শ্রীলঙ্কার সাথে বাংলাদেশের তুলনা অযৌক্তিক ও অনভিপ্রেত

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী | শনিবার , ২৮ মে, ২০২২ at ৭:৫৫ পূর্বাহ্ণ

সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার বন্ধুপ্রতিম দেশ শ্রীলঙ্কার কঠিন অর্থনৈতিক বিপর্যয় বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যম-সামাজিক যোগাযোগ ও অন্যান্য সূত্রে অধিকমাত্রায় উপস্থাপিত হচ্ছে। প্রাসঙ্গিকতায় উল্লেখ্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের সচেতন সকল মহল সম্যক অবহিত হয়েছেন; করোনা অতিমারিতে পর্যুদস্ত পর্যটন শিল্প ও সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত কার্যকরণে শ্রীলঙ্কা দীর্ঘ ৭০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কটে নিপতিত হয়েছে। অর্থনৈতিক দুরাবস্থার প্রভাবে কয়েক মাস ধরে তীব্র খাদ্য-জ্বালানি ও ওষুধের সমস্যায় ভুগছে দেশটি। ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে মূল্যস্ফিতি। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎবিহীন-লোডশেডিং এর কারণে প্রায় সোয়া দুই কোটি নাগরিকের জীবন দুর্বিষহ রূপ পরিগ্রহ করেছে। সঙ্কট মোকাবেলায় সরকারের ভূমিকার প্রতিবাদে এক মাসের বেশি সময় চলা বিক্ষোভ দুঃসহ সংঘাত-সহিংসতার নির্দয় দৃশ্যপট তৈরি করে। এতে কমপক্ষে ৯ জন নিহত ও আহত হয় ৩০০ জন। প্রায় তিন দশক চলমান গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার অন্যতম নায়ক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে গণশত্রুতে পরিণত হয়ে জনরোষের মুখে গত ৯ মে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। মন্ত্রী-এমপিদের পদত্যাগ এবং নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণের পরও প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবীতে দেশটির পরিস্থিতি এখনও স্থিতিশীল নয়। মূলত ২০১৯ সালে মাহিন্দার ছোটভাই গোটাবায়্যা রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর শুরু হওয়া পারিবারিক অন্তর্দ্বন্দ্বে শ্রীলঙ্কায় ব্যাপক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়ে দেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে পৌঁছে। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক অচলাবস্থার জন্য প্রধানত রাজাপাকসে পরিবারকেই দায়ী করছেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায় ২০১৯ সালের শেষার্ধে গোটাবায়্যা রাজাপাকসে কর্তৃক মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ ধার্য করার পাশাপাশি ২ শতাংশ হারের নেশন উন্নয়ন কর ও যত আয় তত কর ব্যবস্থার বিলুপ্তকরণের মতো জনতুষ্টিমূলক কর কর্তনের পদক্ষেপ নেওয়ায় অর্থনীতিতে করোনার অভিঘাত শুরুর প্রারম্ভেই সরকারের রাজস্ব আয় বিপুলহারে কমতে থাকে। এক বছরেই দেশটির ভ্যাট আদায় কমে ৫০ শতাংশ। করোনা মহামারিতে প্রবাসীদের চাকরি হারানোর ফলে প্রবাসী শ্রীলঙ্কানদের রেমিট্যান্স আয়ও হ্রাস পায়। বৈদেশিক মুদ্রার আয় কমার সাথে সাথে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ এবং জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির নিয়মিত অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হয় শ্রীলঙ্কা সরকার। পরিশেষে গত ১৮ মে ২০২২ ঋণের ৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার সুদ প্রদানের ৩০ দিনের বর্ধিত সময়সীমা শেষ হলে শ্রীলঙ্কাকে ঋণখেলাপি ঘোষণা করা হয়। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর সবচেয়ে মারাত্মক আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হয়ে ঋণ পরিশোধের ব্যর্থতায় দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঋণখেলাপি হলো শ্রীলঙ্কা।
দেশটির বিশ্লেষকদের মতে, শ্রীলঙ্কার জন্য ‘শ্বেতহস্তীতে’ রূপান্তরিত হওয়া বেশ কিছু বড় বড় উচ্চাভিলাষী-অপ্রয়োজনীয় বিশেষ করে হাম্বানটোটায় গভীর সমুদ্র বন্দর, মহাসড়ক, বিলিয়ন ডলারের বিমান-সমুদ্রবন্দর বা কলম্বো পোর্ট সিটির মতো অবকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলোতে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করা হলেও অনেক প্রকল্প অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হয়নি বিধায় শ্রীলঙ্কা ঋণভারে জর্জরিত। এছাড়াও ২০১৯ সালে অর্গানিক কৃষি চালুর অংশ হিসেবে কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার-আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়। কৃষিতে এর নেতিবাচক ফলস্বরূপ ২০ শতাংশ পর্যন্ত চালসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্যের উৎপাদন হ্রাস পায়। ফলে দেশে চরম খাদ্য ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ শ্রীলঙ্কা ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের চাল আমদানি সত্ত্বেও চালের দাম বাড়তে থাকে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী চা শিল্পেও লাগে বড় ধাক্কা। ক্ষতি পুষিয়ে আনতে কৃষদের জন্য সরকার ২০০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়েও দেশজুড়ে খাদ্যঘাটতির প্রকটতা রোধ করা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আঁচ লেগে দেশটির প্রবৃদ্ধি চরম স্থবির হয়ে পড়ে।
শ্রীলঙ্কার এই পরিস্থিতির ভিত্তিতে উদ্দেশ্য প্রণোদিত পন্থায় দেশের সামাজিক যোগাযোগ-গণমাধ্যম-টেলিভিশন টকশোতে বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার চেয়েও ভয়াবহ হওয়াসহ বিভিন্ন কুৎসা রটনা-অপপ্রচার প্রতিনিয়ত প্রকাশ পাচ্ছে। দেশে বিরাজিত ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণের ঊর্ধ্বগতি, শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং সম্প্রতি সরকারি কর্মকর্তা ও মন্ত্রীদের বিদেশযাত্রা সংক্রান্ত বাংলাদেশ সরকারের পরিপত্র জারিকে কেন্দ্র করে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অন্ধকার-অশুভ শক্তি গভীর-কদর্য চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সরকার-দেশকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করতে সক্রিয় রয়েছে বলে প্রবল জনশ্রুতি রয়েছে। ১১ এপ্রিল ২০২২ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিদেশি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হওয়ার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘শুধু ঋণ নয়, বিনিয়োগও খুব হিসেব করে নেয় বাংলাদেশ। আমাদের বিরুদ্ধে নানা রকম কথা যারা লিখছে আমি আবারও বলছি- ওই পত্রিকার লেখা পড়ে আমি রাষ্ট্র চালাই না। এখন তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাচ্ছে- এরকম একটা কথা রটাচ্ছে।’ দেশের উন্নয়নের জন্য বিদেশি ঋণ-বিনিয়োগ উদ্যোগ ও ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সরকারের সর্বদা সতর্ক-সজাগ থাকার বিষয়ে অবহিতকরণে তিনি বলেন, ‘আমরা যেখান থেকে যত ঋণ নিয়েছি, প্রত্যেকটা ঋণ আমরা কিন্তু সময়মতো পরিশোধ করেছি। এমনকি করোনার মাঝেও আমরা ঋণ খেলাপি হইনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেকটা পরিকল্পনা নেওয়ার সময় এটাই হিসাব করি, এই কাজটা করলে পরে কতটুকু আমার দেশের মানুষ পাবে, কতটুকু আমার অর্থনীতিতে যোগ হবে, অর্থনীতি কতটা শক্তিশালী হবে। মানুষের কল্যাণে কতটুকু দিতে পারব, করতে পারব। আমরা সেই চিন্তাটাই করি।”
দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ-বিজ্ঞ গবেষক বাংলাদেশকে নিয়ে করা আশঙ্কাকে গুজব বলে অখ্যায়িত করেছেন। তাদের মতে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির গতি ভিন্ন। বাংলাদেশে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) বাড়ছে, রয়েছে রেকর্ড পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে রপ্তানি আয়ও। করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মোদ্দাকথা যেহেতু অর্থনীতির সবগুলো সূচক ইতিবাচক ধারায় রয়েছে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়ার কোন সুযোগ নেই। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা গণমাধ্যমে বলেন, ‘এ ধরনের আশঙ্কার কোনো ভিত্তি নেই। বাংলাদেশ সঠিক পথেই আছে। শ্রীলঙ্কার মতো হওয়ার কোনো কারণ নেই। এসব খামোখা অমূলক কথাবার্তা। যা বাস্তবসম্মত নয়। জুনেই পদ্মা সেতু চালু হবে। মেট্টোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেলসহ আরও কয়েকটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলও চালু হবে এ বছরেই। এসব প্রকল্প চালু হলে বাংলাদেশের উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ হবে। আমার মনে হয় আর পিছনে তাকাতে হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিবেচনায় বাংলাদেশ যেসব বড় বা মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, তার একটাও অপ্রয়োজনীয় নয়; বরং সবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সঙ্গে সঙ্গে রিটার্ন আসবে। দেশে বিনিয়োগ-কর্মসংস্থান-জিডিপি প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে।’
বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকের তুলনামূলক বিশ্লেষণ-পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শ্রীলঙ্কার রেমিট্যান্স আয় হয়েছে মাত্র ২৭ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার এবং ২০২১ সালে ক্যালেন্ডার বছরে আয় হয় ৮ বিলিয়ন ডলারের মতো। বিপরীতে বাংলাদেশে জানুয়ারি ও মার্চ মাসে রেমিট্যান্স আসে যথাক্রমে ১৭০ কোটি ৪৪ লাখ ও ১৮৬ কোটি মার্কিন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনা মহামারির মধ্যেও আসে রেকর্ড ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। বিগত মার্চ মাসে পণ্য রপ্তানি আয় থেকে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন এবং জানুয়ারি মাসে শ্রীলঙ্কার হয়েছে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের বিদ্যমান রিজার্ভ ৪৪ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার (৪ এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত)। পক্ষান্তরে গত জানুয়ারি শেষে শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ ছিল মাত্র ২ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে এপ্রিল মাসে শ্রীলঙ্কার ৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন রিজার্ভের স্থলে বাংলাদেশের ছিল ৪৬ বিলিয়ন ডলারের উপরে। গত ১৫ বছরে শ্রীলঙ্কা একরত্তি পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণে সক্ষম হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, ২০০৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে মোট ২ হাজার ৫৫০ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে এসেছে ৩৫০ কোটি ১০ লাখ (৩.৫০ বিলিয়ন) এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসেছিল ৩২৩ কোটি ৩০ লাখ (৩.২৩ বিলিয়ন) ডলার।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে শ্রীলঙ্কার খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ-গবেষক-বিশ্লেষক-বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ যেখানে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি এবং শক্তিশালী অর্থনীতির প্রশংসায় পঞ্চমুখ; অন্যদিকে বাংলাদেশের কথিত কতিপয় অতি ডান-বাম বুদ্ধিজীবী-সুশীল নামধারী জ্ঞানপাপীরা দেশকে বিশ্বপরিমন্ডলে হেয় প্রতিপন্ন ও আভ্যন্তরীণ আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিতে কূটকৌশল অবলম্বনের অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ১১ মে ২০২২ গণমাধ্যমে প্রকাশিত শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট সচিবালয়ের গবেষণা ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিষয়ক পরিচালক সাগিশ্বরা সেনাধিরা তাঁর নিবন্ধে লিখেছেন, ‘শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের সাফল্যগাথা থেকে শিক্ষা নিতে পারে। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ব্যাপারে বাংলাদেশ একটা দারুণ নজির তৈরি করেছে। গত ১০ বছর (২০১০-২০২০) দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে গতিশীল অর্থনীতিগুলোর একটি বলে পরিচিতি পেয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে দেশটির জনসংখ্যার বোনাস কাল (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড), তেজি তৈরি পোশাক খাতনির্ভর রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স ও স্থিতিশীল সামষ্টিক আর্থনীতির কারণে। শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও করোনাকালে নিম্নমুখী প্রবণতার শিকার হয়েছিল কিন্তু উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার কারণে দ্রুতই তা ঘুরে দাঁড়ায়।’
শ্রীলঙ্কান আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও গবেষক জন রোজারিও’র মতে, ‘বাংলাদেশ সরকার দেশটির অগ্রগতি সাধনে দারুণ প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টির পরিচয় দিয়েছে। এ কারণেই দেশটি একেবারে নিঃশঙ্ক চিত্তে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প নিতে পারছে। বর্তমানে সেখানে দেশব্যাপী একশ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। ট্র্যাক রেকর্ড ভালো হওয়ায় দেশটি বেশ ভালো পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগও পাচ্ছে। এটি এখন বলাই যায়, দেশটির অর্থনীতি বেশ মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে।’ স্বল্পপরিসরে তুলনামূলক উন্নয়ন-অগ্রগতির আখ্যান যথার্থ অর্থে নিবন্ধে পরিপূর্ণ পরিবেশন অনেকটা দুরূহ বটে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণের অবিচল আস্থার প্রমুদিত সরকার রূপকল্প ২০৪১ এবং ডেল্টা প্লান ২১০০ বাস্তবায়নে প্রায়োগিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও পদক্ষেপ গ্রহণের রোডম্যাপ ইতিমধ্যে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে। আগামী ২৫ জুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাঙ্গলিক পদ্মা সেতু উদ্বোধন ও উন্নয়নের নবদিগন্তের প্রবল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে যাচ্ছেন। প্রতিটি উন্নয়ন কর্মের পিছনে তাঁর মেধা-প্রজ্ঞা-সৃজনশীল-দূরদর্শিতা-দৃঢ়চেতা দৃষ্টিভঙ্গি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা নির্মাণের পবিত্র অঙ্গীকারে ঋদ্ধ। নিঃসঙ্কোচে বলা যায় অদম্য অগ্রগতির বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কা বা অন্য কোন সঙ্কটপূর্ণ দেশের সাথে তুলনা কোনভাবেই কাঙ্ক্ষিত-যৌক্তিক হতে পারেনা। শুধুমাত্র অনভিজ্ঞ-অর্বাচীন-পরশ্রীকাতর-দেশবিরোধী-সুবিধাভোগী বিদেশী অনুচরের অন্ধ চোখ-হৃদয়ে বাংলাদেশকে ধারণ-আবিষ্কার করার ব্যর্থতার মধ্যেই তাদের কুৎসিত চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন ঘটছে। এতে দেশ ও আপামর জনসাধারণকে ন্যূনতম বিভ্রান্ত করার কোন অপচেষ্টা কখনো সার্থক হবে না- দৃঢ়চিত্তে তা দাবি করা অত্যন্ত সমীচীন।

লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধহল্যান্ড থেকে
পরবর্তী নিবন্ধতৃণমূল পর্যায়ে অনূর্ধ্ব-১৬ জুডো প্রশিক্ষণ সমাপ্ত