গত বৃহস্পতিবার সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালায় পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় এক পথচারী প্রাণ হারান। একইদিন রাঙামাটিতে ট্রাক্টর দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়। এর আগে ১১ মে সীতাকুণ্ডে সড়ক দুর্ঘটনায় ২ মারা যান। একইদিন হাটহাজারী ও সাতকানিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪ জন মারাত্মক আহত হয়। বাইকসহ আরোহী পুড়ে যায় এতে। এর আগে ৩ মে পটিয়ায় বাইক দুর্ঘটনায় নিহত হয় একজন। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। বৃহত্তর চট্টগ্রামে গত দেড় মাসে অন্তত ৩০ জন প্রাণ হারিয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। গ্রামীণ সড়কগুলোতেও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। বেশিরভাগ দুর্ঘটনা হচ্ছে মোটরসাইকেল সংঘর্ষে। মোটরসাইকেল আরোহীদের বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না থাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের গাড়ি ড্রাইভিং করার কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের গত দেড় মাসের তথ্য যাচাই ও রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনের তথ্যে এসব জানা গেছে। সড়ক দুর্ঘটনার পিছনে বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা, সড়কের বেহাল দশা প্রধান কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। এর জন্য সবচেয়ে বেশি সচেতনতা দরকার এবং এর জন্য নানা উদ্যোগ জরুরি বলেও মনে করেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত দেড় মাসে বৃহত্তর চট্টগ্রামে ১৪০টির বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণহানি হয়েছে ৩০ জনের বেশি। আহত হয়েছে ১৮০ জনের বেশি। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৪০টি। প্রায় প্রতিদিন সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং প্রাণহানি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে অতিরিক্ত গতির কারণে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে। এই গতি নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির মাধ্যমে নজরদারি এবং চালকদের মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ দরকার বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা। যানবাহনের বেপরোয়া গতি এবং পথচারীদের অসচেতনতার কারণে পথচারী নিহতের ঘটনা বাড়ছে। এজন্য সরকারি উদ্যোগে গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জীবনমুখী সচেতনতামূলক প্রচারণা চালালে সড়ক দুর্ঘটনা কমবে জানান রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান।
রোড সেফটি বাংলাদেশের এপ্রিল মাসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত এপ্রিল মাসে দেশে মোট সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫৯৩টি। নিহত ৫৮৮ জন এবং আহত এক হাজার ১২৪ জন। এরমধ্যে ২১৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয় ২২৯ জন, যা মোট নিহতের ৩৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান জানান, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক–মানসিক অসুস্থতা, বেতন–কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ–যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে বলেও জানান রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান। তিনি আজাদীকে বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে হলে বেশ কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। চালকদের বেতন–কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে, বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, পরিবহন মালিক–শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্ব রাস্তা তৈরি করতে হবে, পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে, রেল ও নৌ–পথ সংস্কার করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে, টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সড়ক পরিবহন আইন–২০১৮ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। সাইদুর রহমান জানান, পেশাগত সুযোগ–সুবিধা বিশেষ করে, নিয়োগপত্র, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকায় যানবাহনের অধিকাংশ চালক শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ। এজন্য তারা সবসময় অস্বাভাবিক আচরণ করেন এবং বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালান। ফলে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হন। তাই, সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে হলে পরিবহন শ্রমিকদের পেশাগত সুযোগ–সুবিধা এবং সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।