পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করেছে সরকার। শুল্ক প্রত্যাহার করলেও পাইকারি বা খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। ভোক্তারা বলছেন, সাধারণত দেখা যায়–আমাদের দেশে আমদানি শুল্ক বাড়ানো হলে সাথে সাথে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। কিন্তু এখন সম্পূর্ণ শুল্ক তুলে নেয়া হলেও দাম এক টাকাও কমেনি।
গতকাল বুধবার চাক্তাই খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০২ থেকে ১০৭ টাকায়। এছাড়া মিশরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা ও পাকিস্তানি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। তবে খুচরা বাজারে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা বাড়তি দরে।
পেঁয়াজের আড়তদাররা বলছেন, পেঁয়াজের বাজার চাহিদা ও যোগানের ওপর নির্ভর। চাক্তাই খাতুনগঞ্জে গুটিকয়েক ব্যক্তি পেঁয়াজ আমদানি করেন। বাকিরা কমিশনের ভিত্তিতে পেঁয়াজ বিক্রি করেন। অর্থাৎ পেঁয়াজ আমদানিকারক যে দাম নির্ধারণ করে দেন, সেই দামে বিক্রি করেন। এর বিনিময়ে কেজিপ্রতি তারা নির্ধারিত একটি কমিশন পেয়ে থাকেন। তাই আড়তদারদের পক্ষে দাম উঠানামা করার কোনো সুযোগ নেই। আড়তদারদের পক্ষে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের দেশে পেঁয়াজের দরবৃদ্ধির সাথে সাথে প্রশাসনের লোকজন আড়তে অভিযান পরিচালনা করে। এতে আতঙ্ক তৈরি হয়। অথচ আড়তদাররা পেঁয়াজ আমদানি করেন না।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশে তাহেরপুরী, বারি–১ (তাহেরপুরী), বারি–২ (রবি মৌসুম), বারি–৩ (খরিপ মৌসুম), স্থানীয় জাত ও ফরিদপুরী পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। ফলে বছরজুড়েই কোনো না কোনো জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। আর আমদানি করা হয় বাকি চার লাখ টন। মূলত এই আমদানিকৃত চার লাখ টন পেঁয়াজ বাজারের ওপর খুব বড় প্রভাব ফেলে।
চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ফোরকান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারেও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এছাড়া কালী পূজার কারণে পেঁয়াজ আমদানিও কিছুটা ধীরগতির ছিল। তবে এখন সরকার আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ তুলে নেয়ায় বাজার কমে আসবে।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস দৈনিক আজাদীকে বলেন, পেঁয়াজের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। তবে কিছুটা বাড়তি। এখন যেহেতু শুল্ক কমানো হয়েছে দামও কমে যাবে।
উল্লেখ্য, গতকাল পেঁয়াজ আমদানিতে বিদ্যমান মোট ১০ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে বলা হয়, পেঁয়াজের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ও সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আমদানি শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হলো। অর্থাৎ পেঁয়াজ আমদানিতে প্রযোজ্য মোট ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য শতাংশ করা হয়েছে।