সড়কের স্থায়িত্ব রক্ষার বিষয়ে সচেতন হতে হবে

| রবিবার , ২৭ আগস্ট, ২০২৩ at ৪:৪৭ পূর্বাহ্ণ

নগরের সড়কগুলোর অবস্থা খুবই শোচনীয়। চলাচলের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে বেশিরভাগ সড়ক। গত ২৫ আগস্ট দৈনিক আজাদীতে ‘সড়কের কেন এই অবস্থা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সামপ্রতিক তীব্র তাপ প্রবাহ এবং ভারী বর্ষণে নগরীর সড়কগুলোর ‘ছাল’ উঠে গেছে। কয়েকশ’ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা। ইতোমধ্যে সিটি কর্পোরেশন মূল সড়কগুলোতে সংস্কার করেছে। কিন্তু তাও উঠে যাচ্ছে। তবে অলিগলিসহ বিস্তৃত এলাকার সড়কের অবস্থা শোচনীয়। এই বেহাল দশার জন্য নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার এবং কাজের মানও নিম্ন বলে অভিযোগ উঠেছে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, নগরীতে সর্বমোট ১১শ কিলোমিটারের মতো রাস্তা রয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রামে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শাহ আমানত সেতু কিংবা কালুরঘাট পর্যন্ত রাস্তাটিই মূলত প্রধান সড়ক। এর বাইরে অলংকার মোড় থেকে ট্রাংক রোড, বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে স্ট্যান্ড রোড, কাপাসগোলা রোড, পোর্ট কানেক্টিং রোড, বায়েজিদ বোস্তামী রোডসহ ৬শ’টির মতো পিচ ঢালা রাস্তা রয়েছে। এর বাইরে নগরীতে ইট বিছানো এবং কাঁচা রাস্তা রয়েছে। নগরীর পিচঢালা ১১শ’ কিলোমিটার পথেই মূলতঃ ভারী যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু এই সড়কগুলোর অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে। বড় বড় খানাখন্দে ভরে গেছে প্রায় প্রতিটি সড়ক।

বিশেষজ্ঞরা সড়কমহাসড়কে বিটুমিনের মান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে জানান। তাঁরা বলেন, আগে আমাদের দেশে পাঁচ টনের ট্রাকই বেশি চলত। যানবাহনের সংখ্যা ও সেগুলোয় ভার বহন দুইই কম ছিল। এ কারণে ৮০১০০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করলেও সড়কগুলো টিকে যেত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শুধু ট্রাকের সংখ্যাই বাড়েনি, ওভারলোডিংও বেড়েছে ভয়ংকরভাবে। আমাদের রাস্তায় গাড়ি বেড়েছে, গাড়ির ভার বেড়েছে, যানজট বেড়েছে, কিন্তু এখনো আমরা সেই মান্ধাতা আমলের ৮০১০০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার থেকে বের হতে পারিনি। এখনকার গাড়ির ভার আর নিম্নমানের বিটুমিন বইতে পারছে না। তবে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় শুধু ভালোমানের বিটুমিন ব্যবহার করলেই সড়ক টেকসই হবে না বলে মনে করছেন তাঁরা। তাঁদের ভাষ্যমতে, বাংলাদেশে বর্ষাকালে বৃষ্টি হয় বেশি, গরমে আবার কড়া রোদ পড়ে। বৃষ্টি ও রোদদুটিই বিটুমিনের জন্য খারাপ। দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনায় সড়কে পানি জমেও বিটুমিন নষ্ট হয়। যানজটে আটকে থাকা গাড়ির চাপে বিটুমিন নষ্ট হয়। যত ভালো মানের বিটুমিনই ব্যবহার করা হোক কেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া ও সড়ক ব্যবহারপ্রবণতায় তা টেকসই হবে না। এক্ষেত্রে একমাত্র বিকল্প হতে পারে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ করা। শুধু বিটুমিন নয়, বাংলাদেশে মহাসড়ক নির্মাণে মাটিপাথরবালিসিমেন্টসহ সবখানেই ছাড় দেয়ার প্রবণতা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা।

২০১৬ সালের ৬ জুন ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী রাস্তা তৈরির খরচ বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ। প্রতি কিলোমিটার রাস্তা তৈরিতে ২.৫ মিলিয়ন ডলার থেকে ১১.৯ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়। এই তথ্য ২০০৫০৭ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী।

বলা বাহুল্য, সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। মাঠপর্যায়ে সেটি নির্মাণ করে ঠিকাদার। এ ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে প্রায়ই নিম্নমানের নির্মাণকাজের অভিযোগ থাকে। পাশাপাশি প্রশ্ন ওঠে তাদের সক্ষমতা নিয়েও। প্রকৌশলীদের মতে, বিশ্বের উন্নত দেশগুলো মহাসড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে যেসব যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, সেগুলো বাংলাদেশেও ব্যবহার করা হয়। নির্মাণযন্ত্র এক হলেও পার্থক্য সেগুলোর মানে। দেশী ঠিকাদাররা যেসব যন্ত্র ব্যবহার করেন, তার বেশির ভাগই পুরনো ও রিকন্ডিশন্ড। বিদেশী ঠিকাদাররা বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে যেসব নির্মাণযন্ত্র নিয়ে আসেন, কাজ শেষের পর সেগুলো দেশের ঠিকাদারদের কাছে কম দামে বিক্রি করে দেন। আবার বিদেশ থেকেও সরাসরি রিকন্ডিশন্ড যন্ত্রও সংগ্রহ করতে দেখা যায় ঠিকাদারদের। দীর্ঘদিন ব্যবহারের কারণে এসব যন্ত্রের কর্মক্ষমতা কমে যায়।

আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে বাজেট স্বল্পতার কারণে রাস্তাঘাট বারবার করা সম্ভব নয়। তাই এর স্থায়িত্ব রক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে সচেতন করতে হবে। তাহলেই আমরা পারব বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্য দিয়ে গড়া আমাদের উন্নতির প্রধান মাধ্যম যোগাযোগব্যবস্থাকে সচল রাখতে। কোনো কিছু ধ্বংস বা নষ্ট করার জন্য কোনো মানুষ এককভাবে দায়ী নয়, এর জন্য দায়ী আমরা সবাই। দেশের জন্য ক্ষতিকর যেকোনো কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে হবে যার যার অবস্থান থেকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধকাজী নজরুল ইসলাম : প্রেম ও দ্রোহের কবি