানায় পরিণত হয় সেতুটি। তারা সেখানে মাদকের আসর বসায় এবং আশেপাশের এলাকা থেকে চুরিছিনতাই করে সেখানে অবস্থান নেয়। এসব অপরাধীদের দাপটে সেতুর আশেপাশেও যেতে পারে না সাধারণ লোকজন। এমনকি জরুরি প্রয়োজনে কেউ হেঁটে সেতুর এপারওপার যেতে পারছে না। গেলেই জিম্মি করে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীর দল। বেশ কয়েকটি এমন ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও কক্সবাজার চেম্বারের সদস্য আবু আদনান সাউদ বলেন, কক্সবাজারখুরুশকুল সংযোগ সেতুটি খুলে দিয়েছে জেলার অর্থনীতির অপার সম্ভাবনার দ্বার। সেই সম্ভাবনাকে যেন আড়াল করছে সন্ধ্যার পরের অন্ধকারাচ্ছন্নতা। আর সে সময়েই ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধীদের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি। এ ব্যাপারে সংশিষ্ট দপ্তরকে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।

স্থানীয় বাসিন্দা গণমাধ্যমকর্মী শাহাদাত হোসাইন বলেন, রাতের অন্ধকারকে পুঁজি করে এই সেতুটিকে নিজেদের আস্তানা বানিয়েছে অপরাধীরা। এটি ব্যবহার করে তারা নির্বিঘ্নে অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে। এতে অপরাধ ও নতুন নতুন অপরাধী বাড়ছে। এই বিষয়ে আইনশৃক্সখলাবাহিনীর ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

তবে কিছুটা হলেও এ বিষয়ে আশার বাণী শুনিয়েছে নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি দপ্তর এলজিইডি। এ ব্যাপারে কক্সবাজার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন খান বলেন, ব্রিজটিতে দেওয়া বৈদ্যুতিক সংযোগের মূল্যবান তারগুলো চুরি হয়ে গেছে। নিচে আবারো তার লাগালে সেগুলোও চুরির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বিকল্প হিসেবে উপরে লাইন টেনে লাইট লাগানোর প্রকল্প এরই মধ্যে জমা দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন হয়ে এলেই কাজ শুরু হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যা, পলাতক স্বামী গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধআজ লায়ন্স জেলা গভর্নর মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ অপু চট্টগ্রাম আসছেন