ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি, স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র চলছেই দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অন্যান্য কারণ ছাড়াও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের ওপর অনেক দেশের কুদৃষ্টি রয়েছে। তিনি বলেন, এই ষড়যন্ত্র দুই ভাগে বিভক্ত। এক হচ্ছে খুনি বা অপরাধী ও যুদ্ধাপরাধী যাদের বিচার নিশ্চিত করা হয়েছে, তারা ষড়যন্ত্র করছে। আরেকটি আন্তর্জাতিক স্তরের। গতকাল শনিবার নিজের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে তার নিজ নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জ–৩ এর নেতাকর্মীদের সঙ্গে নির্বাচন–পরবর্তী শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। দুদিনের সফরে তিনি এখন টুঙ্গিপাড়ায় রয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।
৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার পর নতুন সরকার গঠন করেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী গতকাল টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে নিজ বাসভবনে তাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশনা দেন সরকারপ্রধান।
বিকালে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় শেখ হাসিনা দেশি–বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশে বসে অন্য কোনো দেশে সন্ত্রাসী হামলা চালাতে তিনি কাউকে অনুমতি দেবেন না এবং মেনে নেবেন না বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, আমরা স্বাধীন এবং সার্বভৌম দেশ। আমরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করব, আমরা আকারে ছোট হতে পারি, কিন্তু আমাদের বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে, তারাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি। দ্রুত মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মন্ত্রিসভা গঠনে বিলম্বের যৌক্তিকতা কী? আমরা সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করি না, আমরা জানতাম নির্বাচন করব, আমরা নির্বাচনে জিতলে বা নির্বাচনে হেরে গেলে আমরা কী করব, আমরা কেন সময় নেব, কেন সময় নষ্ট করব।
দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রতিটি দিন যথাযথভাবে ব্যবহারের কথা তুলে ধরেন তিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখতে সকল প্রকার ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করতে সবার কাছে দোয়া কামনা করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা নতুন মেয়াদে তার সরকারের মূল কাজ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের প্রধান কাজ হলো চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা, দাম নিয়ন্ত্রণ করা এবং জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর কারণ ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ইয়েমেনে হুতিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের হামলার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে আরেকটি আঘাত আসতে পারে। বাজারে খাদ্যদ্রব্যের কোনো ঘাটতি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলে বড় ধরনের কোনো সমস্যা দেখি না। তবে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ এবং রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী মানুষ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, মনে হচ্ছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল জনগণের ভোগান্তি বাড়াতে ইচ্ছাকৃতভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করে। এর জন্য আমাদের যথাযথভাবে তদারকি বাড়াতে হবে। তাকে ও আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আসতে না দেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, কিন্তু দেশের মানুষ নির্বাচনের মাধ্যমে তার উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না–এটাই স্বাভাবিক এবং সে কারণেই বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল।
বিএনপির অগ্নিসংযোগের কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ট্রেনে আগুন দেওয়ার মতো এই জঘন্য ঘটনা ঘটিয়ে নিরীহ মানুষের মৃত্যু ঘটায়। আগামী দিনে নতুন সরকারকে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে চলতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।