কাস্টমস এ্যাক্ট, ১৯৬৯ রহিতক্রমে যুগোপযোগী করে নতুনভাবে প্রণয়নকল্পে জাতীয় সংসদে ‘কাস্টমস বিল, ২০২৩’ উত্থাপন করা হয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে বিলটি উত্থাপনের প্রস্তাব করেন। বিলটির উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের আমদানি পর্যায়ে রাজস্ব আহরণ ১৯৬৯ সনের কাস্টমস আইন এর আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিবছর বাজেট সেশনে অর্থ আইনের মাধ্যমে এই আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হয়। তবে বৈদেশিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের সাথে সাথে কাস্টমসের বিভিন্ন পদ্ধতি সহজীকরণের উদ্দেশ্যে সংশোধিক কিয়োটো কনভেনশন ও পরবর্তীতে স্বাক্ষরিত ট্রেড ফ্যাসিলিয়েশন এগ্রিমেন্ট এর আলোকে বাংলাদেশের কাস্টমস আইনকে সহজবোধ্য ও আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা ও ব্যবসা বান্ধব করার উদ্দেশ্যে বিদ্যমান আইনটি পরিবর্তন করে নতুন আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। খবর বাসসের।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য তথা আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে কাস্টমস ব্যবস্থাপনা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে সরকার তথা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক গৃহীত বহুমুখী সংস্কার ও আধুনিকায়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কাস্টমস সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা অন্তর্ভুক্ত করে ইংরেজি ভাষায় প্রণীত দ্য কাস্টমস এ্যাক্ট, ১৯৬৯ রহিতক্রমে বাংলায় একটি আধুনিক কাস্টমস আইন প্রণয়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী বিভিন্ন সংস্থা এবং অংশীজনের সাথে আলোচনার মাধ্যমে কাস্টমস আইনের একটি খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক খসড়া আইনটি অংশীজনদের মতামতসহ অন্যান্য বিভিন্ন রকম পর্যালোচনা ও পরিমার্জন শেষে প্রয়োজনীয় সংশোধনীসমূহ অন্তর্ভুক্ত করে রাজস্ব আদায়, আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের প্রসার, ব্যবসা সহজীকরণ ও নতুন শিল্প খাতের প্রসার সহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে যুগোপযোগী বিধান করার উদ্দেশ্যে কাস্টমস বিল, ২০২৩ বাংলা ভাষায় প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত কাস্টমস আইন, ২০২৩ এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য সমূহ হলো– বিদ্যমান কাস্টমস এ্যাক্ট, ১৯৬৯ ইংরেজি ভাষায় প্রণীত হলেও প্রস্তাবিত ‘কাস্টমস আইন, ২০২৩’ মাতৃভাষা বাংলায় প্রণীত। বিদ্যমান কাস্টসম এ্যাক্ট, ১৯৬৯ এ মোট ২২৩টি ধারা আছে। প্রস্তাবিত কাস্টমস আইন, ২০২৩ এ মোট ২৬৯টি ধারা রয়েছে; রাজস্ব সংগ্রহ এবং বাণিজ্য সহজীকরণের লক্ষ্যে বিশ্ব কাস্টমস সংস্থা (ডব্লিউসিও) এর অনুমোদিত আন্তর্জাতিক চুক্তি ও কনভেনশন অনুযায়ী এবং আন্তর্জাতিক উত্তমচর্চা যেমন: অনুমোদিত অর্থনৈতিক অপারেটর (এইও), পারস্পরিক স্বীকৃতি চুক্তি (এমআরএ), ইলেকট্রনিক ঘোষণা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট (পিসিএ), নন–ইনট্রুসিভ ইন্সপেকশন (এনআইআই) ইত্যাদি নতুন আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বিলটি আইনে পরিণত হলে আমদানি পর্যায়ের রাজস্ব আদায় ও বাণিজ্য সহজীকরণসহ আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা যাবে মর্মে আশা করা যায়।
পরে মন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিলটি অধিকতর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠিয়ে দেন।