সতর্ক আছি, মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগেও আছি : হাছান

নূর চৌধুরীকে ফেরাতে আলোচনা হয়েছে ।। চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগে আগ্রহী ডেনমার্ক

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ৩০ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:৩৫ পূর্বাহ্ণ

মিয়ানমারে সংঘাত চলার মধ্যে বাংলাদেশে মর্টার শেল ছিটকে আসার ঘটনায় নজর রাখার পাশাপাশি দেশটির সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। মর্টার শেল ছিটকে আসার বিষয়ে গতকাল সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, সেখানে আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমারের আর্মি, বাহিনী দুটির মধ্যে সংঘাত চলছে। সেই সংঘাতেরই মর্টার শেল আমাদের দেশে এসে পড়েছে। এটি আমরা অবশ্যই নজরে রেখেছি, সেখানে আমাদের সীমান্তরক্ষীরা সতর্ক আছে এবং মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী বা সরকারের সঙ্গেও যোগাযোগের মধ্যে আছি।

এদিকে নূর চৌধুরীকে ফেরাতে কানাডার সাথে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ডেনমার্ক চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বলেও জানান তিনি। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।

মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহীদের মধ্যে ফের প্রচণ্ড গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনায় সীমান্তের এপারে কঙবাজারের টেকনাফ ও বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ির বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। তারা সীমান্তের কাছে হেলিকপ্টার উড়তে দেখেছেন। ভারী মর্টার শেলের শব্দও তারা শুনতে পাচ্ছেন। আতঙ্কে থাকার কথা বলেছেন ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গারাও। রোববার ওপার থেকে বাংলাদেশের ভেতরে অন্তত ৫টি মর্টার শেল ছিটকে আসার বিষয়ে খবর প্রকাশ হয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।

মর্টার শেল উড়ে আসার বিষয়ে উদ্বিগ্ন কিনা, এমন প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা আশা করব যে, সেখান থেকে কোনো মর্টার শেল আমাদের দেশে আসবে না। তবে আমরা সতর্ক আছি এ ব্যাপারে।

মিয়ানমারে সংঘাতের মধ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। আগে থেকে থাকা রোহিঙ্গাদের নিয়ে কঙবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার ক্যাম্পগুলোতে এখন ১১ লাখ রোহিঙ্গার বাস।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নিলেও প্রায় সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাও নিজ দেশে ফিরতে পারেনি। আবারও সংঘাতের ফলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অনুপ্রবেশের কোনো শঙ্কা করছেন কিনা, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখনো কোনো কিছু দৃশ্যমান হয়নি।

নূর চৌধুরীকে ফেরাতে আলোচনা হয়েছে : বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলসের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু হত্যায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর চৌধুরীকে ফেরানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কানাডার সরকারকে হাইকমিশনার এ বিষয়ে জানাবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এ তথ্য জানিয়েছেন। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস ও ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস মোলার তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসেন। এরপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন হাছান। তখন নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান।

মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কানাডায় মৃত্যুদণ্ড নেই, সেটি একটি অসুবিধা বলে আমাকে হাইকমিশনার জানিয়েছেন। আমি দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। হাইকমিশনার বলেছেন, তিনি বিষয়টি তাদের সরকারকে জানাবেন।

গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলার বিষয়েও তিনি কথা বলেন। হাছান মাহমুদ বলেন, সরকার গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিষয়টি সত্য নয়। ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের পাওনা সঠিকভাবে বুঝিয়ে দিতে পারেনি, তারা বঞ্চিত হয়েছে। এতে সংক্ষুব্ধ শ্রমিকরাই মামলা করেছে। এজন্য শ্রম অধিদপ্তরের একটি অনুমোদন লাগে, সেটি তারা নিয়েছে। বিস্তারিত আইনি ব্যাখ্যা আইন মন্ত্রণালয় দেবে।

সংসদ ভেঙে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির কয়েকজন নেতা। এ বিষয়ে হাছান মাহমুদ পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, বিএনপির আবদার রক্ষা করার জন্য কি সংসদ ভাঙবে? গত নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল, বিএনপির অংশগ্রহণ ছিল না। সংসদ নির্বাচিত হয়েছে আগামী পাঁচ বছরের জন্য। এই মেয়াদ পূর্ণ করেই আগামী সংসদ নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করতে পারে।

কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে আলোচনার সময় বাংলাদেশ থেকে আরও অভিবাসী নেওয়ার ব্যাপারেও কথা হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। তিনি জানান, অভিবাসী নেওয়ার জন্য প্রিফারেন্সিয়াল যে ব্যবস্থা, বিশেষ করে কৃষিখাতে নেওয়ার জন্য এ দেশের শিক্ষার্থীদের কানাডার স্টুডেন্টস ডিরেক্ট স্কিমে (এসডিএস) অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে তাদের মধ্যে কথা হয়েছে।

ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডেনমার্কের দ্বিতীয় উন্নয়ন অংশীদার বাংলাদেশ। তারা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। জলবায়ু ইস্যুতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে ডেনমার্কের সাথে কাজ করছি। আগামীতেও এই বিষয়ে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া বাংলাদেশের ইকোনমিক জোনগুলোয় ড্যানিশ ইনভেস্টমেন্ট বৃদ্ধির বিষয়েও কথা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচন্দনপুরায় ১০ তলা ভবন থেকে পড়ে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধনিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে টেকনাফ সীমান্তের দুই গ্রামের মানুষ