সড়কে মৃত্যুর মিছিল। গতকাল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, রাঙামাটির বেতবুনিয়া এবং কক্সবাজারের মহেশখালীতে তিন দুর্ঘটনায় নারী ও শিশুসহ মারা গেছেন ৮ জন। এর মধ্যে বেতবুনিয়ায় মারা গেছেন ৬ জন। পিকআপ ভ্যান উল্টে সীতাকুণ্ডে প্রাণ গেছে এক শিশুর। আহত হয়েছেন ৬ জন। ওরা সবাই এক পরিবারের। এছাড়া মহেশখালীতে টমটম চাপায় মারা গেছে ৬ বছরের এক শিশু।
বেতবুনিয়ায় ৬ মৃত্যু : রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রাম–রাঙামাটি সড়কে সিএনজি টেক্সি ও পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই নারীসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ৬ জনের মধ্যে ৪ জন চট্টগ্রামের চার উপজেলার বাসিন্দা। দুর্ঘটনার পর পিকআপ ভ্যানের চালক পলাতক রয়েছেন। ঘটনার জন্য দায়ী চালককে ধরতে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিহতরা হলেন চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার কাজী পাড়ার বাসিন্দা সোয়াব আলীর ছেলে মো. আবু তাহের (৫০), হাটহাজারী উপজেলার পূর্ব আলমপুরের মৃত তৈয়ব মিয়ার ছেলে মাহাবুবুর রহমান বাচ্চু (৫০), রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মাজার গেট সাদেক নগর এলাকার মো. সিরাজুল হকের ছেলে জয়নাল আবেদীন ওরফে আবুল বাশার, সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী হাসনাবাদের মৃত হোলজারের ছেলে ইজাদুল (২৫), রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া তালুকদার পাড়ার আব্দুর রহিমের স্ত্রী নুরুন নাহার (৪০) ও কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের ডাবুয়ার মংশি মারমার মেয়ে মিনু মারমা (৩৫)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল সোয়া ১০টার দিকে বেতবুনিয়া বাজার থেকে একটি সিএনজি টেক্সি চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল। বিপরীত থেকে আসছিল একটি পিকআপ। টেক্সিটি বেতবুনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পাড়া এলাকায় সরু রাস্তায় ওভারটেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি মর্মান্তিক অবস্থা। ঘটনাস্থলে তিনজন নিহত পেয়েছি। পরে আরও তিনজন মারা গেছেন।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, বেতবুনিয়া বাজারে সকালে বাজার করে গন্তব্য যাওয়ার পথে দুর্ঘটনাটি দেখি। পরে প্রশাসন ও আইনশৃক্সখলা বাহিনীকে খবর দেওয়ার পর তারা ঘটনাস্থলে আসে।
নিহত টেক্সি যাত্রী নুরুন নাহারের স্বামী আব্দুর রহিম বলেন, সকালবেলা আমার স্ত্রী বেতবুনিয়ায় বাজার করতে আসে। বাজার করে সিএনজিতে করে যাওয়ার সময় একটা পিকআপ এসে সামনে থেকে ধাক্কা দিলে সিএনজিটি পুরো দুমড়ে মুচড়ে যায়। এতে আমার স্ত্রীসহ সিএনজিতে থাকা বেশ কয়েকজন ঘটনাস্থলে মারা গেছেন।
কাউখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম সোহাগ বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ৬ জন মারা গেছেন। ঘটনাস্থলে তিনজন এবং পরবর্তীতে আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার পর আরো তিনজন মারা গেছেন। মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে।
রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কাপ্তাই সার্কেল) মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা আইনগত কার্যক্রমগুলো গ্রহণ করছি। আশা করছি, এই দুর্ঘটনায় যে গাড়ির চালক দায়ী তাকে আইনের আওতায় আনতে পারব এবং শীঘ্রই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারব।
সীতাকুণ্ডে পিকআপ উল্টে শিশু নিহত : সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানান, সীতাকুণ্ডে বাসের ধাক্কায় পিকআপ ভ্যান উল্টে জাকিয়া ইসলাম আরিফা (৫) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল ৬টার দিকে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আরিফা নোয়াখালী জেলার লক্ষ্মীপুর ভবানীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ জামালের মেয়ে। তারা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় বসবাস করেন। ওখান থেকে চট্টগ্রামে একটি নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়ার জন্য পরিবারে সদস্যদের নিয়ে যাওয়ার পথে এ দুর্ঘটনায় পড়েন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন পিকআপ চালকসহ একই পরিবারের নারী–পুরুষসহ ৭ জন।
আহতরা হলেন নিহত শিশুর পিতা মোহাম্মদ জামাল (৩৮), মাতা লাইজু আক্তার (৩০), মো. ফয়সাল (১৪ ), সেলিনা (৬০), সুমাইয়া আক্তার (৫), রিমা আক্তার (৩২) ও নেত্রকোনার বাসিন্দা পিকআপভ্যান চালক রায়হান (২৪)।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামমুখী মালামাল বোঝাইকৃত একটি পিকআপ ভ্যান উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর বাঁশবাড়িয়া ইউনিটেক্স স্পিনিং মিল এলাকা পার হচ্ছিল। এ সময় একটি যাত্রীবাহী বাস ওভারটেক করতে গিয়ে পেছন থেকে পিকআপ ভ্যানকে চাপা দিলে ভ্যানটি সড়কের পাশে গিয়ে উল্টে যায়। এ সময় মাথায় গুরুতর আঘাত লেগে শিশু জাকিয়া ইসলাম ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
খবর পেয়ে সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মধ্যে ৬ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
বার আউলিয়া হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল মোমেন বলেন, তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিহত শিশুর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার লক্ষ্মীপুর ভবানীগঞ্জ এলাকায় বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, একই স্থানে গত শুক্রবার দুপুরে ডাম্প ট্রাক চাপায় ইউনিটেক্স স্পেনিং মিলের এক শ্রমিক নিহত হয়েছিলেন।
মহেশখালীতে টমটম চাপায় শিশু নিহত : মহেশখালী প্রতিনিধি জানান, মহেশখালীতে টমটম চাপায় ৬ বছরের এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের পূর্ব ফকিরাঘোনা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শিশুর নাম আলী শাহ। সে বড় মহেশখালী ইউনিয়নের পূর্ব ফকিরাঘোনা এলাকার মুহাম্মদ আলমের পুত্র।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে আসা টমটমটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুটিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই শিশুটি মারা যায়। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কায়সার হামিদ।