ছাত্র–জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে। অন্তর্বর্তী সরকার তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করায় তার ভবিষ্যৎ কী হবে, সেই প্রশ্ন আসছে ঘুরে ফিরে। হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে যখন ভারতে যান, তখন তার সঙ্গে ছিল কূটনৈতিক পাসপোর্ট। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ২০১৮ সালের সংশোধিত ট্র্যাভেল অ্যারেঞ্জমেন্ট অনুযায়ী, উভয় দেশের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়াই ৪৫ দিন পর্যন্ত অন্য দেশে থাকতে পারেন। ইতোমধ্যে তার ২০ দিন পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শেখ হাসিনা, তার উপদেষ্টা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য এবং জাতীয় সংসদের সদস্য এবং জীবনসঙ্গীদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে। কূটনীতিকদের মধ্যে যাদের মেয়াদ শেষ হয়েছে, তাদের পাসপোর্টও বাতিল করা হয়েছে। এখন সাধারণ পাসপোর্ট পেতে অন্তত দুটি সংস্থার তদন্ত পার হতে হবে। খবর বিডিনিউজের।
হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, সংবাদমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন অনুযায়ী ৭৬ বছর বয়সী শেখ হাসিনার হাতে ওই লাল পাসপোর্ট ছাড়া আর কোনো পাসপোর্ট নেই। ফলে অন্য কোনো ব্যবস্থা না হলে তার বৈধভাবে ভারতবাসের সুযোগ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। শেখ হাসিনা কোথায় কীভাবে আছেন, সে বিষয়ে ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য দেয়নি। তবে সংবাদমাধ্যমের খবর হলো, দিল্লির উপকণ্ঠে আধা সামরিক বাহিনীর একটি অতিথিশালায় রাখা হয়েছে তাকে।
শুরুতে শোনা গিয়েছিল, শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। তা না পেলে ইউরোপের কোনো দেশ তার গন্তব্য হতে পারে। তবে তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় দাবি করেছিলেন, তার মা আশ্রয়ের জন্য কোথাও আবেদন করেননি।
প্রত্যর্পণের ঝুঁকি কতটা : শেখ হাসিনা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন বা পেয়েছেন এমন কোনো খবর সেদেশের সংবাদমাধ্যমে আসেনি। তবে কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল হওয়ায় শেখ হাসিনার অবস্থানকে বৈধতা দিতে তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে পারে ভারত। এ অবস্থায় শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি তুলছেন বিএনপি নেতারা।
হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, ছাত্র–জনতার আন্দোলনের সময় হতাহতের ঘটনায় এরই মধ্যে ৫১টি মামলা হয়েছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, যার মধ্যে ৪২টিই হত্যার অভিযোগে। ফলে কূটনৈতিক পাসপোর্ট ও এ সংক্রান্ত ভিসা সুবিধা বাতিল হওয়ার ফলে শেখ হাসিনার বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে বহিঃসমর্পণ চুক্তি আছে তার আওতায় শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের সুযোগ রয়েছে। ওই চুক্তির অধীনে ভারত উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিতে পেরেছিল। একইভাবে বাংলাদেশ জেএমবির কয়েকজন জঙ্গিকে ফিরে পেয়েছিল। যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন বা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তাদের প্রত্যর্পণের সুযোগ রয়েছে এই চুক্তির অধীনে। তবে শর্ত হলো, অপরাধটি উভয় দেশেই দণ্ডনীয় হতে হবে। আর যাদের মামলা রাজনৈতিক প্রকৃতির তাদের ক্ষেত্রে এই চুক্তি প্রযোজ্য হবে না।
কোন পরিস্থিতিতে ভারত বা বাংলাদেশ প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারবে, সে কথাও বলা রয়েছে চুক্তির অষ্টম অনুচ্ছেদে। বলা হয়েছে, যদি কোনো অনুরোধ ‘সৎ উদ্দেশে নয়’ এবং ‘ন্যায়বিচারের স্বার্থে নয়’ বলে বিবেচিত হয়, সেক্ষেত্রে তা প্রত্যাখ্যান করা যেতে পারে।
হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, হত্যার মতো অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক’ হিসেবে বিবেচনার সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে ভারত যদি মনে করে যে, প্রত্যর্পণের ওই আবেদন ন্যায়বিচারের স্বার্থে নয়, তাহলে তা প্রত্যাখ্যান করতে পারে।
ফার্স্টপোস্ট লিখেছে, শেখ হাসিনা তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর ৬ বছর ভারতে নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছিলেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তিনি ভারতের একজন বিশ্বস্ত বন্ধু ছিলেন। কিন্তু এখন তার ভারতের অবস্থান দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ফলে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যেন শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য আনুষ্ঠানিক কোনো অনুরোধ না করে, সেজন্য কূটনৈতিক পথ বেছে নিতে পারে ভারত।
বাংলাদেশ শেখ হাসিনাকে ফেরানোর জন্য ভারতকে অনুরোধ করবে কিনা, সেই প্রশ্ন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সামনে রেখেছিল বার্তা সংস্থা রয়টার্স। জবাব দিতে গিয়ে অনুমাননির্ভর কিছু বলতে না চাইলেও শেখ হাসিনা যে অনেক মামলার মুখোমুখি হচ্ছেন, সেই প্রসঙ্গ টেনেছেন উপদেষ্টা।
তৌহিদ হোসেন বলেন, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় যদি সিদ্ধান্ত নেয়, তবে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর বিষয়ে (ভারতকে) আমাদের বলতে হবে। এটি ভারত সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি। ভারত এ বিষয়টি জানে এবং আমি নিশ্চিত তারা বিষয়টি বিবেচনা করবে।