সংবাদপত্রের ওপর কোনো আক্রমণ সরকার সহ্য (টলারেট) করবে না বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত জানাতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব এ কথা বলেন। গত মঙ্গলবার সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদের দেওয়া এক বিবৃতির বিষয়ে ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন। জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আমরা কোনো সংবাদপত্রের ওপর কোনো অ্যাটাক (আক্রমণ) টলারেট (সহ্য) করব না। আপনারা দেখেছেন আমরা আসার পরে কোনো পত্রিকা, কোনো টিভি, কোনো নিউজ ওয়েবসাইট আমরা শাটডাউন (বন্ধ) করিনি। আমাদের তরফ থেকে, আমাদের এজেন্সির তরফ থেকে ফোন করা হয়নি যে আপনি এই নিউজটি নামান বা ওঠান।…গত ১৫ বছরে এটি একটি রীতি ছিল।’ প্রস সচিব আরও বলেন, ‘আমরা যদি মনে করেছি যে আপনি নিউজটি ভুল দিয়েছেন, আমি আপনাকে ভদ্রভাবে জানিয়েছি যে এই নিউজটি ভুল, অনুগ্রহ করে একটু দেখেন, পুনরায় দেখেন নিউজটি।…আমরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ব্যাপারে শতভাগ অঙ্গীকারবদ্ধ।’ খবর বাসসের।
এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি তাঁরা দেখেছেন ও পর্যালোচনা করেছেন। সম্পাদক পরিষদ মনে করছে, একটি গোষ্ঠী সংবাদপত্রে হুমকি দিচ্ছে এবং এই হুমকির ফলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা তারা ব্যক্ত করেছে। সরকার ইতিমধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যেসব সংবাদপত্রে হুমকি দেওয়া হয়েছে তাদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশ থেকে শুরু করে অন্যান্য যেসব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে, তারা সবাই এ বিষয়টি নিয়ে খুব গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।
সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিষয়ে সরকার খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, সরকার মনে করে, গণমাধ্যম এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি স্বাধীনভাবে কাজ করছে। কাজ করার ক্ষেত্রে কেউ যদি কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হন, তাহলে সরকারকে জানালে সরকার সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।
মুজিববর্ষের নামে অপচয় নিয়ে ডকুমেন্টেশন করা হবে : এদিকে শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকীর নামে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার মুজিববর্ষ নামে একটি কর্মসূচি গ্রহণ করে। এ কর্মসূচির নামে রাষ্ট্রের টাকা ব্যাপক অপচয় করা হয়। কোন মন্ত্রণালয় এই কর্মসূচির নামে কত টাকা খরচ করেছে তার একটি ডকুমেন্টেশন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানী ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সস্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
শফিকুল আলম বলেন, আপনারা জানেন মুজিব বর্ষকে ঘিরে কিভাবে একটা একটা উন্মাদনা হয়েছে। মুজিব বর্ষে কি ধরণের কাজ হয়েছে, কত টাকা অপচয় হয়েছে সেটা নিয়ে ডকুমেন্ট করার কথা উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা হয়েছে। মুজিব বর্ষের নামে কোন মন্ত্রণালয় কত টাকা খরচ করেছে তা নিয়ে ডকুমেন্টেশন হবে। মুজিব বর্ষের নামে কোন কোন মন্ত্রণালয় কি কি খাতে কত টাকা অপচয় করেছে তার একটা তালিকা করা হবে। প্রেস সচিব বলেন, আমরা যেখানে ঋণের জন্য আইএমএফ–এর কাছে হাত পাতছি। আইএমএফ–এর কাছে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ চাচ্ছি। সেখানে মুজিব বর্ষের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা নষ্ট করছি– কিছু ম্যুরাল বানিয়ে কিছু স্ট্যাচু বানিয়ে। শুধু মাত্র সরকারি কোষাগার থেকে টাকা গেছে বিষয়টা তা না।
তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও জোর করা হয়েছে, ফলে কেউ মুজিব কর্ণার করেছে কেউ মুজিবের ম্যুরাল বানাতে বাধ্য হয়েছেন। মুজিববাদকে সামনে রেখে টাকা খরচের যে একটা উন্মাদনা ছিল। কত টাকা অপচয় হয়েছে তা জানার জন্য ডকুমেন্টেশন করা হবে। এই সিদ্ধান্ত হয়েছে আজকের উপদেষ্টার পরিষদে।
টাকা অপচয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা একটা পত্রিকায় রিপোর্ট দেখেছি সেটা যাচাই করতে পারিনি। পত্রিকাটি বলছে, শুধু ম্যুরাল বানানোর নামে চার হাজার কোটি টাকা খরচ করে ১০ হাজার মূর্তি বানানো হয়েছে। মুজিববর্ষে যে সব আমলা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কী–না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগে ডকুমেন্টেশন হোক তার পরে দেখা যাবে কি করা যায়। ডকুমেন্টেশনের পরে দেখতে পাবো কি পরিমাণে অপচয় হয়েছে। এসব টাকা কিন্তু করদাতাদের টাকা। এই টাকা কিভাবে ব্যয় হলো অবশ্যই আমরা দেখবো। আপনারা নিশ্চয় দেখেছেন পদ্মাসেতুতে দুটি ম্যুরালের জন্য ১১৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে চিন্তা করা যায়? এসময় প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।