সংকটের সর্বশেষ বাধাও পার

অধিগ্রহণ হচ্ছে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের ১২ শতকেরও বেশি ভূমি ভাঙা হবে হাইওয়ে প্লাজার অর্ধেকও

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে টাইগারপাসের পাহাড় রক্ষার জন্য পরিবর্তিত ডিজাইনে সৃষ্ট সংকটের সর্বশেষ বাধাও পার হলো। এজন্য জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের পশ্চিমাংশের জমি অধিগ্রহণের অনুমোদনও পাওয়া গেছে। গতকালই এ সংক্রান্তে পত্র দিয়ে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের ১২ শতকেরও বেশি ভূমির মূল্যবাবদ প্রায় তিন কোটি টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে। অপরদিকে ডিজাইন পরিবর্তনের ফলে লালখান বাজার মোড়ে সেনাবাহিনীর বেশ কিছু জমিও অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। ভেঙে ফেলা হবে হাইওয়ে প্লাজার অর্ধেকও। সবকিছু মিলে নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে বাস্তবায়ন হওয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে আর কোনও সংকট নেই বলে সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, নগরীর যান চলাচলে গতি আনতে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গার টানেল রোড পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গার টানেল পর্যন্ত বলা হলেও কার্যতঃ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার থেকে মুরাদপুরলালখান বাজার ফ্লাইওভার দিয়ে সরাসরি গাড়ি চলাচল করবে। এতে করে প্রায় ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ধরে শহরের যে কোনো অংশ থেকে মানুষ ২০ থেকে ২৫ মিনিটে বিমানবন্দরসহ সন্নিহিত অঞ্চলে পৌঁছতে পারবে। ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হলেও পরবর্তীতে খরচ বেড়েছে। বর্তমানে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ব্যয় চার হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

শহরের যান চলাচলের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল ডিজাইনে পতেঙ্গা থেকে শুরু হয়ে টাইগারপাস পর্যন্ত এসে পাহাড়ের পাদদেশ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে রাস্তাটি নেয়ার সময় পাহাড় কাটা এবং টাইগারপাসের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা প্রকাশ করে প্রতিবাদ হলে বিষয়টি নিয়ে সরকারি সংস্থাগুলোও পরস্পরের বিরুদ্ধে মতামত দিতে শুরু করে।

এক পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নতুন করে সমীক্ষা পরিচালনা করে। সিডিএ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিএটিএসএমআইএসটি পুরো বিষয়টি নিয়ে নতুন করে সমীক্ষা চালায় এবং ডিজাইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেয়। নতুন সিদ্ধান্তে দেওয়ানহাট থেকে ওয়াসা পর্যন্ত টাইগারপাশের পাহাড়ের কোনো ক্ষতি না করেই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নতুন একটি ডিজাইন তৈরি করা হয়।

নতুন ডিজাইনে বারিক বিল্ডিং থেকে আসা চার লেনের ফ্লাইওভার দেওয়ানহাটে ঢাকাচট্টগ্রাম ট্রাংক রোডে নির্মিত ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে দেওয়ানহাট ওভারব্রিজের পশ্চিম পাশ দিয়ে এসে টাইগারপাস পার হয়ে বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়ের রাস্তার সামনে পৌঁছাবে। চার লেনের এই ফ্লাইওভার পাহাড়ের দিকে না গিয়ে রাস্তার মাঝখানে থাকবে। পিলারও রাস্তার মাঝখানে হবে। সিটি কর্পোরেশনের কার্যালয়ের রাস্তা পর্যন্ত পৌঁছার পর চার লেনের ফ্লাইওভারের দুই লেন ম্যাজিস্ট্রেট কলোনির আগে রাস্তায় নেমে যাবে। এই দুই লেনের জন্যই হাইওয়ে প্লাজার অর্ধেক ভেঙে রাস্তা করা হবে। বাকি দুই লেন রাস্তার মাঝখান দিয়ে গিয়ে ওয়াসা মোড়ে বিদ্যমান আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের সাথে যুক্ত হবে। এতে বিমানবন্দর রোড ধরে আসা গাড়িগুলো সড়কপথে অল্প পথ গিয়ে প্রয়োজনে আবারো ফ্লাইওভারে উঠবে কিংবা নিচ দিয়ে চলে যাবে। এই পয়েন্টে ফ্লাইওভারে ওঠা গাড়িগুলোর জন্য রাস্তা ডেডিকেটেড করে দেওয়া হবে। ফ্লাইওভারের এই দুই লেনের জন্য জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের ১২দশমিক ৬৭ শতক জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এতে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের মূল কাঠামোতে কোনো সমস্যা না হলেও পশ্চিমাংশে খোলা জায়গার বেশির ভাগই ফ্লাইওভারের জন্য ব্যবহৃত হবে। গত বেশ কিছুদিন যাবত মসজিদের এই জায়গাটির হুকুমদখল নিয়ে কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছিল। জায়গাটি অধিগ্রহণ নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাথে কিছুটা বিরোধও তৈরি হয়। অবশেষে নানামুখী চেষ্টায় চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া গেছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের ১২. ৬৭ শতক জায়গার মূল্যবাবদ ২ কোটি ৭৬ লাখ ৯১ হাজার ২২২ টাকা ৫৮ পয়সা জমা দেয়ার জন্য গতকাল সিডিএকে পত্র দিয়েছে। এতে করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরণের একটি সংকটের সুরাহা হলো বলেও সূত্র মন্তব্য করেছে।

অপরদিকে লালখান বাজার মোড়ে পিটস্টপের পাশে সেনাবাহিনীর বেশ কিছু জায়গাও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ব্যবহৃত হবে। এই জায়গা ব্যবহারের জন্য সেনাবাহিনী থেকে ইতোমধ্যে সিডিএকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। হাইওয়ে প্লাজার ঠিক কি পরিমাণ ভাঙা পড়বে এবং ক্ষতিপূরণ কত দিতে হবে তা এখনো চূড়ান্ত হিসাব হয়নি উল্লেখ করে প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, এই মার্কেটের অন্তত অর্ধেক ভাঙা পড়বে। তিনি আরো জানান, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে আর কোথাও কোনো সংকট নেই। ইতোপূর্বে দেখা দেয়া সব সংকটেরই সুরাহা হয়ে গেছে। এখন যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে সিডিএ অগ্রসর হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচাকরির শুরুতে ছিলেন চট্টগ্রামে, রাউজানে আত্মীয়তার সম্পর্ক
পরবর্তী নিবন্ধরোহিঙ্গা যুবকের পাসপোর্টে চট্টগ্রামের ঠিকানা