কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের সংরক্ষিত বনের ভেতর গাছপালা ও পাহাড়ি টিলা সাবাড় করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে টমটমসহ ব্যাটারি চালিত রিকশার চার্জিং স্টেশন। এমনকি বিশালায়তনের বনভূমি দখলে নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে মুরগীর ফার্মও। আর যাতায়াতের সুবিধার্থে পাহাড় কেটে নির্মাণ করা হয়েছে রাস্তা। খোদ বনবিভাগের কার্যালয়ের অদূরে অবৈধভাবে জবর–দখলের পর সেখানে স্থাপন করা চার্জিং স্টেশন ও মুরগির ফার্মে দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগও।
সংরক্ষিত বনের ভেতরকার এই দৃশ্য সরেজমিন চোখে পড়বে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ইসলাম নগর এলাকায়। অভিযোগ উঠেছে, কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইলিয়াছ সাঈদীর নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট সংরক্ষিত বনের জমি জবর–দখলের পর সেই বনভূমি প্লট আকারে বিক্রি করে আসছিলেন। অভিযুক্ত ইলিয়াছ সাঈদী কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। এর আগে তিনি ইউনিয়ন যুবদলের অর্থসম্পাদক ছিলেন বলে জানা যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসলাম নগর এলাকার বেশ কয়েকজন ব্যক্তি দৈনিক আজাদীকে বলেন, বিএনপির যুবদল থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে ইলিয়াছ সাঈদী কব্জা করে নেন ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ। এর পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের নলবিলা বনবিটের সংরক্ষিত বনভূমিতে রাজত্ব কায়েম করতে থাকেন তিনি। গত ১০ বছরে ইলিয়াছ সাঈদী সংরক্ষিত বনভূমি জবর–দখলে নিয়ে উঁচু–নিচু, টিলা শ্রেণির পাহাড় সাবাড়ের পর তা বসবাস উপযোগী করে প্লট আকারে বনভূমির দখলও বিক্রি করেছেন মোটা অংকের টাকায়। এরপর অবৈধভাবে সেখানে গড়ে তোলা হয় শত শত বসতি। একইভাবে ইলিয়াছ সাঈদীর সেই সিন্ডিকেট থেকে মোটা অংকের টাকায় দখল কেনার পর সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে ইজিবাইক (টমটম) চার্জিং স্টেশন, মুরগির ফার্মও। এমনকি নিজের অনেক প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলা হয় সেই সংরক্ষিত বনভূমিতে।
সরেজমিন সংরক্ষিত বনের ভেতর স্থাপন করা টমটম চার্জিং স্টেশনে গেলে কথা হয় একাধিক কর্মচারীর সঙ্গে। এ সময় তারা বলেন, ইলিয়াছ সাঈদীর কাছ থেকে জায়গা কেনার পর এখানে স্থাপিত এই চার্জিং স্টেশনের মালিক হচ্ছেন বাদশা মিয়া। তিনি বর্তমানে প্রবাসে থাকলেও তারই স্ত্রী রুনা আক্তার এই চার্জিং স্টেশন পরিচালনা করছেন।
চার্জিং স্টেশন ঘেঁষেই স্থাপন করা হয়েছে বিশালায়তনের মুরগির ফার্ম। এই ফার্মের মালিক হচ্ছেন মুবিনুল ইসলাম। তবে এ নিয়ে তারা গণমাধ্যমে কোন কথা বলতে রাজি হননি।
সরেজমিনে আরও দেখা যায়, ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের নিয়ন্ত্রণাধীন নলবিলা বনবিটের একেবারে কাছের এই সংরক্ষিত বনের ভেতর গগণচুম্বী শতবর্ষী মাদার ট্রিও (গর্জন) দাঁড়িয়ে রয়েছে। এসব অবৈধ বসতি স্থাপনের কারণে সেই মাদার ট্রিও চরম হুমকির মুখে পড়েছে। অনেক স্থানে গোড়ালির ছাল তুলে সেখানে এক ধরনের ওষুধ (তুঁত) ব্যবহার করে মেরে ফেলা হচ্ছে। এতে দিন দিন কমে যাচ্ছে সংরক্ষিত বনের মাদার ট্রি।
সংরক্ষিত বনভূমি দখলের পর তা প্লট আকারে বিক্রি করা নিয়ে মোবাইলে কথা হয় অভিযুক্ত ইলিয়াছ সাঈদী মেম্বারের সঙ্গে। এ সময় তিনি দাবি করেন, সংরক্ষিত বনভূমি জবর–দখল বা প্লট করে বিক্রির সঙ্গে তিনি কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নন। এটি তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মেহরাজ উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, সংরক্ষিত বনের ভেতর যদি কেউ অবৈধ বসতি বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে তা অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে নলবিলা বনবিট কর্মকর্তাকে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নিয়ম রয়েছে জমির মালিকানার কাগজপত্রসহ আবেদনের পর বিদ্যুত সংযোগ পাওয়ার। কিন্তু সংরক্ষিত বনের জমিতে স্থাপিত ইজিবাইক চার্জিং স্টেশন ও মুরগির ফার্ম কীভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ পেল– এমন প্রশ্নে কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চকরিয়া জোনাল কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সাদিকুল ইসলাম বলেন, হয়তো ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে থাকতে পারে। এ নিয়ে বনবিভাগ যদি সহযোগিতা চায় তাহলে সংরক্ষিত বনের ভেতরকার অবৈধ স্থাপনায় দেওয়া বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।