সন্তানকে সৃজনশীল করে গড়ে তোলার শুরুটা আমার নিজের পরিবার থেকেই আমি সবসময় মনে করি–একটি শিশুর সৃজনশীলতার যাত্রা শুরু হয় ঘর থেকেই। তাই আমার বড় সন্তানকে কখনো শুধুমাত্র বইয়ের পড়ায় আটকে রাখিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি ড্রয়িং, রং করা, ছবি আঁকা–এসব সৃজনশীল কাজে তাকে স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে যেতে দিয়েছি। আমি দেখেছি, যখন একটি শিশু স্বাধীনভাবে রং তোলে, কাগজে নিজের কল্পনা আঁকে তার ভাবনা আরও প্রসারিত হয়, আত্মবিশ্বাসও বেড়ে ওঠে। আমার ছোট মেয়ে এখনো মাত্র তিন বছর বয়সী। তাই তাকে আমি কোনো কিছুতেই বাধা দিই না। সে যেভাবে খেলে, যেভাবে পৃথিবীকে দেখে, যেভাবে প্রশ্ন করে– আমি চাই সেগুলো তার নিজের গতিতে বেড়ে উঠুক। ওর কৌতূহলকে আমি থামাতে চাই না; বরং চাই সে নিজের মতো অভিজ্ঞতা থেকে শিখুক। আমি জানি, এই কৌতূহলই একদিন তার সৃজনশীলতার বীজ হয়ে উঠবে। এই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাই আমাকে আরও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করায়–শিশুর সৃজনশীলতা তৈরি হয় পরিবার ও পরিবেশের মমতা, স্বাধীনতা ও সচেতনতার মধ্য দিয়ে।
সৃজনশীলতা গড়ে তুলতে মা–বাবার ভূমিকা :
শিশু জন্মগতভাবেই অনুসন্ধিৎসু। তবে সেই অনুসন্ধিৎসাকে সঠিক পথে বিকশিত করতে পারে সচেতন মা–বাবা। সৃজনশীলতা কোনো হঠাৎ অর্জন নয়; পরিবার, পরিবেশ, ভালোবাসা ও ধারাবাহিক উৎসাহ–এই চারটি উপাদানই এর ভিত্তি। মা–বাবা যখন সন্তানের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন, তার কল্পনা, আবিষ্কার, ছোট ছোট গল্প বা প্রশ্নকে গুরুত্ব দেন, তখন তার মধ্যে জন্ম নেয় আত্মবিশ্বাস। আর এই আত্মবিশ্বাসই সৃজনশীলতার প্রথম ধাপ। শিশুকে ভুল করার সুযোগ দিতে হবে, নিজের মতো শিখতে দিতে হবে, প্রশ্ন করতে দিতে হবে। কঠোর নির্দেশ নয়; নম্র দিকনির্দেশনা ও পাশে থেকে শেখানো–এটাই তাকে স্বাধীনভাবে ভাবতে সাহায্য করে।
বইয়ের বাইরের জগৎ–প্রকৃতির রং, শব্দ, গল্প, খেলাধুলা–এসব বাস্তব অভিজ্ঞতাও শেখার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সন্তানকে স্ক্রিনে আটকে না রেখে খেলতে দেওয়া, রংতুলিতে হাত ডুবিয়ে আঁকতে দেওয়া, জিনিস ভেঙে আবার বানাতে দেওয়া–এসবই তার কল্পনা শক্তিকে প্রসারিত করে। এবং সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো–কখনো সন্তানকে অন্য কারও সঙ্গে তুলনা না করা। প্রত্যেক শিশুর সক্ষমতা আলাদা, আর সেই স্বতন্ত্র ক্ষমতা থেকেই জন্ম নেয় সৃজনশীলতা। সৃজনশীল শিশুরাই বড় হয়ে আত্মবিশ্বাসী, দায়িত্বশীল ও জীবনমুখী মানুষে পরিণত হয়। আর এই যাত্রার শুরুতেই প্রয়োজন মা–বাবার ভালোবাসা, ধৈর্য ও সচেতন দিকনির্দেশনা।











