সংঘাত আরও তীব্র, ইরানের কৌশলে নাজেহাল ইসরায়েল

তেল আবিবের মার্কিন দূতাবাস ক্ষতিগ্রস্ত, ইরানে টিভি ভবন ও হাসপাতালে হামলা যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েলকে আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে : ইরান

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ১৭ জুন, ২০২৫ at ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ

ইরানের সাথে ইসরায়েলের সংঘাত শুরু হওয়ার পর চারদিন পার হয়ে গেছে। দুই দেশের মধ্যে আকাশপথে যে হামলা চলছে তা ইতোমধ্যে আরো তীব্র হয়েছে। এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, এ যুদ্ধ কবে থামবে? এ ক্ষেত্রে অনেকেরই মত, সবটাই নির্ভর করছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থানের উপর। ইরান উত্তেজনা নিরসনের বিষয়ে কথা বলতে চায় বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক্ষেত্রে ‘সময় থাকতেই’ ইরান ও ইসরায়েলের আলোচনার টেবিলে বসা উচিৎ বলে মনে করেন তিনি। তেহরানের অভিযোগ, ইসরায়েল বেআইনিভাবে তাদের উপর হামলা চালিয়েছে। তাই আত্মরক্ষার্থে তারাও বাধ্য হয়েছে প্রত্যাঘাত করতে। ইসরায়েল ক্রমাগত হামলা চালিয়ে গেলে নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে তাদেরও জবাব দিতে হবে। ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের পরিধি বাড়াতে চায় না ইরান। তবে কোনো আক্রমণের সমানমাত্রায় পাল্টা জবাব দেবে। গতকাল তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে ফোনালাপে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান এ কথা বলেন।

গতকাল সোমবার ভোরে ইরানের নতুন হামলায় ইসরায়েলে অন্তত পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার থেকে এখনও পর্যন্ত সরকারি হিসাব অনুযায়ী ইসরায়েলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৪। আহত ৫৯২। অপরদিকে ইরানে মারা গেছে ২২৪ জন। আহত ১ হাজার ২৭৭ জন। এদের ৯০ শতাংশই সাধারণ নাগরিক। তেল আবিবে গতকাল ভোরে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে। বাদ যায়নি জেরুসালেমও। রয়টার্স জানিয়েছে, ইরানের হামলায় তেল আবিবে নতুন করে একাধিক বাড়ি ভেঙে পড়েছে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হতে পারে। তেল আবিবে আমেরিকার দূতাবাস থেকে কয়েকশো মিটার দূরে একটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়তে দেখা গিয়েছে। সামান্য ক্ষতি হয়েছে দূতাবাস ভবনটিরও। একই সঙ্গে হাইফা বন্দরের কাছে একটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রে আগুন লেগে গিয়েছিল।

ইরানের রেভলিউশনারি গার্ড (আইআরজি) দাবি করেছে, ইসরায়েলের আকাশ বহুস্তরীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করার নতুন কৌশল বার করে করে ফেলেছে তারা। তাদের নতুন কৌশলে নাজেহাল হয়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাঅস্ত্রগুলি একে অপরকে নিশানা করতে শুরু করেছে। আইআরজিকে উল্লেখ করে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। সোমবার ভোরে তেল আবিব এবং হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরেই ইরানের রেভলিউশনারি গার্ড বলেছে, ‘আমেরিকা তথা পশ্চিমি বিশ্বের সমর্থন এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ওদের কাছে থাকা সত্ত্বেও আমাদের অভিযানে যে কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে, তা লক্ষ্যবস্তুতে সফল ভাবে সর্বাধিক আঘাত হেনেছে।’

ইসরায়েলের আরো একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার কথা বলছে ইরানের সংবাদমাধ্যম। রাষ্ট্রায়ত্ত ‘নুর নিউজ’ বলছে, সোমবার ইরানের তাবরিজ এলাকায় বিমানটি ভূপাতিত করা হয়। এটি ‘এফ৩৫’ মডেলের। সোমবার ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে সেটি ধ্বংস করা হয়।

ইসরায়েল থেকেও পাল্টা হামলা চলছে। ইরানে মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষিত হচ্ছে। রাজধানী তেহরানে রাষ্ট্রীয় টিভি ভবনে লাইভ সমপ্রচার চলার সময় হামলা হয়। ইসরায়েলের হামলার কারণে কিছু সময়ের জন্য সমপ্রচার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ফের সরাসরি সমপ্রচারে ফিরেছে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন। হামলায় কর্মীদের অনেকেই নিহত ও আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কেরমানশাহে একটি হাসপাতালে ইসরায়েল বিমান হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে তেহরান। হামলায় হাসপাতালের ছাদ ধসে পড়ে এবং ভবনের একাধিক অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে অন্তত কয়েকজন রোগী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনাকে সরাসরি আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধ বলে আখ্যায়িত করেছে।

পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যেই ইরান ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে দোষী সাব্যস্ত এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া ব্যক্তির নাম ইসমাইল ফকরি। এ নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইরান ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করার দায়ে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করল।

রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আহ্বান জানিয়েছে ইরান। তেহরান বলছে, দুই দেশের মধ্যে চার দিন ধরে আকাশপথে যে হামলা পাল্টা হামলা চলছে, সেটা বন্ধ করতে চাইলে এটাই ‘একমাত্র পথ’। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এঙ পোস্টে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি সত্যিকারের কূটনীতিটা করতে চান এবং যুদ্ধ বন্ধে আগ্রহী হন, তাহলে পরের পদক্ষেপগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইসরায়েলকে অবশ্যই আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। তারা সামরিক আগ্রাসন পুরোপুরি না থামালে আমাদের জবাবও চলতে থাকবে। ওয়াশিংটন থেকে একটি ফোন কল নেতানিয়াহুকে থামাতে পারে। আর সেটাই কূটনীতিতে ফেরার পথ উন্মুক্ত করতে পারে।’ এর আগে অবশ্য রয়টার্স এক খবরে বলেছিল, যুদ্ধবিরতির আলোচনায় ইরান রাজি নয়। দুই পক্ষের মধ্যস্ততায় সম্পৃক্ত থাকা এক কর্মকর্তার বরাতে বলা হয়, ইসরায়েলি হামলার মধ্যে অস্ত্রবিরতি নিয়ে তেহরান কোনো আলোচনায় ইরান রাজি নয় বলে কাতার ও ওমানকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে।

ইরানের এ ‘আহ্বানের’ আগেই অবশ্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু দাবি করেন, তার দেশ দুটি প্রধান লক্ষ্য অর্জনের ‘পথে রয়েছে’। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী ইরানের রাজধানী তেহরানের আকাশে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি করে তিনি বলেছেন, তার দেশ এখন জয়ের পথে রয়েছে। গতকাল ইসরায়েলের একটি বিমান ঘাঁটি পরিদর্শনে গিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, বিমান বাহিনী তেহরানের আকাশ দখলে নেওয়ায় গোটা অভিযানের ধারাই বদলে গেছে। ইসরায়েল এখন লক্ষ্য পূরণের পথে আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধনির্দোষ হলে মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন কেন