সঞ্চালন লাইনের ত্রুটির কারণে চট্টগ্রামে পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুতের লাখ লাখ গ্রাহক বিদ্যুতের সুফল পাচ্ছেন না। ভ্যাপসা গরমেও বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ চট্টগ্রামের মানুষ। ফলে ভোগান্তিতে রয়েছেন নগরীর পাশাপাশি উপজেলার মানুষ। সাম্প্রতিক সময়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সঞ্চালন লাইন এবং ট্রান্সফর্মারের ত্রুটির কারণে পিডিবির গ্রাহকদের ভোগান্তি বেড়েছে।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলায় চলছে পল্লী বিদ্যুতের ভেলকিবাজি। ফলে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন গ্রাহকরা। একদিকে বিদ্যুৎ থাকে না, আরেকদিকে প্রায় স্থানে ট্রান্সফরমার সমস্যার অজুহাত। শুধু তাই নয়, অনেকে বিদ্যুতের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে অভিযোগ জানালেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা, এমনকি দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়। এ অবস্থায় উপজেলা পর্যায়ে পল্লী বিদ্যুতের সাধারণ গ্রাহকদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
এদিকে পিডিবি চট্টগ্রামের উৎপাদন ও সরবরাহের তালিকায় লোডশেডিং না থাকলেও সাধারণ মানুষের অভিযোগ দিনে এবং রাতে বিদ্যুতের আসা–যাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। বিদ্যুতের আসা–যাওয়ার সাথে সাথে ভোল্টেজ ওঠানামার কারণে বাসা–বাড়ির টিভি–ফ্যান–ফ্রিজ–ভাল্ব–মটরসহ ইলেকট্রনিঙ সামগ্রী নষ্ট হচ্ছে।
পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে পিডিবির ১৫ লাখ গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে প্রি–পেইড মিটারের আওতায় এসেছে সাড়ে ১১ লাখ গ্রাহক। কিন্তু প্রতি বছর গরমকাল শুরু হলে শুরু হয় বিদ্যুতের আসা–যাওয়ার ভেলকিবাজি।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (উত্তর) শহীদুল ইসলাম মৃধা আজাদীকে বলেন, মঙ্গলবার (গতকাল) চট্টগ্রামে কোনো লোডশেডিং ছিল না। কোথাও কোথাও লাইনের কাজের জন্য কিছু সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।
পিডিবির গতকালের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের পিক আওয়ারে চাহিদা ছিল ১১০০ মেগাওয়াট। জাতীয় গ্রিড থেকে ১১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চট্টগ্রামের জন্য পাওয়া গেছে।
দেবপাহাড় এলাকায় পিডিবির গ্রাহক সাইফুদ্দিন ও রবিউল আলম আজাদীকে জানান, রোববার রাত ১টায় বিদ্যুৎ চলে যায়। সারা রাত আর আসেনি। এই তীব্র গরমে পরদিন দুপুর ১টায় বিদ্যুৎ এসেছে। অথচ পিডিবিকে রাতেই অভিযোগ জানানো হয়েছিল। তাদের অভিযোগ, সঞ্চালন লাইনের ত্রুটি এবং ট্রান্সফর্মারের ত্রুটির বিষয়ে পিডিবির সংশ্লিষ্ট সাব–স্টেশনে অভিযোগ জানানো হলেও তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা আসেন না। অনেক সময় ফোনও রিসিভ করেন না।
লাভলেইন এলাকার মো. ইউনুচ, মোমিন রোড এলাকার শৈবাল এবং চেরাগী পাহাড় এলাকার সোহেল জানান, পিডিবি সারা বছর লাইনের কাজ করে। তারপরও বিদ্যুতের আসা–যাওয়ার ভোগান্তি কমছে না। এই গরমে বিদ্যুতের আসা–যাওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। ভোল্টেজ ওঠানামার কারণে টিভি, ফ্যান, ফ্রিজ, ভাল্ব, মটরসহ ইলেকট্রনিঙ সামগ্রী নষ্ট হচ্ছে।
চট্টগ্রামে পিডিবির নিজস্ব এবং প্রাইভেটসহ মিলে ৩০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি পিডিবির নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র। অবশিষ্ট ১৪টি প্রাইভেট। এই ৩০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে বর্তমানে কাপ্তাই লেকে পানি সংকটের কারণে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে ৩টি বন্ধ রয়েছে। সোলারের দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। এছাড়া মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬০০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। ৬০০ মেগাওয়াটের অপর ইউনিট থেকে গতকাল ১৫৭ মেগওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে।
পিডিবির প্রতিদিনের উৎপাদন তালিকায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন থেকে রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২১০ মেগাওয়াটের দুটি কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। এই কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী জানান, গ্যাসের কারণে দুটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। এছাড়া শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াটের এবং ৫৫ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটিও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে।
এদিকে প্রাইভেটের মধ্যে রিজেন্ট পাওয়ার বন্ধ রয়েছে। ১০০ মেগাওয়াটের এনার্জিপ্যাক বন্ধ রয়েছে। ৫০ মেগাওয়াটের বারাকা পাওয়ার প্ল্যান্টটি বন্ধ। কেইপিজেড বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও বন্ধ। ১১০ মেগাওয়াটের বারাকা কর্ণফুলী বন্ধ এবং ১১৬ মেগাওয়াটের আনলিমা বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও বন্ধ রয়েছে।