সত্যের প্রতি অটল ছিলেন ভাষা সৈনিক, প্রবীণ রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী মরহুম বদিউল আলম চৌধুরী। তাঁর ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল সন্ধ্যায় নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে আয়োজিত স্মরণসভায় এ অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের পরিবর্তে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. শরীফ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। প্রধান বক্তা ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক। অনুষ্ঠানে মরহুম বদিউল আলম চৌধুরীর পরিবারের সদস্য, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সামাজিক–সাংস্কৃতিকমনা ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বদিউল আলম চৌধুরী ভাষা সৈনিকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বলে মন্তব্য করেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. শরীফ উদ্দিন। তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে বৈষম্যমূলক যে ভাষাভাষী ছিল সেটা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চেয়েছি এবং ২০২৪ সালে এসেও আমরা সেটা প্রমাণ করতে পেরেছি বাংলাদেশ বৈষম্যের কোনো ঠাঁই নেই। নতুন বাংলাদেশ হবে বৈষম্যমুক্ত।
স্মরণ সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক ভাষা সৈনিক বদিউল আলম আলোকিত মানুষের পথিকৃৎ ছিলেন বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ভাষার জন্য বিশ্বের ইতিহাসে একমাত্র জাতি হিসাবে বাঙালিরাই জীবন দিয়েছে। ভাষা আন্দোলনের সেই চেতনা পরবর্তীতে স্বাধীনতা আন্দোলনকে উজ্জীবিত করেছে। ভাষা আন্দোলনের সেই প্রথম কবিতা আমার বাবা কোহিনুর প্রেসে ছাপিয়েছেন। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠন তমুদ্দুন মজলিস। আর সেই সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন বদিউল আলম। তিনি শুধু ভাষা সৈনিক ছিলেন না, এই সমাজে অনেক ক্ষেত্রে তিনি অবদান রেখে গেছেন। যার প্রমাণ আজকের বিশাল সংখ্যক উপস্থিতি। আমি সাধারণত স্মরণ সভায় এতো উপস্থিতি দেখিনি এর আগে।
স্মরণ সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, বদিউল আলম যেটা সত্যি সেটার উপর অটল থাকতেন। তিনি একজন পরহেজগার এবং দ্বীনদার মানুষ ছিলেন। তিনি ছিলেন সত্যিকার দেশপ্রেমিক। কোনো ধরনের লোভ লালসা তাঁর মধ্যে ছিল না। ভাষা আন্দোলনে সামনে থেকে চট্টগ্রামকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। চট্টগ্রামে শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে বদিউল আলমের অনেক অবদান রয়েছে। বক্তারা বলেন, বদিউল আলম ছিলেন একজন দানবীর। অনেক মসজিদ, মক্তব, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান তিনি করে গেছেন। কিন্তু সরকারিভাবে কোনো স্বীকৃতি পাননি। এসময় বক্তরা বদিউলকে সরকারিভাবে ভাষা সৈনিক হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান।অধ্যাপক কাজী শাহাদাত হোসাইনের সভাপতিত্বে ও মোহাম্মদ নিযাম উদ্দিনের পরিচালনায় স্মরণসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের সাধারণ সম্পাদক লায়ন নজমুল হক চৌধুরী, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য এডভোকেট দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সদস্য সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট মফিজুল হক ভুঁইয়া, মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান।
উপস্থিত ছিলেন মরহুমের সন্তান নাছরিন কাওছার চৌধুরী, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, এডভোকেট কানিজ কাওছার চৌধুরী রিমা ও এডভোকেট মাহমুদ উল আলম চৌধুরী মারুফ সহ বিপুল সংখ্যক শুভানুধ্যায়ী। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন রাজনীতিবিদ হারুন জামান, খোরশেদ আলম, বিশিষ্ট আইনজীবী মঈন উদ্দিন, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ সভাপতি আজিজুল হক চৌধুরী, এড. দেলোয়ার হোসেন, এড. নাছির উদ্দীন চকোরী, আমরা চাটগাঁবাসীর সাধারণ সম্পাদক এবিএম ইমরান, এড. জায়েদ বিন রশীদ ও এড. ইয়াসির আরাফাত প্রমুখ।