শূন্যে নীল মেঘের হাতছানি

| রবিবার , ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:১০ পূর্বাহ্ণ

মনীষা পাল

বাদাম তলে অনেকক্ষণ ধরে দু পায়ে দাঁড়িয়ে আছেন কাশেম সাহেব। কক্সবাজারগামী কালো মাইক্রোর অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকা স্ত্রীকে অধৈর্য গলায় বলে উঠছেন, আর কতক্ষণ? এইতো চলে এলো বলে, স্ত্রী উত্তর দেয়। পাক্কা আধা ঘণ্টা পরে এলো গাড়ি। হইচই, কলরব, ভালো করে উঠে বসতে না বসতেই পিছন থেকে একজন বলে উঠলো, ভাইয়া, ছবি। শখের ছবিয়াল তিনি, তাই দ্রুত ক্লিক করে মোবাইলে। গাড়ির পিছন থেকে গল্প ভাসে, নববধূর হাসির মতো সূর্যের কিরণ হাসে শিশির ভেজা দূর্বাঘাসে। গাড়ি ছুটছে চন্দনাইশ, দোহাজারী, চোখের সামনে অবারিত সবুজ। হঠাৎ পেছন থেকে চিৎকার, গাড়ি তো কেরানী হাট পেরিয়ে গেল, নাস্তা কই করবে? কেউ একজন বলে সামনে বাজার দেখে নামতে হবে। অগ্যতা বাজালিয়া বাজারে নামল তারা। কিন্তু একটা দোকানে দেখে শুধুই পরোটা, গ্রুপের এক কিশোরীর নান রুটি পছন্দ, তা শুনে এক তরুণ সারা বাজার থেকে তন্ন তন্ন করে ১০৮ টা থুক্কু দশটা নান রুটি নিয়ে এলো। আবারো গাড়ি ছুটে পাহাড়ী রাস্তা বেয়ে, একজন ফেসবুকে পোস্ট দিল রুক্ষ পাহাড়ের খাঁজে রসায়ন হবে, সত্যিই কি?

প্রথম গন্তব্য মেঘলা। পর্যটকদের জন্য লেকে ঘেরা পাহাড় অপরূপভাবে সাজানো হয়েছে, ঝুলন্ত ব্রিজের দড়িতে লাগানো রঙে রঙ্গিন হলো এই গ্রুপের এক জাড়া কপোতকপোতী। সবুজের সৌন্দর্য খালি চোখে দেখছে না মোবাইলের ক্যামেরায়! বলা মুশকিল! বান্দরবনে এই প্রথম দেখা মিললো খাঁচায় বন্দী বানরের। কায়াকিং এর খুব শখ ছিল কাশেম সাহেবের কিন্তু হাফ বেটার রাজি হলো না, তাই আইসক্রিম খেতে খেতে গ্রুপের এক বাপ বেটার কায়াকিং ভিডিও করতে লাগলেন। হারিয়ে যাওয়া মামা ভাগ্নেকে খুঁজে রওনা দিল স্বর্ণমন্দিরে। যাওয়ার পথে কাঁচা ভুট্টা দেখে কিনতে চাইলো অনেকেই, কিন্তু গাড়ি থামলো না। স্বর্ণমন্দিরে গেল, মেইন ফটকে গিয়ে দেখে, ঝুলছে একটা নোটিশ, দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষেধ। একজন বলে উঠলো, তিলোত্তমা কে ফোন দিলেই হবে। অবশেষে স্বর্ণমন্দির, ঘণ্টা বাজিয়ে গৌতম বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।

গাড়ি আবারো ছুটলো মেঘলা পর্যটন মোটেল এ। এখানকার ম্যানেজার শোয়েব ভাই এর সুন্দর ব্যবস্থাপনায় মুগ্ধ সবাই। দুপুরের খাওয়া শেষে কেউ দোলনায়, কেউ বাগানের সফেদা গাছে। চলে আসার সময় পেলাম ও এক ঝুড়ি সফেদা। মেঘের রাজ্য নীলাচল, ডাবল হ্যান্ড ভিউ পয়েন্ট, টাইটানিক ভিউ পয়েন্ট, দোলনা আরও কত কী! বিকেল তিনটায় টিকিট কেটে প্রবেশ সুন্দর এই রাজ্যে। রঙিন সিঁড়ি, দেয়ালে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও জীবন, শূন্যে নীল মেঘের হাতছানি, হাসি গল্পে কেটে গেলো অনেক সময়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপলোগ্রাউন্ড মাঠে মেলার হামলা বন্ধ করা হোক
পরবর্তী নিবন্ধশ্রমিক শ্রেণি আজ নিঃস্ব