চট্টগ্রামে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম গতকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে। নগরীর তিনটি কেন্দ্রে সকাল ৯টার পর টিকাদান শুরু হয়। কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে চট্টেশ্বরী রোডের চট্টগ্রাম গ্রামার স্কুল (সিজিএস), ইস্পাহানি মোড়ের স্যার মরিস ব্রাউন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এবং একে খান মোড়ের মির্জা আহমেদ ইস্পাহানি উচ্চ বিদ্যালয়। এই তিনটি কেন্দ্রের ৮টি বুথে পরীক্ষার্থীদের টিকা প্রয়োগ করা হয়।
প্রথম দিন গতকাল তিনটি কলেজের মোট ২ হাজার পরীক্ষার্থীকে টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও টিকা নিয়েছেন ১ হাজার ৩৬৫ জন। বাকি প্রায় ৭শ পরীক্ষার্থী টিকা নিতে কেন্দ্রে আসেননি। মাউশি (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর) চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর হোসাইন আহমেদ আরিফ ইলাহী এবং চট্টগ্রামের জেলা শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হায়দার হেনরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এসব পরীক্ষার্থীর টিকা নিতে না আসার কারণ হিসেবে মাউশির কর্মকর্তারা বলছেন, ১৮ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সী শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা প্লাটফর্মে নিবন্ধনের সুযোগ ছিল। এ রকম বেশ কয়জন পরীক্ষার্থীকে আমরা পেয়েছি, যারা সুরক্ষায় নিবন্ধন করেছে কিন্তু এসএমএস না পাওয়ায় টিকা নিতে পারেনি। তারা আজ (মঙ্গলবার) টিকা নিয়েছে। যারা আসেনি, তারা হয়তো সুরক্ষায় নিবন্ধনের পাশাপাশি এসএমএস পেয়ে টিকাও নিয়েছে।
এদিকে, শুরুতেই জনবল ও ফান্ডসহ নানামুখী সংকট দেখা দিয়েছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের এই টিকাদান কার্যক্রমে। গতকাল দুটি টিকাদান কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, বুথ সংখ্যা কম হওয়ায় ধীরগতিতে চলছিল টিকাদান। এর একটি কেন্দ্রে তিনটি বুথে এবং অপর কেন্দ্রে ২টি বুথে টিকাদান চলছিল। এতে করে অনেককে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। বুথ বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম গ্রামার স্কুল কেন্দ্রে অবস্থান করা চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, আমাদের ভ্যাকসিনেটর (টিকাদান কর্মী) সংকট। সিটি কর্পোরেশন থেকে ভ্যাকসিনেটর চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা দিতে পারেনি। নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীদের এনে জরুরি ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ দিয়ে টিকাদান শুরু করেছি। কিন্তু টিকাদানে নিয়োজিত এসব ভ্যাকসিনেটরের যাতায়াত-খাবারসহ কোনো কিছুর জন্য আমাদের কাছে বরাদ্দ নেই। মাউশির উনারাও বলছেন, তাদের ফান্ড নেই। এছাড়া ফাইজারের টিকা পরিবহনেও এসিযুক্ত মাইক্রোবাস প্রয়োজন। তারও সংকট রয়েছে। মাইক্রোবাসের সংকটের কারণে প্রথম দিন একটি কেন্দ্রে টিকাদান দেরিতে শুরু করতে হয়েছে। সব মিলিয়ে সংকট তো আছেই।
বিভিন্ন সংকটের কথা স্বীকার করে মাউশি চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর হোসাইন আহমেদ আরিফ ইলাহী বলছেন, হঠাৎ করে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের এ টিকাদান কার্যক্রম শুরু করতে হয়েছে। কিন্তু টিকাদানে নিয়োজিত কর্মীদের আপ্যায়ন-যাতায়াতের বিষয়ে আমরাও কোনো নির্দেশনা পাইনি। এ নিয়ে একটা সংকট তো আছেই। তবে পর্যায়ক্রমে এসব সংকটের সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অন্যদিকে, তিন টিকাদান কেন্দ্রের একটি মির্জা আহমেদ ইস্পাহানি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রটি আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে মাউশির আঞ্চলিক পরিচালক প্রফেসর হোসাইন আহমেদ আরিফ ইলাহী বলেন, ওই কেন্দ্র বন্ধ হলেও সিজিএস কেন্দ্রে বুথের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থাকায় সিজিএস স্কুল কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রমের পরিসর আরো বাড়ানো হচ্ছে। দ্বিতীয় দিন (বুধবার) নগরীর ৫টি কলেজের আড়াই হাজার পরীক্ষার্থীকে টিকাদানের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হায়দার হেনরী।
টিকা নিয়ে পরীক্ষার্থীদের অনুভূতি : সকাল ৯টার পর থেকে চট্টেশ্বরী সড়কের সিজিএস কেন্দ্রের সামনে জড়ো হতে শুরু করে চট্টগ্রাম কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। সবার হাতে সুরক্ষায় নিবন্ধনের একটি ফরম ও এইচএসসির রেজিস্ট্রেশন কার্ডের কপি। দশটার দিকে এখানে টিকাদান শুরু হয়। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হায়দার হেনরী ও চট্টগ্রাম গ্রামার স্কুলের (ন্যাশনাল কারিকুলাম) প্রধান শিক্ষক তোশিন খান টিকাদান কার্যক্রম তদারকি করছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এই কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রম পরির্দশনে আসেন জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান।
দুপুর ১২টার দিকে টিকা নিতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন হাবিবা বিনতে রশীদ। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার অপেক্ষায় থাকা এই পরীক্ষার্থী জানান, তার এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) নেই। এনআইডি না থাকায় সুরক্ষায় নিবন্ধন করতে পারছিলেন না। এখন সহজে টিকা নেয়ার সুযোগ পেয়ে তার প্রতিক্রিয়া, মনে করেছিলাম এনআইডি না থাকায় টিকা নেয়ার সুযোগই হয়তো পাব না। কিন্তু এখন সহজে টিকা পাচ্ছি। এটি অবশ্যই ভালো লাগার।
তবে টিকা নিতে কিছুটা সময় লাগছে জানিয়ে কেন্দ্র ও বুথ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে পরীক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, সামনে পরীক্ষা। কিন্তু টিকা নিতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার কারণে অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে।
উল্লেখ্য, আগামী ২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে এবারের এইচএসসি পরীক্ষা। মহানগরে ৩৫ হাজার এইচএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছে। পরীক্ষা শুরুর আগেই এসব পরীক্ষার্থীর টিকাদান শেষ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।