শেখ হাসিনা

প্রথিতযশা রাষ্ট্রনায়ক

মফিজুর রহমান | মঙ্গলবার , ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৭:০৮ পূর্বাহ্ণ

সততা, সাহস, নেতৃত্ব, মেধায় অদ্বিতীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি স্বদেশে এবং বিশ্বমঞ্চে নন্দিত হয়েছেন একটি জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নোয়নে যুগান্তকারী নেতৃত্ব দিয়ে। পরিশ্রমী, পরিচ্ছন্ন এই নেত্রী আজ বিশ্বসভায় রাজনীতিবিদদের আইডল। তাঁর জীবনের ইতিবৃত্ত পর্যালোচনা করলে দেখা যায়- কী দুস্তর পারাবার তিনি পেরিয়েছেন এই জীবনে। জন্মেছিলেন এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারে। তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরিবারের বলয়ে শেখ হাসিনা পিতাকে দেখেছিলেন দেশ মাতৃকার জন্য অবিরত নির্যাতন ভোগ করতে। পিতাকে পিতা বলে ডাকার অবকাশ তিনি পাননি। সহজাত প্রতিভা বলে এই পারিবারিক প্রতিকূলতার ভেতরে তিনি মায়ের পাশে থেকে বাবাকে সমর্থন যুগিয়েছেন। ঘরে বাইরে তিনি প্রতিকূলতার ভেতর সাঁতার কেটে গড়ে ওঠেছেন শক্তপোক্ত হয়ে। ছাত্রজীবনে বাংলা মায়ের মুক্তির সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তিনি অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অবরুদ্ধ ছিলেন ৩২ নং ধানমণ্ডির বাসভবনে। ৭৫এর ১৫আগস্ট ইতিহাসের ভয়াবহতম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় তাঁর পরিবার। স্বামীর সাথে জার্মানীতে অবস্থান করায় শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহেনা প্রাণে বেঁচে যান। স্বজন হারানোর বেদনায় নিরাপত্তা খোঁজে ফিরেছেন দেশে দেশে। ১৯৮১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মনোনীত হয়ে স্বজনের রক্তরাঙা দেশে ফিরেন। তাঁর পিতার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে তিনি পান বহুধা বিভক্ত অবস্থায়। শুরুত্বে এইদলকে একত্রিকরণ করেন, জোড়া লাগান ভাঙাঘর। এরই সাথে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী মানুষকে নিয়ে সোচ্চার আন্দোলন গড়ে তোলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবীতে তিনি রাজপথে গণআন্দোলন গড়ে তোলেন। ভোট, ভাতের অধিকার হয় তাঁর রাজনীতির অঙ্গীকার। ৯০এর গণঅভ্যূত্থানের মাধ্যমে স্বৈরচারী এরশাদের পতন হলে দেশে প্রথম গণভোট অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯১ সালে। সে ভোটে তিনি ক্ষমতায় আসতে না পারলেও বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে সংসদের ভিতরে বাইরে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখেন। তারই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তিত হয়। ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ২১ বছর পর প্রথমবার সরকার গঠন করেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্টিত হয়ে দ্বৈর্থহীন ভাষায় ঘোষণা দেন, ‘তিনি শাসক নন, সেবক’। সে সময় ৫ বছর শাসনকালে আশ্রয়ন প্রকল্প, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা প্রবর্তন করে একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্রের রূপরেখা তৈরি করেন। জনমুখী রাষ্ট্রবাস্তবায়নে তার ভূমিকা প্রশংশিত হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর ক্ষমতায় আসে চারদলীয় জোট। তারা গণতান্ত্রিক সভ্যতা লংঘন করে ইতিহাসের নৃশংসতম ঘটনাগুলো ঘটায় একে একে। বর্বরতার চূড়ান্ত করেন তখন হাওয়া ভবনের অধিপতি তারেক জিয়া। ২০০৪ সালে ঢাকায় এক শান্তি সমাবেশে জঙ্গি হামলা করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন গোটা আওয়ামী লীগকে হত্যা চেষ্টা করে। এই চেষ্টা আল্লাহতায়ালার অসীম রহমতে সফল হয়নি। মৃত্যুঞ্জয়ী নেত্রী শেখ হাসিনা জীবন মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে তারপরও এগিয়ে যান। ২০০৭ সালে এক বিদঘুটে সেনাশাসনের কবলে পড়ে দেশ। সেই সেনাশাসনের বিরুদ্ধেও প্রথম মুখ খোলেন শেখ হাসিনা। সেনাশাসকদের খোপে পড়ে তিনি কারাগারে অন্তরীণ হন। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনার আন্দোলনের ফসল হিসেবে দেশে গণ ভোট হয়। সে ভোটে বিপুল বিজয় নিয়ে তিনি দেশ শাসনের নতুন যাত্রা শুরু করেন। এই যাত্রা আজো অব্যাহত। এরই মধ্যে ক্ষয়ে গেছে তার জীবনের ৭৪টি বছর। এই ৭৪ বছরে ২১ বার মৃত্যুর ঝুঁকি পেরিয়েছেন তিনি। মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে তিনি এক অনন্য লড়াই লড়েছেন অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে। এই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জিতেছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা এক বিজয়ী নেত্রীর নাম। শেখ হাসিনার জীবন সাফল্য ও বিজয়ের গাথায় ভরপুর।
যে বাংলাদেশ তাঁর মরহুম পিতা নির্মাণ করেছিলেন সেই বাংলাদেশকে ব্যর্থ হতে দেননি শেখ হাসিনা। দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্র চক্রান্ত ঠেকিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে আজ অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছেন। বাংলাদেশের যা কিছু ভালো অর্জন সবকিছুই শেখ হাসিনার হাত দিয়ে হয়েছে। শেখ হাসিনা একটি পথহারা জাতিকে পথ দেখিয়েছেন। তিনি ডেল্টাপ্ল্যান দিয়েছেন জাতির ভবিষ্যৎ পথ দেখিয়ে। আজ তাঁর হাত ধরে বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবার।
বাংলাদেশে একজন দূরদর্শী নেত্রী থাকায় বহু বৈশ্বিক বিপদকে তিনি ঠেকিয়ে দিয়েছেন। বিশ্বমন্দা, মহামারী করোনা -এই সব সংকটের ভেতরে একটি দেশের অর্থনীতির চাকা তিনি সচল রেখেছেন বিস্ময়কর নৈপুণ্যতায়। প্রতিবেশী ভারতের প্রায় ১০টি প্রদেশের অর্থনীতির আকারের সমান আজ বাংলাদেশের অর্থনীতির। মাথাপিছু আয় বেড়েছে, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, গড় আয়ু বেড়েছে, রেমিটেন্স বেড়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। এককথায় অর্থনীতির সকল সূচক উর্ধ্বগামী। দারিদ্রের হার কমেছে, বেকারত্ব কমেছে, কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে, শিক্ষিতের হার বেড়েছে। এক সময়ের ক্ষুধা, দারিদ্র, মহামারী ভীতির দেশ আজ ভালো খবরের জন্মভূমি। মঙ্গার দেশ, খাদ্য ঘাটতির দেশে- আজ খাদ্য উদ্বৃত্ত, মানুষ না খেয়ে মরে না। বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে শ্রীলংকাকে ঋণ দিয়ে বাংলাদেশ আজ ঋণদাতা দেশ। অথচ একসময় আমাদের অর্থমন্ত্রীরা ভিক্ষের থালা নিয়ে বিশ্বের দেশে দেশে ঘুরতো। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভাতা, প্রতিবন্ধী, মাতৃত্বকালীনভাতা, দুঃস্থ মহিলা, বিধবা, হিজড়াদের জন্য ভাতাসহ সামাজিক নিরাপত্তা জাল তৈরী করে মানুষকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে। বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশকে সবাই সমীহ করে। প্রতিবেশীদের সাথে ছিটমহল সমস্যা, সমুদ্রসীমার সমস্যা, পার্বত্য শান্তি চুক্তি শেখ হাসিনা নিরসন করেছেন। রোহিঙ্গা সংকটে মানবিক সাড়া দিয়ে তিনি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তাই তাকে ডাকা হয় মানবতার জননী বলে। বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন শান্তি বজায় রাখতে তিনি আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা সমুন্নত করেন। রাষ্ট্রীয়মদদপুষ্ট সকল জঙ্গি আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। জঙ্গীবাদের উত্থান ঠেকিয়ে তিনি বিশ্বসভায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠ হন। তিনি বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে গড়ে তোলেন শৌর্যে বীর্যে। আজকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষাবাহিনীতে বাংলাদেশের সৈনিকরা অগ্রগামী। প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী আজ দেশের স্বাধীনতা ও সংহতি বজায় রাখতে অবিসংবাদিত ভূমিকা রাখছেন। সেনাবাহিনীকে আধুনিকায়ন করতে তিনি নতুন নতুন ঘাঁটি, ফ্রিগেট, সাবমেরিন সংযোজন করেন। রাজধানী ঢাকা শহর আজ দূষণমুক্ত। মেট্রোরেলের সুবিধা পাচ্ছে রাজধানীবাসী। হাতিরঝিলকে মনোরম সাজানো হয়েছে। শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় যে অবদান বাঙালিজাতি যুগ যুগ মনে রাখবে সেটি হলো পদ্মা সেতু। বিশ্বব্যাংক তথাকথিত দুর্নীতির ধোঁয়া তুলে অর্থায়ন থেকে পিছিয়ে গেলে নিজস্ব অর্থে এই সেতু বাস্তবায়ন করেন শেখ হাসিনা।
অর্থনীতির স্বর্ণদোয়ার খুলে দিয়েছেন তিনি। আজকে বিনিয়োগের জন্য বিদেশীদের পছন্দের তালিকায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ঘাটতি নেই এটা একসময় কেউ ভাবেও নি। মহেশখালীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করে- চট্টগ্রাম বন্দরকে আধুনিকায়ন করে- পায়রা বন্দরকে আধুনিকায়ন করে সেই তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ স্ফীত হয়ে উঠেছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় টানেল কর্ণফূলী নদীর তলদেশে নির্মিত হচ্ছে। উন্নয়নের লক্ষ্যে মাত্রায় সারা দেশে প্রায় ১০০টির মতো ইকোনোমিক জোন গড়ে তোলা হচ্ছে। বাংলাদেশের ছোট বড় এমন কোন জাতি গঠনমূলক বিষয় নেই যাতে শেখ হাসিনা ভূমিকা রাখছেন না। বিশেষ করে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে তার প্রচেষ্টা এককথায় বলা যায় বিপুলভাবে সম্মানিত হয়েছে। বাংলাদেশ ডিজিটাল হয়েছে এটা আজ বাস্তবতা। উন্নত দেশের সকল নেটওয়ার্কিং সুবিধা আজ বাংলাদেশে। মহাকাশে উৎক্ষেপন হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। অন্যের উপর নির্ভরতা কমিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানো বাংলাদেশ গড়ে তোলাই শেখ হাসিনার স্বপ্ন। নারীর সমতায়ন, ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনা পথিকৃৎ হয়ে থাকবেন। নারীশক্তিকে জাগ্রত করে দেশ গড়ার জন্য তাদের সম্পৃক্ত করার সর্বোত চেষ্টা করেছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের ভূমিব্যবস্থা, আইনব্যবস্থার সংস্কার করে তিনি সংস্কারক শেখ হাসিনাতে পরিণত হয়েছেন। বৃক্ষ, মাছ, ফল, ফুল, ধান, খাদ্যশস্য উৎপাদনে তিনি অভূতপূর্ব ভূমিকা রেখেছেন। সার, বীজ, কৃষি উপকরণ, ভূর্তকি দিয়ে যাচ্ছেন অকাতরে। আজ কৃষকের মুখে হাসি। মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে একে একে। ঢাকা-চট্টগ্রাম ৬ লাইনের হাইওয়ে, বুলেট ট্রেন, পর্যটন স্পট আধুনিকায়ন, শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিসেবা বাড়ানো হয়েছে। দুর্নীতি রুখে দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে রুগ্নতা থেকে বাঁচাতে কাজ করে যাচ্ছেন অকোতভয় এই নেত্রী। শেখ হাসিনাকে নিয়ে বাংলাদেশ আশ্বস্থ। মানুষের বিশ্বাস- যতদিন শেখ হাসিনার হাতে থাকবে দেশ, ততদিন পথ হারাবে না বাংলাদেশ। জনপ্রিয়তার সকল জরীপে শেখ হাসিনা এগিয়ে আছেন। বিশ্বে সৎ নেতাদের তালিকায় শেখ হাসিনা। প্রভাবশালী নারীনেত্রীদের তালিকায় তিনি। বহু সম্মাননায় ভূষিত করেছে বিশ্বসংস্থাগুলো। শেখ হাসিনার হাত ধরেই আমরা আজ সম্মান ও মর্যাদার আসন পেয়েছি। জাতিসংঘ কর্তৃক এসডিজিতে অগ্রগতির জন্য সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয় শেখ হাসিনাকে। শেখ হাসিনা জাতীয় ঐক্য রচনায় ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছেন। রাজনৈতিক সংঘাত ও অস্থিতিশীলতাবিহীন বাংলাদেশ তিনি গড়েছেন। শেখ হাসিনার মতো নিলোর্ভ, কর্মঠ, পবিত্রতায় ভরপুর নেত্রী পেয়ে বাংলাদেশ আজ গর্বিত। এই মহান নেত্রীর ৭৫তম জন্মদিনে তাঁর জন্য অফুরন্ত শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাই।
লেখক : সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশরত্ন জননেত্রীর জন্মদিন শুভ হোক
পরবর্তী নিবন্ধমানবতার জননী উন্নয়নের কাণ্ডারী