দেশে রাষ্ট্র–রাজনীতিতে আর যাতে চরমপন্থা কিংবা ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ না পায় সে বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তারেক রহমান। গতকাল শনিবার বিকালে এক আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের জীবনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। আপনাদের–আমাদের, আমাদের সকলের কোনো আবেগতাড়িত কিংবা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে রাষ্ট্র রাজনীতিতে ভবিষ্যতে আর যাতে কোনো চরমপন্থা কিংবা ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ না পায় সে ব্যাপারে আপনাদেরকে তথা সমগ্র দেশবাসীকে সতর্ক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। খবর বিডিনিউজের।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে তারেক রহমান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে কিছু নৃশংস এবং অনাহত ঘটনায় জনমনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অক্ষমতা ক্ষেত্র বিশেষে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো একটি অংশের সহায়তায় কেউ কেউ দেশে উদ্দেশ্যমূলক পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে কি না– সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় মানুষের কথা শুনলে বোঝা যায় এই বিষয়েও জনমনে জিজ্ঞাসা রয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে আদৌও নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব কি না কোনো কোনো মহল থেকে এমন ধরনের প্রশ্ন উপস্থাপন বিচ্ছিন্ন বক্তব্য হিসেবে বোধহয় দেখার আজ কোনো সুযোগ নেই। তাদের (অন্তর্বর্তীকালীণ সরকার) সম্ভাব্য প্রতিশ্রুত সময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে কেউ সময়ক্ষেপণ করতে চাইছে কিনা এই ব্যাপারেও সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য আমি গণতান্ত্রিক জনগণের প্রতি, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি, আন্দোলনরত দলগুলোর প্রতি জানাই আহ্বান।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান রেখে তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও স্বচ্ছ ও সাহসী ভূমিকা রাখুন। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকামী জনগণ আপনাদের পাশে থাকবে। গণতন্ত্র বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলো আপনাদের পাশে থাকবে যদি আপনাদের ভূমিকা আরও স্বচ্ছ ও স্বাধীন হয়।
ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ও শিক্ষকদের উদ্যোগে ‘গণঅভ্যুত্থান–২০২৪ : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবদান ও শহীদদের স্মরণে’ এই আলোচনা সভা হয়। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ছাত্র–তরুণরা অবশ্যই রাজনীতি করবে, রাজনৈতিকভাবে সচেতন থাকবে। ছাত্র–তরুণদের সাহসী অংশগ্রহণ ছাড়া বিশ্বের কোনো দেশেই স্বৈরাচার কিংবা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থান সফল হওয়ার উদাহরণ হওয়ার খুবই বিরল। তবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য আপনাদেরকে সবার আগে জ্ঞান–বিজ্ঞানে মেধা–মননে প্রজ্ঞা–অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হতে হবে। আপনাদের মনে রাখতে হবে জ্ঞান–বিজ্ঞানে অগ্রসরমান বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে শুধু স্লোগাননির্ভর কিংবা প্রচলিত প্রথাগত রাজনৈতিক সংস্কৃতি ২০২৪ সালের শহীদ, ১৯৭১ সালের শহীদ কারোই কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। শহীদদের কাঙ্খিত বাংলাদেশ গড়তে চাইলে অবশ্যই আপনাদেরকে নিজেদের যোগ্য মানুষ এবং যোগ্য নেতা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
অধ্যাপক তৌফিকুল ইসলাম মিথিলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, বিএনপির জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন কমিটির আহ্বায়ক রুহুল কবির রিজভী, সদস্য সচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল হান্নান চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।