শেষ পর্যন্ত ধসেই পড়ল সীমানা দেয়াল

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক

চকরিয়া প্রতিনিধি | শনিবার , ৩ জুলাই, ২০২১ at ৬:৪১ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারায় এক্সেভেটর দিয়ে টিলা শ্রেণীর পাহাড় ও সমতল ভূমির মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার পর শক্তিশালী শ্যালো মেশিন বসিয়ে ভূ-গর্ভস্থ বালু উত্তোলনের কারণে ভয়াবহ ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সীমানা দেওয়ালের বিশাল অংশও ধসে পড়েছে। ফলে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে বন্যপ্রাণী থেকে শুরু করে পার্কের নিরাপত্তাও। এ বিষয়ে চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদীতে ‘মুছে যাচ্ছে রংমহলের রং’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছিল।সংশ্লিষ্টরা জানান, টানা দুইদিনের ভারী বর্ষণের সাথে উঁচু এলাকা থেকে ধেয়ে আসা পানিতে গোঁড়ার মাটি নরম হয়ে গেলে ভূমিধসের সাথে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের দক্ষিণ-পূর্বাংশের সীমানা দেওয়াল ধসে পড়ে গত বৃহস্পতিবার। এদিকে পার্কের সীমানা দেওয়াল ধসে পড়ার খবর পেয়ে গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পার্কের পরিচালক এবং চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাছের মো. ইয়াছিন নেওয়াজ।
সরজমিন দেখা গেছে, পার্কের দক্ষিণ-পূর্বাংশের রংমহল গ্রামের ওপর দিয়ে বহমান একটি বগাইছড়ি ছড়াখাল। এই খালের উত্তরাংশে রয়েছে টিলা ও সমতল শ্রেণীর প্রায় ৫০০ একরের ‘দাঙ্গার বিল’। টিলা ও সমতল ভূমির মাটি এক্সেভেটর দিয়ে অপসারণের পর ওই বিলের অসংখ্য স্থানে শক্তিশালী শ্যালো মেশিন বসিয়ে ভূ-গর্ভস্থ বালু উত্তোলন করে আসছিল স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট।
স্থানীয়রা জানান, গত বছরের শেষদিকে এই ধ্বংসযজ্ঞের শুরু করা হয়েছিল। এর পর থেকে অন্তত ছয়মাস পর্যন্ত পরিবেশের বারোটা বাজিয়ে এই কর্মকাণ্ড চালানো হয়। মাঝেমধ্যে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালালেও বারবার পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড চালায় প্রভাবশালী সিন্ডিকেটটি। তখন স্থানীয় পরিবেশ সচেতন লোকজন বর্ষা শুরু হলে দাঙ্গার বিলের আশপাশে ভয়াবহ ভূমিধস হওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন। অবশেষে তাদের সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে গত দুইদিনের প্রবল বর্ষণে। দাঙ্গার বিল লাগোয়া ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সীমানা দেওয়ালের একশ ফুটের বেশি অংশ মুহূর্তের মধ্যেই ধসে পড়েছে।
পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী অভিযোগ করেন, পার্কের সীমানা দেওয়ালের অদূরে দাঙ্গার বিলে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের সময় উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। এ সময় আশঙ্কা করা হয়েছিল, বর্ষাকালে ভূমিধসসহ পার্কের সীমানা দেওয়াল ক্ষতি হবে এমন বিষয়টি। কিন্তু প্রভাবশালীরা গায়ের জোরে তাদের অপকর্ম করেছে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে।
পার্ক কর্মকর্তা মাজহার আরো বলেন, পার্কের সীমানা দেওয়ালের পাশ থেকে যারা মাটি কেটে ও বালু উত্তোলন করে পার্কের ক্ষতি করেছেন তাদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা রুজু করা হবে।
এ ব্যাপারে পার্কের প্রকল্প পরিচালক এবং চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাছের মো. ইয়াছিন নেওয়াজ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমি সরজমিন সাফারি পার্কসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং পার্কের সীমানা দেওয়াল ধসে পড়ার ক্ষেত্রে যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা রুজু করতে।’
তিনি আরো বলেন, পার্কের সীমানা দেওয়াল ধসে পড়লেও পার্কের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে না। এমনকি পার্কের কোনো বন্যপ্রাণীও হুমকির মুখে নেই। এই বিষয়ে আমরা সজাগ রয়েছি।
স্থানীয়রা বলছেন, চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদীতে ‘মুছে যাচ্ছে রংমহলের রং’ শিরোনামে ভূমিধসের সাথে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সীমানা দেওয়াল ধসে পড়া নিয়ে আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে সচিত্র যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল অবশেষে সেই আশঙ্কা-ই যেন সত্য হল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমেরামতকালে সিএনজি টেক্সির সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, আহত ৮
পরবর্তী নিবন্ধএশিয়ার দখল নিচ্ছে ডেল্টা