চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে কৃষি সেচের জন্য প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানির চাহিদা রয়েছে। সেচযন্ত্র চালনার এসব জ্বালানি পরিবহনে গুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সেচ জ্বালানির সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করার পদক্ষেপ নিয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বোরো মৌসুমে (নভেম্বর’২০২০ থেকে মে’ ২০২১ পর্যন্ত) গভীর নলকূপ, অগভীর নলকূপ, এলএলপি (লো লিফট পাম্প), পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, ট্রান্সপ্লান্টার, কম্বাইন্ড হারভেস্টার, রিপার, ফসল মাড়াই ঝাড়াই যন্ত্র মিলিয়ে সারাদেশে ২৩ লাখ ৬৮ হাজার ৬২৭টি যন্ত্র ব্যবহার করা হবে। এতে জ্বালানি হিসেবে ডিজেলের প্রাক্কলিত চাহিদা রয়েছে ১৯ লাখ ৩৯ হাজার ৩৭০ মেট্রিক টন। একইসাথে লুব অয়েলের প্রাক্কলিত চাহিদা রয়েছে ৫১ হাজার ৩৪ মেট্রিক টন।
তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে গভীর নলকূপ ২টি, অগভীর নলকূপ ৪ হাজার ১২৫টি, এলএলপি ৮ হাজার ৯৫২টি, পাওয়ার টিলার ১৪ হাজার ৫২৬টি, ট্রাক্টর ৮৫৩টি মিলিয়ে ২৮ হাজার ৪৫৮টি কৃষিজ যন্ত্র ব্যবহৃত হবে। এতে চট্টগ্রামে ৩৬ হাজার ৯৯৪ মেট্রিক টন ডিজেল ও এক হাজার ৪০২ মেট্রিক টন লুব অয়েলের চাহিদা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ডিজেলের চাহিদা রয়েছে যশোরে ২ লাখ ২৪ হাজার ১৫ মেট্রিক টন। এছাড়া বগুড়ায় ২ লাখ ৫ হাজার ৪৯৫ মেট্রিক টন, ঢাকায় ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪২৮ মেট্রিক টন, ফরিদপুরে ১ লাখ ২১ হাজার ২৮ মেট্রিক টন, ময়মনসিংহে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৯০৩ মেট্রিক টন, রাজশাহীতে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৬ মেট্রিক টন, রংপুরে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৭১০ মেট্রিক টন, দিনাজপুরে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৫২ মেট্রিক টন, রাঙামাটিতে ১৮ হাজার ৮৯৩ মেট্রিক টন, কুমিল্লায় ৪৫ হাজার ৮৭৯ মেট্রিক টন, খুলনাতে ১ লাখ ৪১ হাজার ৬০৭ মেট্রিক টন, সিলেটে ৮০ হাজার ৫৯৯ মেট্রিক টন এবং বরিশালে ৫২ হাজার ৪০৪ মেট্রিক টন ডিজেলের চাহিদা রয়েছে।
জানা যায়, বছরের ডিসেম্বর-এপ্রিল পর্যন্ত এ পাঁচ মাস আমাদের দেশে কৃষিসেচ মৌসুম হিসেবে স্বীকৃত। দেশে মোট বিক্রয়কৃত জ্বালানির মধ্যে ৭৩.১১ শতাংশ ডিজেল। তন্মধ্যে প্রায় ১৮ শতাংশ কৃষিখাতে ব্যবহৃত হয়। কৃষিতে সেচকার্যে সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে সারাদেশে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে কৃষিসেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্নভাবে জ্বালানি তেল সরবরাহ নিশ্চিত করে বিপিসি। এজন্য বিপিসির প্রধান কার্যালয়ে ‘কেন্দ্রিয় কন্ট্রোল সেল’ ও চলতি মৌসুমের জন্য বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা অয়েলের চট্টগ্রাম প্রধান কার্যালয়সহ বগুড়া, খুলনা, সিলেট ও বরিশালের পাঁচটি বিভাগীয় কার্যালয়ে ‘আঞ্চলিক কন্ট্রোল সেল’ হিসেবে ‘বিশেষ মনিটরিং সেল’ স্থাপন করা হয়।
সেচ জ্বালানি সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে চট্টগ্রাম বন্দর, বিআইডব্লিউটিএ (বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অথরিটি), বাংলাদেশ রেলওয়ে, পিডিবি, কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে নিয়ে যৌথ কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বিপিসি। ইতোমধ্যে এসব জ্বালানি সরবরাহ শুরু হয়েছে।
বিপিসি জানায়, কৃষিসেচ মৌসুমে আমদানিকৃত জ্বালানি তেলের ট্যাংকার ও লাইটারেজ জাহাজ দ্রুত খালাস, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা পেট্রোলিয়ামের চট্টগ্রামস্থ প্রধান স্থাপনা থেকে গোদনাইল, ফতুল্লা, দৌলতপুর ও অন্যান্য ডিপোতে জালানি তেল সরবরাহে দ্রুত কোস্টাল ট্যাংকার লোডিংয়ের সুবিধার্থে বন্দরের তিনটি ডলফিন জেটিতে অন্য কার্গোবাহী জাহাজ নোঙ্গর না করার পদক্ষেপ নেয়া হয়।
এদিকে চলতি কৃষিসেচ মৌসুমে রেলওয়ের মাধ্যমেও জ্বালানি তেল পরিবহন করা হচ্ছে। তন্মধ্যে চট্টগ্রাম সিলেট/মোগলাবাজার রুটে সপ্তাহে ৫টি ট্যাংকওয়াগন রেক (প্রতি রেকের ধারণক্ষমতা ৬০০ মেট্রিক টন ও ট্যাংকওয়াগন সংখ্যা ২১টি), চট্টগ্রাম- রংপুর রুটে সপ্তাহে কমপক্ষে ৩টি ট্যাংকওয়াগন রেক (প্রতি রেকে ২৪টি ট্যাংক ওয়াগন, ধারণক্ষমতা প্রায় ৭০০ মেট্রিক টন), দৌলতপুর-পার্বতীপুর রুটে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫টি ট্যাংকওয়াগন রেক (প্রতি রেকে ট্যাংকওয়াগন সংখ্যা ৩০টি, ধারণক্ষমতা ১২২৫ মেট্রিক টন), দৌলতপুর-হরিয়ান/রাজশাহী এবং দৌলতপুর- নাটোর রুটে সপ্তাহে ১টি ট্যাংকওয়াগন রেক (প্রতি রেকে ট্যাংকওয়াগন সংখ্যা ৩০টি, ধারণ ক্ষমতা ১২২৫ মেট্রিক টন) যাতায়াত করবে। এছাড়া ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারী লি. (এনআরএল) থেকে ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে ২২শ’ মেট্রিক টনের ৫টি করে আসবে।
বিপিসির কন্ট্রোল সেলের সমন্বয়কারী বিপিসির উপ-মহাব্যস্থাপক (বিপণন) মোরশেদ হোসাইন আজাদ বলেন, ‘খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সরকার কৃষিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কৃষকরা যাতে সরকার নির্ধারিত মূল্যে জ্বালানি তেল পান, সেই বিষয়টি পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মনিটরিং করে থাকি। এবার বিপিসির পক্ষে যমুনা অয়েল সারাদেশের ৫টি আঞ্চলিক মনিটরিং সেলের মাধ্যমে বিষয়টি তদারক করছে।’ তিনি বলেন, সারাদেশে পর্যাপ্ত ডিজেল মজুদ রয়েছে। এসব ডিজেল কৃষক পর্যায়ে সরবরাহে পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে।