সংস্কার নিয়ে ১৪ মাস পরেও কেন আলোচনা চলছে, প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকায় এক সেমিনারে তিনি বলেন, সংস্কার নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে, ঐকমত্য কমিশন হয়েছে আমাদের কোনো আপত্তি নাই। বিএনপির তরফে কয়েক দফায় সংস্কার প্রস্তাব জনগণের কাছে তুলে ধরার প্রসঙ্গ টেনে আমীর খসরু বলেন, ঐকমত্য কমিশনের যে চর্চা… আমাদের কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু এই চর্চার মাধ্যমে ১৪ মাস পরে আমাকে এখনো আলোচনা করতে হবে কেন? যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, এবার সেগুলোর নিয়ে আলোচনার সমাপ্তি টানার কথা বলেন তিনি। ঐক্যমত্যের বাইরে গিয়ে আবার কেন আমাদের এত আলোচনা করতে হচ্ছে, কেন আমাদের পিআর নিয়ে আলোচনা করতে হচ্ছে। পিআর এ যদি ঐকমত্য না হয়, ক্লোজড দ্য চাপ্টার। খবর বিডিনিউজের।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সংস্কারের বিষয়গুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছতে সরকার ঐকমত্য কমিশন গঠন করে। সংলাপে সহমতে আসা বিষয়গুলো নিয়ে জুলাই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। তবে সম্প্রতি সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দাবি করে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল সারা দেশে বিক্ষোভ করেছে।
বিএনপির নেতা আমীর খসরু বলেন, আমরা জনগণের মালিকানার কথা বলছি, তো জনগণের মালিকানা যদি হয়ে থাকে, আমরা কয়েকটি দল টেবিলের চারদিকে বসে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করব… এই দায়িত্ব কে দিয়েছে? কোনো রাজনৈতিক দল, বিএনপিকেও দেয় নাই, অন্য কোনো দলকেও দেয়নি। তার মতে, আগামীর বাংলাদেশে কী কী সংস্কার দরকার হবে, দলগুলোর মধ্যে যে ঐকমত্য হয়েছে, তাও জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে। আগামী নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে আসতে হবে, এটা পাস করার জন্য।
আমীর খসরু বলেন, আজকে যদি আমরা সবাই নাকে খত দিয়ে সব অলিখিত জিনিসে ঐকমত্য হয়ে যাই, কালকে যদি বাংলাদেশের মানুষ এটাকে না চায়, ম্যান্ডেট না দেয় তাহলে কী হবে? নির্বাচনের মাধ্যমে দেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ফিরিয়ে আনার পরে প্রত্যেকটি দলের অধিকার থাকবে সংসদের ভেতরে শুধু নয়, সংসদে বাইরে, তারা তাদের দাবি–দাওয়া নিয়ে প্রতিনিয়ত জনগণের কাছে যেতে পারবে, তাদের কথা বলতে পারবে, জনমত সৃষ্টি করতে পারবে এটাই তো এটাই তো গণতন্ত্র।
জনমত গঠন না করে ঐকমত্যের কথা বলেন অন্যান্য দাবি তুলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করলে কোনো কাজ হবে না বলে মন্তব্য করেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচনের অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে আমরা বিশ্বাস করি, সেই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং বাংলাদেশ একটি স্থিতিশীলতার দিকে ফিরবে। যে সংস্কারগুলোর কথা বলা হচ্ছে, সেই সংস্কারগুলো করব।
রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘সংস্কার ও নির্বাচন : প্রেক্ষিত জাতীয় ঐক্য’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজক ছিল ‘ডেমোক্রেসি ডায়াস বাংলাদেশ’। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ডায়াসের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন। সেখানে বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মহিউদ্দিন ইকরাম, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, সাংবাদিক সোহরাব হাসান।