শোকজের নামে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার’ এর শিকার এসএম মামুন মিয়া, তৃণমূলে নানা প্রশ্ন-ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার , ১২ অক্টোবর, ২০২৪ at ৬:০৮ অপরাহ্ণ

এস আলম গ্রুপের পরিবারের ব্যবহৃত ১৪টি বিলাসবহুল গাড়ি সরিয়ে নিতে সহায়তার অভিযোগে কর্ণফুলী থানা বিএনপির আহ্বায়ক এসএম মামুন মিয়াকে শোকজ করা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূল বিএনপিতে।

কেননা, ঘটনাস্থল থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে থেকেও তিনি শোকজের নামে ‘রাজনৈতিক ক্রসফায়ার’ এর শিকার বলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কর্ণফুলীর হাজার হাজার নেতাকর্মী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

যদিও অভিযোগ উঠেছে, দলীয় কোন্দল আর কিছু প্রভাবশালী নেতাদের রোষানলে পড়ে দলের অনেকেই পদ-পদবি হারাচ্ছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দীর্ঘ ১৬ বছর রাজপথের আন্দোলন, মামলা-হামলার পর ‘সুদিনেও ভাগ্য বিড়ম্বনায়’ পড়ছেন অনেক নেতাকর্মীরা। এতে একদিকে তাঁরা রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে ক্ষতির মুখে পড়ছেন, অন্যদিকে সামাজিকভাবেও হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন।

দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, এস এম মামুন মিয়া দলের আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামে তথা কর্ণফুলীতে আন্দোলন-সংগ্রামে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করেছেন। আর ৫ আগস্ট বিগত সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে যখন মনে করেছিলেন তাঁদের ‘সুদিন’ ফিরে এসেছে, একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ হয়েছে, তখনই শুরু হয়েছে নানা অজুহাত, বানোয়াট গল্প আর মিথ্যা অভিযোগে দলীয় শোকজের খড়গ।

অনেকের বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ সঠিক থাকলেও, অনেকের ন্যূনতম কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও নানা অপকর্মের তকমা লাগিয়ে শোকজ/বহিস্কার দলে বিরুপ প্রভাব পড়ছে বলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি।

নেতাকর্মীদের অভিযোগ, প্রভাবশালী নেতাদের অনুগত না হলে, ভিন্ন গ্রুপের প্রতি সমর্থন থাকলে বেছে বেছে তাঁদের শাস্তি বা শোকজের আওতায় আনা হচ্ছে। ওই সব নেতাকর্মীকে বেকায়দায় ফেলতে ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করছেন বিশেষ সিন্ডিকেটের নেতারা। এতে দলটির ইমেজ ভিন্নভাবে চিত্রায়িত করার যে ‘গোপন এজেন্ডা’ চলছে, তাতেই তাঁরা পা দিচ্ছেন। এ বিষয়ে দলের আরও যাচাই-বাছাই বিশ্লেষণ করে সতর্কতা দরকার বলে তৃণমূল মনে করেন।

অথচ দলের নির্দেশমতে ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর কারণ দর্শানো শোকেজ এর সন্তোষজনক জবাবও দিয়েছেন কর্ণফুলী থানা বিএনপির আহ্বায়ক এসএম মামুন মিয়া।

নোটিশের জবাবে স্পষ্ট করে তিনি বলেন, ‘এস আলম গ্রুপের বিলাসবহুল গাড়ি সরিয়ে নিতে সহায়তার যে অভিযোগের বিষয়টাতে আমাকে জড়িয়ে অবতারণা করা হচ্ছে তা সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা, ঘটনাস্থল থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ছিলাম আমি। তবুও কেন আমাকে জড়ালেন তা বোধগম্য নয়।’

লিখিত জবাবে এস.এম মামুন মিয়া আরও বলেন, ‘ঘটনাটি একেবারেই আকস্মিক। যা আমাকে রীতিমত বিব্রত করেছে। আমি দৃঢ়ভাবে জানাতে চাই, আমার ছাত্র জীবনের রাজনীতি-লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস এবং দলীয় রাজনীতিতে ত্যাগ, অবিচলতা, আনুগত্য, শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা ও নৈতিকতার প্রশ্নে আপোষহীন অবস্থানের কথা আমাদের দলের সিনিয়র প্রতিটি নেতাকর্মী অবগত। আমি বিশ্বাস করি দ্রুত আমাকে এ অপবাদ থেকে মুক্ত করা হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও ফোন রিসিভ হয়নি।

তবে এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনুর রশীদ বলেন, ‘কর্ণফুলীর এস এম মামুন মিয়াকে আমরা শোকজ করিনি। এমনকি আমাদের সাংগঠনিক মতামতের ভিত্তিতেও করা হয়নি। এটি হচ্ছে উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রের হাইকমান্ডের দৃষ্টিগোচর হলে তাঁর বিরুদ্ধে শোকজ এর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এখন ব্যাপার হচ্ছে, এটা নিয়ে যদি আমরা দলের চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলতে পারি। তাহলে একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারলে আপনাদের আপডেট জানাতে পারব।’

ঘটনাস্থলে না থেকেও নিরাপরাধ কেউ শাস্তি পাচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় কমিটির এই সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আরও বলেন, ‘যেহেতু শোকজের সিদ্ধান্তটি আমাদের সাংগঠনিক সম্পাদকদের ব্যতিরেকে কেন্দ্র উপনীত হয়েছে। এখন ঘটনা হচ্ছে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে গেলে আমাদের প্রবলেম আছে কিনা, এসএম মামুন মিয়াকে আমাদের দরকার কিনা অথবা নিরাপরাধ কেউ জড়িত না থেকেও শাস্তি পাক সেটা তো আমাদের কাম্য নয়। আমাদের চেষ্টা থাকবে, ঘটনায় যে জড়িত সেই সাংগঠনিক শাস্তির আওতাভুক্ত হবেন। এ বিষয়ে আমরা শিগগিরই কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি এখন কোন মন্তব্য করতে পারব না। তবে কেন্দ্রীয় ভাবে এ ঘটনার পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবে হয়তো।’

বিএনপি মহানগরের একাধিক সুত্র জানায়, এ বিষয়ে চট্টগ্রামের বিভাগে থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা কেন্দ্রে কথা বলতেছেন শিগগিরই একটি সিদ্ধান্ত আসবে।

প্রসঙ্গত, গত ৩১ আগস্ট দুপুরে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে এস আলম গ্রুপের গাড়ি বের করে নিরাপদে পৌঁছে দেওয়ার সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করেন তিনি।

সর্বশেষ গত ১১ অক্টোবর বিকেলে কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ও চরলক্ষ্যা ইউনিয়নে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখা নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপি নেতা এস এম মামুন মিয়ার বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ জানান হাজার হাজার নেতাকর্মী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাউজানে মুরগির খামারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে যুবকের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধডা: শাহাদাতের সাথে পাথরঘাটা ওয়ার্ড বিএনপির সৌজন্য সাক্ষাত