শুভ বিজয়া দশমী আজ

মণ্ডপে মণ্ডপে বিষাদের সুর

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২ অক্টোবর, ২০২৫ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

শারদীয় দুর্গাপূজার আজ বিজয়া দশমী। পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ দিন। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় এ উৎসব। এ দিনেই দেবী দুর্গা মর্ত্য ছেড়ে ফিরে যাবেন স্বামীগৃহ কৈলাসে। তাই মণ্ডপে মণ্ডপে আজ শুধুই বিষাদের ছায়া। উলুধ্বনি, শঙ্খ, ঘণ্টা আর ঢাকঢোলের বাজনায় থাকবে দেবী দুর্গার বিদায়ের সুর। পাঁচ দিনব্যাপী এই শারদীয় উৎসবের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও একটি বছর। আজ বৃহস্পতিবার বিসর্জনের দিন সকালে হবে দশমীর বিহিত পূজা। পূজা শেষে দর্পণ ও বিসর্জন।

পুরাণ মতে, বিজয়া দশমীর অন্যতম আয়োজন ‘দেবীবরণ’। রীতি অনুযায়ী, সধবা নারীরা স্বামীর মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন সিঁদুর, পান ও মিষ্টি নিয়ে দুর্গাকে সিঁদুর ছোঁয়ান। দেবীর পায়ে সিঁদুর ছোঁয়ানোর পর সেই সিঁদুর প্রথমে সিঁথিতে মাখান, পরে একে অন্যের সিঁথি ও মুখে মাখেন। মুখ রঙিন করে হাসিমুখে দেবীকে বিদায় জানান, যা সিঁদুর খেলা নামে পরিচিত।

বিসর্জনের দিনে নগরীর জেএমসেন হল, প্রবর্তক সংঘ বাংলাদেশ, রামকৃষ্ণ মিশন, চট্টেশ্বরী কালী মন্দির, সদরঘাট কালী বাড়ি, দেওয়ানহাট কালী মন্দির, গোসাইডাঙ্গা কালী মন্দিরসহ ঐতিহ্যবাহী পূজা মণ্ডপগুলোতে সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে দশমীর বিহিত পূজা এবং পূজা শেষে দর্পণ বিসর্জন। এরপর ভক্তরা অঞ্জলি দিবেন। বিজয়া দশমীতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে অন্যরকম আবেগ ও মন খারাপ করা এক অনুভূতির সৃষ্টি হয়। কারণ, দশমী মানেই দুর্গা মায়ের ফিরে যাওয়া। অপেক্ষায় থাকতে হবে আরও একটি বছর। গতকাল বুধবার মহানবমীতে মন্দির, মণ্ডপে যেন মিলেমিশে গেছে আনন্দবেদনা। দেবীর বন্দনায় ছিল ভিন্ন এক আবহ। সকাল ৬টায় কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজার মাধ্যমে শুরু হয় নবমীর আনুষ্ঠানিকতা। পূজা শেষে ভক্তরা দেবীর চরণে অঞ্জলি নিবেদন করেন। নগরীর পূজা মণ্ডপগুলোতে বিকেলের আগপর্যন্ত নবমীর উৎসব ছিল শান্তলয়ের।

ঢাকঢোল, কাঁসরঘণ্টাসহ বিভিন্ন বাদ্য, ধূপ আরতি ও দেবীর পূজাঅর্চনায় ছিল প্রাণখোলা উচ্ছ্বাস। সেই সঙ্গে ছিল এক মানবিক ও সুন্দর পৃথিবীর প্রার্থনা। এদিন সকাল থেকে চট্টগ্রামসহ সারা দেশের মণ্ডপে মণ্ডপে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। মহানবমী তিথিতে বিহিত পূজার মাধ্যমে মণ্ডপে মণ্ডপে দেবী দুর্গার আরাধনা করেছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।

মহানগরী ও জেলার সবগুলো পূজা মণ্ডপে গতকাল নবমীর রাতে ভক্তদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। প্রতিটি মন্ডপে ভক্তদের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত আলো এবং সিসিটিভির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ সময় পুলিশ, আনসার ও পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য সহ র‌্যাবপুলিশের সার্বক্ষণিক টহল ও নজরদারিতে ছিল। এদিন মা দুর্গাকে ভক্তরা শেষবারের মতো দর্শন করে নিজের মনের ভক্তিশ্রদ্ধার্ঘ অপর্ণ করেন। বিজয়া দশমীর দিনে দেবী দুর্গাকে প্রাণভরে দেখে নেওয়ার সময়। দুর্গাপূজার অন্তিম দিন এটি। মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ ধরায় আসেন দশভূজা দেবী দুর্গা; বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব।

আজ পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বিসর্জন : আজ সকালে দশমী পূজা শেষ হওয়ার পর দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন দেয়ার জন্য মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিটি থানা ও পূজা কমিটিকে বলা হয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বিসর্জনের আয়োজন করেছে। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য সৈকতে নামার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বিসর্জন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকসহ পতেঙ্গা থানা পুলিশ ও পূজা পরিষদ এবং সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত থাকবেন।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ছাড়াও পাথরঘাটা গঙ্গাবাড়ি এলাকায় কর্ণফুলীতে, কালুরঘাট এলাকায়, কাট্টলী রানী রাসমনি ঘাটে এবং আনোয়ারার পারকি সমুদ্র সৈকতেও প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগাছের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ হারা ট্রাকের ধাক্কা, চালক নিহত
পরবর্তী নিবন্ধব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত ইলিয়াস কাঞ্চন