সনদ নেই, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার!

জমজম হাসপাতালে পাঁচ বছর ধরে দিচ্ছিলেন চিকিৎসা, গ্রেপ্তারের পর কারাদণ্ড

চকরিয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১৭ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:১১ পূর্বাহ্ণ

লিভার, পরিপাকতন্ত্র, ডায়াবেটিস ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে চকরিয়ার জমজম হাসপাতালে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে রোগী দেখে আসছেন হুমায়ুন কবির সরকার (আসল নাম মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির)। বাস্তবে বিএমডিসি নম্বরযুক্ত কোনো সনদ না থাকলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে বছরের পর বছর ধরে রোগী দেখছেন তিনি। বিনিময়ে হাতিয়েছেন বিপুল অংকের টাকা, প্রতারিত হয়েছেন হাজারো বিপন্ন রোগী।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার দুপুরে রোগী দেখা অবস্থায় প্রাইভেট হাসপাতাল জমজমে নিজ চেম্বারে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় তার চিকিৎসা সংক্রান্ত সনদপত্রগুলো জব্দ করার পর তা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ভুয়া হিসেবে প্রমাণিত হয়। হুমায়ুন কবির নিজের দোষ স্বীকার করে নেয়। পরে তার বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৫২ ও ৫৩ ধারা লঙ্ঘন করার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতে মামলা (নং-৫৩/২০২২) রুজুর পর তাকে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়
আদালত। এরপর সাজা পরোয়ানামূলে তাকে কঙবাজার জেলা কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাহাত উজ-জামান দৈনিক আজাদীকে বলেন, বিএমডিসি নম্বরযুক্ত কোনো সনদ বা ডিগ্রি না থাকলেও বিশেষজ্ঞ সার্জন হিসেবে পরিচয় দিয়ে রোগী দেখা ও প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন ব্যবহার করার বিষয়টি স্বীকার করে নেন ঐ ভুয়া চিকিৎসক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন।
অবশ্য হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম কবির দাবি করেছেন, হুমায়ুন কবির ভুয়া ডাক্তার নন। তার বিএমডিসি সনদপত্র রয়েছে। সনদে নামের পর ‘সরকার’ থাকলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে ‘সরকার’ না থাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে ভুয়া ডাক্তার হিসেবে সাজা প্রদান করেছে। তিনি আরো জানান, ২০১৭ সালে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং নিয়োগ বোর্ডে থাকা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সমন্বয়ে গঠিত নিয়োগ কমিটি দাখিলকৃত কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিধি মোতাবেক তাকে নিয়োগ দেয়। এর পর থেকে তিনি নিয়মিত রোগী দেখে আসছেন হাসপাতালে।
ভুয়া ডাক্তার দ্বারা দীর্ঘ বছর চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোভন দত্ত জানান, প্রাইভেট হাসপাতাল জমজমের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য জেলা সিভিল সার্জন মহোদয় উদ্যোগ নেবেন। ভুয়া ডাক্তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি ইতোমধ্যে সিভিল সার্জনকে অবহিত করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার হুমায়ুন কবির ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে নিজের বাড়ি গাইবান্ধায় বললেও জাতীয় পরিচয়পত্রে দেখা যায় ভিন্ন ঠিকানা। সেখানে উল্লেখ রয়েছে- তার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার টরকির চর ইউনিয়নের টরকি ইসলামপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মোহাম্মদ দিদারুল আলমের পুত্র।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসরকারি-বেসরকারি স্কুল ভর্তিতে অনলাইনে আবেদন শুরু
পরবর্তী নিবন্ধপতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালে চাল খালাস শুরু