শুরু হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা, আজ ষষ্ঠী

স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের আহ্বান

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২২ অক্টোবর, ২০২০ at ৯:০৯ পূর্বাহ্ণ

ষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে পাঁচদিনব্যাপী দুর্গাপূজা। দেশের হিন্দু সমপ্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় এ উৎসব শেষ হবে আগামী ২৬ অক্টোবর সোমবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে। তবে এবার করোনা মহামারীর কারণে উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে শুধুমাত্র সাত্ত্বিক ভাবেই পূজা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণের বাধ্যবাধকতায় প্রতিমা দর্শনের সময় বেঁধে দিয়েছে। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুরের মধ্যে দুর্গা পূজার মূল আচার-অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যা আরতির পর পূজা মণ্ডপ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে দেশের সব মণ্ডপের আয়োজকদের। আগে জানানো হয়েছিল, সন্ধ্যা আরতির পর রাত ৯টা পর্যন্ত মণ্ডপে দর্শনার্থী প্রবেশের সুযোগ থাকবে। পরিষদ গতকাল সেই সময় আরও কমিয়ে আনে। নগরীতেও এ নির্দেশনা অনুসরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বোধনের মধ্য দিয়ে প্রতিটি মণ্ডপে বন্দনাপূজা করা হয়েছে। পঞ্জিকা অনুযায়ী, আজ সকালে কল্পারম্ভ এবং সন্ধ্যায় বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠী পূজা সম্পন্ন হবে। বোধন শব্দের অর্থ জাগরণ বা চৈতন্যপ্রাপ্ত। পূজা শুরুর আগে বেলশাখায় দেবীর বোধন দুর্গাপূজার অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ। পুরাণ অনুসারে, রাক্ষসরাজ রাবণকে বধের উদ্দেশ্যে ভগবান রামচন্দ্র শরৎকালে দুর্গাপূজা করেন। অকালে দেবীকে তিনি বোধন করেন বলে একে অকালবোধনও বলা হয়। আগামীকাল শুক্রবার সপ্তমী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গাপূজার মূল আচার অনুষ্ঠান। পৃথিবীর সব মানুষকে করোনা মুক্ত রাখার জন্য সপ্তমী তিথিতে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে।
চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরীতে এবছর মোট ২ হাজার ১৮৬ মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ উপজেলায় সার্বজনীনভাবে ১,৫২৪ ও পারিবারিকভাবে ৩৮৯ এবং নগরীতে ২৭৩ মণ্ডপে দুর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর সারাদেশে ৩০ হাজার ২শ ২৩টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর সারাদেশে মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৩৯৮টি। গতবছরের তুলনায় এবার ১হাজার ১৭৫ টি মণ্ডপে পূজা কম হচ্ছে।
শাস্ত্র অনুযায়ী দুর্গার গমনাগমন যদি রবি বা সোমবার হয়, তাহলে তার বাহন হয় গজ বা হাতি। আবার শনি বা মঙ্গলবার হলে তার বাহন হয় ঘোটক বা ঘোড়া। বৃহস্পতি বা শুক্রবার যদি দুর্গার গমনাগমন ঘটে তাহলে তিনি দোলায় বা পালকিতে যাতায়াত করেন। আর সেটা বুধবার হলে তার বাহন হয় নৌকা। এবার সপ্তমী শুক্রবার হওয়ায় হিন্দু দুর্গা এবার আসবেন দোলায়। আর সোমবার দশমীতে কৈলাসে দেবালয়ে ফিরবেন হাতির পিঠে চড়ে। শাস্ত্র অনুযায়ী, দেবী দোলায় চড়ে মর্ত্যে এলে তার ফল হয় বহু মৃত্যু। তা হতে পারে মহামারী, ভূমিকম্প, যুদ্ধ, মন্বন্তর, খরার প্রভাবে। আর হাতিতে চড়ে দেবী বিদায়ের ফল হয়- পৃথিবীতে জলের সমতা বজায় থাকে এবং শস্য ফলন ভালো হয়। সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ হয় মর্ত্যভূমি।
চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল পালিত আজাদীকে জানান, এবার চট্টগ্রাম জেলার আওতাধীন ১৫ উপজেলায় ১ হাজার ৯১৩টি পূজাণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা হচ্ছে। প্রতিটি মণ্ডপে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক থাকবে। বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালে পূজা হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা করার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘নো মাস্ক নো এন্ট্রি’। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং শাস্ত্রমতে যা যা বলা হয়েছে তা তা করা হবে। সরকার নির্দেশিত ২৬ দফা ও ৭ দফা নির্দেশনা মেনে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। আমরা প্রত্যেক উপজেলা কমিটিকে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার জন্য বলেছি। নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিমা বিসর্জনে শোভাযাত্রা পরিহার করা হবে। এবার থাকছে না কোন ধরনের সাংস্কৃতিক আয়োজনও।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্রীপ্রকাশ দাশ অসিত জানান, এবার চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২৭০টি মণ্ডপে পূজা উদযাপিত হচ্ছে। এরমধ্যে কর্ণফুলী থানায় পড়েছে ২০টি। অবশিষ্ট ২৫০টি পূজা মণ্ডপ পড়েছে মহানগরী এলাকায়। এবার সরকারি নির্দেশেনা মেনে পুজার্থী জনগণকে মণ্ডপে মাস্ক পড়ে, হাতে সেনিটাইজার নিয়ে প্রতিমা দর্শনে মণ্ডপে প্রবেশ করতে হবে।
উত্তর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিখিল কুমার নাথ আজাদীকে জানান, এবার উত্তর জেলায় ৭৬৭টি মণ্ডপে পূজা উদযাপিত হচ্ছে। দক্ষিণ জেলায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৮২৬টি মণ্ডপে।
মহানগর পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে নগরীর প্রধান পূজা মণ্ডপ জেএম সেন হলে আজকের কর্মসূচিতে রয়েছে, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, প্রতিমা মঞ্চের আবরণ উন্মোচন ও সন্ধ্যারতি, মায়ের আমন্ত্রনাধিবাস। কাল মহাসপ্তমীতে সপ্তমী বিহিত পূজা, পুষ্পাঞ্জলি, জাগরণ পুঁথিপাঠ, বস্ত্র বিতরণ, সন্ধ্যারতি। ২৪ অক্টোবর মহাঅষ্টমীতে অষ্টমী বিহিত পূজা, সন্ধি পূজা, পুষ্পাঞ্জলি, অনাথালয়ে খাবার বিতরণ, জাগরণ পুঁথি পাঠ, সন্ধ্যারতি। ২৫ অক্টোবর মহানবমীতে নবমী বিহিত পূজা, যজ্ঞানুষ্ঠান, পুষ্পাঞ্জলি, বৈশ্বিক মহামারী করোনা থেকে মুক্তিলাভে সমবেত প্রার্থনা সভা, জাগরণ পুঁথিপাঠ, পুরস্কার বিতরণ, সন্ধ্যারতি। ২৬ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে দশমী বিহিত পূজা ও দর্পণ বিসর্জন, পুষ্পাঞ্জলি, ঘট গৃহে প্রবেশ, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে নিরঞ্জন অনুষ্ঠান ও শ্রীশ্রী চণ্ডীপাঠ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআদালতে আসামি ফয়সালের জবানবন্দি
পরবর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ফেসবুকে কটুক্তি যুবক গ্রেপ্তার