সন্ত্রাসীদের সাথে কি আলোচনা হয়, প্রশ্ন তথ্যমন্ত্রীর

জামালখানের সেই স্থানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও তথ্যচিত্র পুনঃস্থাপন ।। সহযোগিতায় আজাদী ও ডায়মন্ড সিমেন্ট ।। বিএনপি-জামায়াত বঙ্গবন্ধুর ছবিকেও ভয় পায় : মেয়র ।। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন তরুণ প্রজন্মের জানা উচিত : এম এ মালেক

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৬ নভেম্বর, ২০২৩ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, যারা পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ পোড়ায়, হাসপাতালে হামলা চালায়, কোরআন শরীফ পোড়ায়, গাড়িঘোড়া ও স্কুলঘর পোড়ায়, ওরা কোনো রাজনৈতিক দল নয়, রাজনৈতিক কর্মসূচিও এগুলো নয়। রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ হয়, আগুন সন্ত্রাসীদের সাথে সংলাপ করা যায় না। বরং তাদেরকে নির্মূল করতে সরকার বদ্ধপরিকর। যারা এই সমস্ত কথা বলেন তাদের কাছে প্রশ্ন, সন্ত্রাসীদের সাথে কি আলোচনা হয়? সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে হয়।

গতকাল শনিবার দুপুরে নগরীর জামালখান মোড়ে ‘বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ’ শীর্ষক ম্যুরাল ও তথ্যচিত্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের তত্ত্বাবধানে এবং দৈনিক আজাদী ও ডায়মন্ড সিমেন্টের অর্থায়নে এসব পুনরায় স্থাপন করা হয়। গত ১৪ জুন বিএনপির সমাবেশে যাওয়ার সময় মিছিলকারীরা এই স্থানে বঙ্গবন্ধুর তথ্যচিত্রগুলো ভাঙচুর করেছিল।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপিজামায়াত কিছু সৃষ্টি করতে পারে না। তারা এখন গাড়িঘোড়া পোড়াচ্ছে, মানুষের ওপর আগুন সন্ত্রাস চালাচ্ছে। ওরা দেশটাকে ধ্বংস করতে চায়। বিএনপিজামায়াত দেশ, জাতি, সমাজ ও জনগণের শত্রু। সুতরাং এদেরকে সবার চিহ্নিত করে রাখা দরকার। এরা যতদিন এভাবে ফণা তুলবে ততদিন দেশ ও সমাজ হুমকির মুখে থাকবে।

ম্যুরাল ও তথ্যচিত্র উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক। সূচনা বক্তব্য রাখেন কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন।

হাছান মাহমুদ বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। তাদের অনুকরণে বিএনপিজামায়াত পুলিশ হাসপাতালে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। রাজনীতির নামে পেট্রোল বোমা দিয়ে আগুন সন্ত্রাস দুনিয়ার কোনো জায়গায় হয় নাই। আমরা যখন পাকিস্তান কিংবা পশ্চিমাদের অধীনে ছিলাম তখনও প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে দিয়ে বহু মিছিল গেছে, এসেছে। এদেশের বায়ান্ন বছরের ইতিহাসে অনেক আন্দোলনসংগ্রাম হয়েছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবন কিংবা জাজেস কমপ্লেঙে হামলা হয় নাই। যেটি বিএনপিজামায়াত করেছে। সুতরাং এরা দেশজাতি এবং সমাজের শত্রু। এরা হিংস্র হায়েনা ও জঘন্য জানোয়ারের চেয়েও হিংস্র। সুতরাং এই জানোয়ারদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, আজকে বাচ্চারা নির্ভয়ে স্কুলে যেতে পারছে না। এর মধ্যে একটি স্কুলঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। এই বাচ্চারা কী অপরাধ করেছে? আমাদের সরকার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকেও পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। কেউ আগুন সন্ত্রাস চালালে কিংবা কেউ চালানোর উদ্যোগ নিচ্ছে, এ রকম জানতে পারলে তাদের ধরিয়ে দেবেন। তাহলে এদেরকে নির্মূল করা সম্ভব হবে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, গত ১৪ জুন বিএনপিজামায়াতের মিছিল থেকে এখানে থাকা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও ইতিহাসঐতিহ্যের চিত্রগুলো ভাঙচুর করা হয়। তারা ভাঙচুর করে শুধু ক্ষান্ত হয়নি, ভাঙচুর করার সময় উল্লাসও করেছে। অর্থাৎ, এগুলো ধ্বংস করে তারা উল্লসিত হয়েছে। আজকে আবার সেগুলোকে নতুন আঙ্গিকে স্থাপন করা হয়েছে।

পুনঃস্থাপনের জন্য জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, পৃষ্ঠপোষক দৈনিক আজাদী ও ডায়মন্ড সিমেন্টকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আসলে বিএনপিজামায়াত শুধু ধ্বংসই করতে জানে। এই ম্যুরাল ও ইতিহাসঐতিহ্যের তথ্যচিত্রগুলো কী অপরাধ করেছিল, সেগুলো যে ভাঙচুর করল? যদি জনগণের রায়ে আমরা আবার সরকার গঠন করতে পারি, শেষ আগুন সন্ত্রাসী পর্যন্ত ইনশাল্লাহ নির্মূল করা হবে এই দেশ থেকে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আবার অবরোধের ঘোষণা দিয়ে গতকাল বলেছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের বিজয় সুনিশ্চিত হবে। এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপিজামায়াতের এই অবরোধ কেউ মানছে না। রাস্তায় গাড়িঘোড়া চলছে, অফিস আদালত খোলা। স্কুলকলেজও খোলা। তারা কিছু কিছু জায়গায় পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে মানুষের মাঝে ভয় সঞ্চার করা ছাড়া আর কিছু করতে পারেনি। মাঝখানে বিরতি দিয়ে দুইদিন পরপর তাদের এই অবরোধহরতালের কথা শুনে এখন হনুমানও ভেংচি কাটে।

সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বিএনপিজামায়াত শুধু বঙ্গবন্ধুকে নয়, বঙ্গবন্ধুর ছবিকেও ভয় পায়। তাই তারা স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর করেছে এবং উল্লাস করেছে। যারা স্বাধীন রাষ্ট্রের স্থপতি, একটি রাষ্ট্রের জন্মদাতার ছবি ভাঙচুর করে উল্লাস করে, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী হতে পারেন না। তারা মানুষ নয়, তারা আমাদের দৃষ্টিতে পশুর সমান। তারা জানোয়ার। তাদেরতে রাজপথে প্রতিহত করতে হবে। আমাদের স্থানীয় কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন আবার সেই একই জায়গায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর টাইলস ম্যুরাল স্থাপন করেছেন। তাকে ধন্যবাদ জানাই এবং এই ম্যুরাল নির্মাণে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী অর্থায়ন করায় দৈনিক আজাদী এবং আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক সাহেবকেও ধন্যবাদ জানাই।

দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, এই নগরীর মধ্যে জামালখান সবচেয়ে নান্দনিক একটি ওয়ার্ড। প্রাকৃতিকভাবে এই ওয়ার্ড অনেক সুন্দর এবং সমৃদ্ধ। এই ওয়ার্ডে অনেকগুলো স্কুলকলেজ রয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার স্কুলকলেজের শিক্ষার্থী আসাযাওয়া করে। তারা আসাযাওয়ার পথে ‘বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ’ শীর্ষক ম্যুরাল ও তথ্যচিত্রগুলো দেখে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামী জীবন এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে জানতে পারবে। এই ইতিহাস তাদের জীবনে অনেক কাজে লাগবে। কারণ বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে একটি স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন। তিনি আমাদের মহান স্বাধীনতার স্থপতি। তাঁর সম্পর্কে এবং তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে আজকের তরুণ প্রজন্মের জানা উচিত। কারণ একটি দেশের স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস যদি তরুণ প্রজন্ম না জানে তাহলে সে কখনো সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে না। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন আজকের তরুণ প্রজন্মের জন্য সেই কাজটিই করেছেন। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামী জীবনের ওপর ম্যুরাল ও তথ্যচিত্রগুলো স্থাপন করে নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাসমুখী করে তুলেছেন। এজন্য তাকে ধন্যবাদ।

আজাদী এ রকম সৃজনশীল কাজের সাথে সবসময় থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষ সৃজনশীল ও সৃষ্টিশীল কাজের মাঝে বেঁচে থাকে। এই ধরনের সৃজনশীল কাজগুলো করতে হবে আগামী প্রজন্মের জন্য।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ’ ম্যুরাল ও তথ্যচিত্রগুলোর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে জানতে পারবে। এখানে মোট ১৭টি ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে। এটাতে অর্থায়ন করেছে দৈনিক আজাদী ও ডায়মন্ড সিমেন্ট।

প্রসঙ্গত, জামালখান মোড়ে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের দেয়ালে স্থাপন করা হয়েছে ১৭টি ম্যুরাল ও তথ্যচিত্র। প্রতিটি ছবির সাথে ইতিহাসের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হয়েছে। স্কুলকলেজগামী শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও পথচারীদের তা আগ্রহী করে তুলবে।

জামালখান ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিথুন বড়ুয়ার সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য এরশাদ মাহমুদ, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা জামশেদুল আলম চৌধুরী ও চন্দন ধর, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এমরুল করিম রাশেদ, আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মো. সাহাব উদ্দিন, জামালখান ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাশেম বাবুল, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দুল আলম, শিল্প উদ্যোক্তা সুজয় দাশ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আইয়ুব, আওয়ামী লীগ নেতা জামাল উদ্দিন, ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন করিব মাসুদ ও আওয়ামী লীগ নেতা এটিএম আহসান উল্লাহ খোকন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমীরসরাইয়ে লরির ধাক্কায় প্রাণ গেল তিন শ্রমিকের
পরবর্তী নিবন্ধসবুজ কমবে না