সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হবে

| সোমবার , ১৩ অক্টোবর, ২০২৫ at ৮:১১ পূর্বাহ্ণ

পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির ক্রমেই অবনমন ঘটছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫০ হাজারে। এর আগে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অন্তত নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল কমপক্ষে ১ হাজার ৪২ জন, যা চলতি বছরের একদিনে সর্বোচ্চ ছিল। সব মিলিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে এ পর্যন্ত ২১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। খবরে আরো বলা হয়, গত বছরের সেপ্টেম্বরঅক্টোবরেও ডেঙ্গু সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার ছিল ঊর্ধ্বমুখী। এমনকি ঋতুবৈচিত্র্যগত কারণে নভেম্বর থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ স্বাভাবিকভাবেই কমার কথা থাকলেও এ মাসেও এ হার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এদিকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেও সবচেয়ে বেশি ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় এ বছরের একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ৫৩ শতাংশ। সেই সঙ্গে মৃত্যুর হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৯৫ শতাংশে। তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, বাস্তবে এ হার আরো বেশি। কেননা হাসপাতাল থেকে নেয়া তথ্য দিয়ে কেবল ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হিসাব করা হয়েছে। এর বাইরে অনেকেরই মৃত্যু হচ্ছে ডেঙ্গুতে, যাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়নি।

জনস্বাস্থ্যবিদদের মতে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা ও সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। কিন্তু জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে ঘাটতি রয়েছে। এক্ষেত্রে জনগণকে সচেতন করার কোনো বিকল্প নেই। কীটতত্ত্ববিদরা মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনার কথা বলেন। এজন্য প্রথমত, চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। কেননা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে মশা বেশি জন্মায়। দ্বিতীয়ত, জৈবিক পদ্ধতিতে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে কোথায় কোথায় মশা বেশি, কোন ধরনের মশার উপদ্রব বেশি এবং এ মশার জন্য কোন ওষুধ কতটুকু ছিটাতে হবে, তা নির্ণয় করে ওই জায়গায় ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। যেন এসব জায়গায় নতুন করে মশা জন্মাতে না পারে। এছাড়া মশার অতিরিক্ত প্রজনন বন্ধের জন্য জলাশয়ে মাছ, হাঁস ছাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তৃতীয়ত, রাসায়নিক ওষুধ ছিটিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সবশেষ সাধারণ জনগণের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এ চারটিকে একত্রে কীটতত্ত্ববিদদের মতে ‘সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনা’ বলা হয়।

উদ্বেগজনক হারে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তার রোধে এখনই সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ভাষ্য অনুযায়ী ডেঙ্গু বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং মারাত্মক মশাবাহিত রোগ। এই ভাইরাস মোকাবেলায় প্রতিরোধই হবে সর্বোত্তম পন্থা। সরকারি সেবাসংস্থা ও জনগণের সমন্বিত সচেতনতাই পারে আমাদেরকে এই মহামারী থেকে নিরাপদ রাখতে। এ ক্ষেত্রে ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রথমে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি ও উৎপত্তির দিকে নজর দিতে হবে। এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস এবং প্রাপ্তবয়স্ক মশা ধ্বংস করে ডেঙ্গু সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংসের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোর পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন হওয়ার তাগিদ দেন তাঁরা। ডেঙ্গুর ভয়াবহ এ বিস্তার রোধে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে দোষারোপ বাদ দিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করেন তাঁরা।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, দীর্ঘকাল ধরে এমন পরিস্থিতির পরও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে না পারাটা হতাশাজনক। সেই সঙ্গে এ পরিস্থিতি তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলারও প্রতিফলন। বছর বছর একেকটা ডেঙ্গু সিজন আসছে এবং তাতে জনগণের শারীরিক ভোগান্তি বাড়ছে, মৃত্যুর হার বাড়ছে। সেই সঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে স্বাস্থ্য খাতে জনগণের পকেট ব্যয়ও বেড়ে চলেছে। অন্যদিকে হাসপাতালগুলোয় রোগীর চাপ বাড়ছে। বেড না পেয়ে অনেক হাসপাতালে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেবা নিতে দেখা যায় রোগীদের।

মনে রাখতে হবে পৃথিবী যতদিন থাকবে, ততদিন ডেঙ্গু থাকবে। তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি পদ্ধতি প্রয়োগ ও সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে। মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ অব্যাহত না রাখলে পরিস্থিতি ভয়াবহ থেকে আরও ভয়াবহ হবে। গবেষণা ও পর্যালোচনা করে স্থায়ীভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নইলে দিনদিন সমস্যা বাড়তেই থাকবে। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে