শেষ ওভারে নাটকীয়তা হলেও চমৎকার জয় বাংলাদেশের

সুপার ফোরে ৪ উইকেটে হারল শ্রীলঙ্কা

ক্রীড়া প্রতিবেদক | রবিবার , ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তায় রুদ্ধশ্বাস এক জয় নিয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোর পর্ব শুরু করেছে বাংলাদেশ। গতকাল শনিবার দুবাইতে অনুষ্ঠিত এ পর্বের প্রথম খেলায় ১ বল বাকি থাকতে বাংলাদেশ ৪ উইকেটে শ্রীলঙ্কাকে পরাজিত করে। গ্রুপ পর্বে এই শ্রীলঙ্কার কাছেই বাংলাদেশ ৬ উইকেটে হেরেছিল। গতকাল তাওহিদ হৃদয় যখন আউট হন তখন বাংলাদেশের স্কোর ৪ উইকেটে ১৫৯ রান। ক্রিজে থাকা শামীম হোসেনের সাথে যোগ দেন জাকের আলী। জয়ের রাস্তা মোটামুটি পরিষ্কার। কিন্তু শেষ ওভারে তৈরি হলো দারুণ এক নাটকীয়তা। জয়ের জন্য রান প্রয়োজন ৫টি। প্রথম বলেই বাউন্ডারি মেরে দিলেন জাকের আলি। ৫ বলে প্রয়োজন আর ১ রান। কিন্তু বিধিবাম, দ্বিতীয় বলেই শানাকার স্লোয়ার অফ কাটারে বোল্ড হয়ে যান জাকের। তাকে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছিল। তৃতীয় বল মোকাবেলা করতে নামেন শেখ মেহেদী। কোনো রান নিতে পারেননি। চতুর্থ বলে হাই বাউন্সে আসা বলটিতে পুল করতে চেয়েছিলেন মেহেদী। কিন্তু সেটি গিয়ে সোজা আশ্রয় নেয় উইকেট রক্ষকের গ্লাভসে। জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। কাল বিলম্ব না করেই রিভিউ চেয়ে বসেন লঙ্কান বোলার দাসুন শানাকা। রিভিউতে দেখা যায় বল মেহেদীর ব্যাটের প্রান্ত ছুঁয়ে গেছে। সুতরাং আউট। চরম নাটকীয়তা জমে ওঠে তখন। ২ বলে প্রয়োজন ১ রান। নাসুম আহমেদ ব্যাট হাতে নামেন এ সময়। এবার শানাকার কাছ থেকে অনায়াসেই সিঙ্গেলস বের করে নেন ঠান্ডা মাথার নাসুম আহমেদ। আগেভাগেই দৌড় দিয়ে ব্যাটিং প্রান্তে চলে যান শামীম হোসেনও। জয় উপহার দেয় তারা বাংলাদেশকে। অবশ্য ফিল্ডার সরাসরি থ্রো লাগাতে পারলে বিপদ হতে পারতো বাংলাদেশের। শামীম ১২ বলে ২ চারে ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন।

এর আগে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কা ৭ উইকেটে ১৬৮ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর ছুঁড়ে দেয় বাংলাদেশের দিকে। জবাবে বাংলাদেশ এক বল বাকি থাকতে ১৬৯ রান করে জিতে যায়। ১৬৯ রানের লক্ষ্যে জবাব দিতে নেমে শুরুতেই ফিরেন তানজিদ। শ্রীলংকার বিপক্ষে আরও একবার ব্যর্থ হন তানজিদ হাসান তামিম। আবারও শূন্য রানে ফিরে যান বাঁহাতি এই ওপেনার। নুয়ান থুসারার বল বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় লাইনেই যেতে পারেননি তানজিদ। বল আঘাত হানে অফ স্টাম্পে। গ্রুপ পর্বেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন তানজিদ তামিম। ১ ওভারে বাংলাদেশের রান তখন ১ উইকেটে ২। ক্রিজে সাইফ হাসানের সঙ্গী হন অধিনায়ক লিটন দাস। তামিম ফিরে যাওয়ার কোনো প্রভাব দলের উপর পড়তে দেননি সাইফ হাসান ও লিটন দাস জুটি। দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়েছেন তারা। ষষ্ঠ ওভারে তাদের জুটি ২৮ বলে ৫০ রান করে। পাওয়ার প্লেতে নুয়ান থুসারার ৩ ওভারে ৩০ রান নেয় বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লের পর আক্রমণে এসেই সাফল্য পেলেন শ্রীলঙ্কার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। এই লেগ স্পিনারের বলে সীমানায় ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান অধিনায়ক লিটন দাস। টার্নের বিপক্ষে শট খেলে টাইমিং করতে পারেননি লিটন। ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ নেন পাথুম নিসাঙ্কা। ভাঙে ৩৪ বল স্থায়ী ৫৯ রানের জুটি। ১৬ বলে তিন চারে লিটন ২৩ রান করেন। ক্রিজে সাইফ হাসানের সঙ্গী হন তাওহিদ হৃদয়। ১০ ওভারে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৮২। লেগ স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ছাড়া অন্য কেউ খুব একটা ভাবাতে পারেননি।

এদিকে এক প্রান্ত আগলে রেখে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন সাইফ হাসান। ৩৬ বলে এই ওপেনার ছুঁয়ে ফেলেন তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ৫০। বাজে বল পেলে ছক্কা, চার মেরেছেন সাইফ। এর বাইরে একদুই নিয়ে সচল রাখেন রানের চাকা। ১১ ওভারে বাংলাদেশের রান উঠে ২ উইকেটে ৮৮। এসময় আক্রমণে ফিরে আবার সাফল্য পান ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। সাইফ হাসানকে বিদায় করে বাংলাদেশের আরেকটি ৫০ ছোঁয়া জুটি ভাঙেন এই লঙ্কান লেগ স্পিনার। সাইফ ঠিকঠাক বলের লাইনে যেতে পারেননি। ব্যাটের কানায় লেগে শর্ট থার্ড ম্যানে ধরা পড়েন তিনি, দুনিথ ওয়েল্লালাগের হাতে। ভাঙে ৪৫ বল স্থায়ী ৫৪ রানের জুটি। ৪৫ বলে চার ছক্কা ও দুই চারে ৬১ রান করেন সাইফ। ১৪ ওভারে বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে তখন ১১৪। ক্রিজে তাওহিদ হৃদয়ের সঙ্গী হন শামীম হোসেন। এ জুটি থেকে আসে ৪৫ রান। তবে জ্বলে উঠা তাওহিদ অনবদ্য খেলতে থাকেন। বিশেষ করে সাইফের বিদায়ের পর নিজেই দায়িত্ব নিয়ে নেন। ৩৭ বলে ৫৮ রানের ইনিংস খেলতে ৪টি চার এবং ২টি ছক্কা হাঁকান তিনি। দুশমান্ত চামিরার বলে এলবি হয়ে জয়ের খানিক আগেই তাকে ফিরতে হয়। ম্যাচ সেরা হন বাংলাদেশের সাইফ হাসান। শ্রীলঙ্কার হাসারাঙ্গা এবং শানাকা ২টি করে উইকেট নেন।

এর আগে দুবাইতে টস জিতে বাংলাদেশ প্রথমে শ্রীলংকাকে ব্যাট করতে পাঠায়। আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রান সংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের বোলিংটা শুরুতে তেমন ভালো হয়নি। অন্যদিকে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে লঙ্কানদের বড় রানের ভিত গড়ে দেন দুই ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস। কিন্তু মাঝের ওভারগুলোতে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। বিশেষ করে স্পিনাররা দুর্দান্ত বোলিং করেন। তবে স্লগ ওভারে মোস্তাফিজ ছাড়া আর কেউই নিয়ন্ত্রিত বোলিং করতে পারেনি। তাতে দেড়শ ছাড়ান সংগ্রহ পেতে সক্ষম হয় লঙ্কানরা। দলের হয়ে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৬৪ রান করেন দাসুন শানাকা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই কুশল মেন্ডিসের কাছে ছক্কা হজম করেন শরিফুল ইসলাম। আক্রমণাত্মক শুরু করা লঙ্কানদের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। পঞ্চম ওভারের শেষ বলটি ভালো লেংথে করেছিলেন তাসকিন। মিডল ও লেগ স্টাম্পের ওপর থেকে টেনে খেলতে চেয়েছিলেন পাথুম নিশাঙ্কা, টাইমিং ভালো না হওয়ায় ডিপ মিডউইকেটে সাইফ হাসানের হাতে ধরা পড়েন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে ১৫ বলে ২২ রান করেছেন এই ওপেনার। নিশাঙ্কা ফিরলেও আরেক ওপেনার কুশল মেন্ডিস রানের চাকা সচল রাখেন। ফলে পাওয়ার প্লেতে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫৩ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। তবে পাওয়ার প্লে শেষে রানের চাকায় লাগাম দেয় বাংলাদেশ। অষ্টম ওভারে চতুর্থ বলে শেখ মেহেদিকে সুইপ করতে যান কুশল মেন্ডিস কিন্তু টপ এজ হয়ে বল উপরে উঠে যায়, ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে এবারও বল তালুবন্দি করেন সাইফ। ২৫ বলে ৩৪ রান করেন কুশল মেন্ডিস। এরপর কামিল মিশরাকুসাল পেরেরারা সুবিধা করতে পারেনি। এই সময়ে বেশ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে বাংলাদেশ। তবে শেষদিকে দারুণ ব্যাটিং করেন দাসুন শানাকা ও চারিথ আসালঙ্কা। বিশেষ করে শানাকা রীতিমতো ঝড় তোলেন। ৩৭ বলে অপরাজিত ৬৪ রান করেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। যা তার আন্তর্জাতিক টিটোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটার আসালঙ্কা ১২ বলে করেন ২১ রান। তাতে দেড়শ পেরিয়ে চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পায় লঙ্কানরা। বাংলাদেশের হয়ে ২০ রানে ৩ উইকেট শিকার করে ইনিংসের সেরা বোলার মোস্তাফিজুর রহমান। এ ছাড়া শেখ মেহেদি দুটি ও তাসকিন আহমেদ একটি উইকেট পান। উইকেট শূন্য ছিলেন শরিফুল ইসলাম এবং নাসুম আহমেদ। এই দুই খরুচে বোলার রান দেন যথাক্রমে ৪৯ এবং ৩৬ রান। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ তাদের পরের ম্যাচ খেলবে ভাতের বিপক্ষে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহোমিও ওষুধ ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধআজ আংশিক সূর্যগ্রহণ, বাংলাদেশ থেকে দেখা যাবে না