শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে মাত্র ১ রানে রাজশাহীর বিপক্ষে জয়লাভ করেছে চট্টগ্রাম। ফলে চার ম্যাচের চারটিতেই জিতে চট্টগ্রাম অপরাজিত থেকে টেবিলের শীর্ষে অবস্থান করছে। গতকাল বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে আগে ব্যাট করে আসরের সর্বোচ্চ ১৭৬ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় চট্টগ্রাম। জবাবে রাজশাহীর ইনিংস থামে ৭ উইকেটে ১৭৫ রানে। ১৭৭ রান তাড়া করতে নেমে রাজশাহীকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার আনিসুল ইসলাম ইমন ও নাজমুল হোসেন শান্ত। ইনিংসের প্রথম বলেই ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে শুরু করেন ইমন। তাদের মাধ্যমে ৩ ওভারে দলীয় সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩০ রান। শরীফুলের করা প্রথম ওভারে ঠিক ব্যাটে-বলে করতে পারেননি ইমন। সেই শোধটা পরের ওভারেই নিয়ে নেন ২৩ বছর বয়সী এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান। প্রথম বলে শান্তর কাছ থেকে সিঙ্গেল পাওয়ার পর শেষ পাঁচ বলে হাঁকান তিন বাউন্ডারি। শেষ বলে দৃষ্টিনন্দন চারের মারে ওভারটি শেষ করেন ইমন। দুই ওপেনারের সাবলীল ব্যাটিংয়ে পঞ্চম ওভারে দলীয় ফিফটি পূরণ হয় রাজশাহীর। তবে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আক্রমণে এসেই জুটি ভাঙেন মোস্তাফিজ। ষষ্ঠ ওভারের চতুর্থ বলটি লেগ স্ট্যাম্প দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। দূর থেকে খেলার চেষ্টা করেন শান্ত, ব্যাটে আলতো ছুঁয়ে চলে যায় উইকেরক্ষক লিটন দাসের গ্লাভসে, ভেঙে যায় ৩৪ বলে ৫৬ রানের জুটি। আউট হওয়ার আগে ২টি করে চার ও ছয়ের মারে ১৪ বলে ২৫ রান করেন শান্ত। অধিনায়ক ফিরে গেলে মোহাম্মদ আশরাফুলের সঙ্গে জুটি গড়েন ইমন। দুজনের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১২ ওভারে পূরণ হয় দলীয় শতক। নবম ওভারে তাইজুলের ওভারে ছক্কা হাঁকানোর পর বাউন্ডারি মারেন ইমন, তুলে নেন নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি তুলে নেন ইমন। দলের আশা বাঁচিয়ে রেখে ৩৫ বলে ৬ চার ও ১ ছয়ের মারে ফিফটি পূরণ করেন তিনি। তবে এরপর বেশিদূর যেতে পারেননি। জিয়াউর রহমানের নিচু হয়ে আসা ডেলিভারিতে সোজা বোল্ড হয়ে ফেরেন সাজঘরে, খেলেন ৪৪ বলে ৫৮ রানের ইনিংস। ইমনের আগেই অবশ্য সাজঘরে ফিরে যান আশরাফুল। মোসাদ্দেক সৈকতের ওভারে বড় শট খেলতে গিয়ে ধরা পড়েন মোস্তাফিজের হাতে। আশরাফুলের ব্যাট থেকে আসে ১৯ বলে ২০ রান। এরপর দায়িত্ব পড়ে শেখ মেহেদি হাসান, ফজলে রাব্বি, নুরুল হাসান সোহানদের কাঁধে। শুরু থেকেই চালিয়ে খেলে মেহেদি আউট হন ১৭ বলে ২৫ রান করে। ফজলে রাব্বির ব্যাট থেকে আসে ৯ বলে ১১ রান। ফলে শেষ ১৭ বলে জয়ের জন্য বাকি থাকে ৩৫ রান। তখন উইকেটে ছিলেন সোহান ও ফরহাদ রেজা। মোস্তাফিজের করা ১৮তম ওভারে একটি ছক্কা হাঁকালেও আসে মাত্র ৮ রান। শরীফুলের করা ১৯তম ওভারের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে পরপর চার ও ছয় মেরে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন ফরহাদ রেজা। কিন্তু পঞ্চম বলে সাজঘরে ফিরে যান ৫ বলে ১২ রান করা ফরহাদ। শেষ ওভারে রাজশাহীর লক্ষ্য দাঁড়ায় ৬ বলে ১৪ রান। শেষ ওভারে বল হাতে আসেন মোস্তাফিজ, প্রথম বলেই সাজঘরের পথ দেখান ১ ছয়ের মারে ৮ রান করা নুরুল সোহানকে। পরের দুই বল ডট খেলেন রনি তালুকদার। তবে চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ফের জমান ম্যাচ, পঞ্চম বলে ব্যাটের কানায় লেগে কিপারের পাশ দিয়ে হয় ৪। শেষ বলে যখন জয়ের জন্য দরকার ৪ রান, তখন লংঅনে মেরে ২ রানই নিতে সক্ষম হন রনি। ফলে ১ রানের রোমাঞ্চকর জয় পায় টেবিল শীর্ষে থাকা চট্টগ্রাম।
এর আগে মিরপুরে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে চট্টগ্রামকে ভালো সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। উদ্বোধনী জুটিতে ৬২ রান আসে তাদের ব্যাট থেকে। সৌম্য ২৫ বলে ৩৪ রান করে আউট হন। দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক মিঠুনকে সঙ্গে নিয়ে আরও ৩১ রান যোগ করেন লিটন। মিঠুন ১১ ও শামসুর রহমান ১ রান করে দ্রুত বিদায় নেন। তবে এক প্রান্ত আগলে রেখে ৩৫ বলে অর্ধশতক তুলে নেন লিটন। মোসাদ্দেক হোসেনের সঙ্গে তার চতুর্থ উইকেট জুটিতে আসে ৭২ রান। মোসাদ্দেক ২৮ বলে ৪২ রান করে আউট হন। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৭৬ রান করে চট্টগ্রাম। লিটন ৫৩ বলে ৭৮ রানে অপরাজিত থাকেন। রাজশাহীর মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ ৩টি এবং ফরহাদ রেজা ও আনিসুল ইসলাম ইমন ১টি করে উইকেট নেন।