নগরীর ফুটপাত দখলমুক্ত করতে না পারার পেছনে প্রশাসনের গাফেলতি আছে বলে মনে করেন নগরবাসীর অনেকে। পথচারীদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে ফুটপাতেই বসানো হয় ভ্রাম্যমাণ দোকান, যার পেছনে পুলিশও রয়েছে বলে অভিযোগ। গাড়ি পার্কিং নিষিদ্ধ হলেও এ অনিয়মের চর্চা সবচেয়ে বেশি হয় প্রশাসনিক ভবনগুলোর সামনে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর ফুটপাত দখলমুক্ত করার কাজে সমন্বয়হীনতা দিনদিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। একদিকে সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযান, অন্যদিকে ফুটপাত দখল করে ব্যবসা। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তা দেখেও যেন দেখে না।
পথচারীরা বলেন, ফুটপাত ব্যবহার করার কোনও উপায় নেই তো। কারণ ফুটপাত সব দখল করে রাখছে বিভিন্ন দোকানগুলো। ভবনের নিচে যতগুলো পার্কিং আছে তার চেয়ে বেশি গাড়ি।
ফুটপাত দখলমুক্ত করা নিয়ে আমরা ইতিমধ্যে সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছি, একটার পর একটা সংবাদ ছাপিয়েছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। হকারদের নিয়ে ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলার কথা আমরা শুনেছি। হকারদের নিয়ে এই সমস্যা নতুন নয়। বরং বলা চলে বহু পুরাতন। হকারদের উচ্ছেদ করা হয়, আবার ওরা দখলে যায়। কিন্তু নগরবাসীর পথ চলাচল নিশ্চিত ও নগরীকে দুঃসহ যানজট মুক্ত করার লক্ষ্যে ব্যানার, তোরণ, ফেস্টুন সরিয়ে ফেলা যেমন দরকার, তেমনি ফুটপাতে সকল প্রকার অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা অত্যন্ত জরুরি। পথচারীদের স্বার্থে অনেক সময় নানা ধরনের সিদ্ধান্তের কথা শোনা যায়। এখন কথা হচ্ছে শুধু সিদ্ধান্ত নিলেই হবে না জনস্বার্থে এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করাটা অত্যন্ত জরুরি।
১১ জানুয়ারি দৈনিক আজাদীতে ‘ফুটপাত দখলমুক্ত হবে?’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নগরে ২৮১ কিলোমিটার ফুটপাত আছে, যার সিংহভাগ থাকে দখলে। এছাড়া সড়কও স্থায়ী ও ভাসমান হকারদের দখলে থাকে। এতে হাঁটাচলায় অসুবিধা হয় পথচারীর। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লাগে সড়কে। যত্রতত্র বসা হকারদের কারণে সৃষ্ট নাগরিক দুর্ভোগের এ চিত্র পুরনো। অবশ্য হকারমুক্ত ফুটপাত কিংবা হকারদের শৃঙ্খলা আনয়নে অতীতে চেষ্টার কমতি ছিল না চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক)। উচ্ছেদের পাশাপাশি হকারদের পুনর্বাসন, ব্যবসা করার জন্য সময় নির্ধারণ এবং তালিকা তৈরি করে পরিচয়পত্র প্রদানের উদ্যোগও নিয়েছিলেন সাবেক মেয়রগণ এবং বর্তমান প্রশাসক। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পুরোপুরি শৃঙ্খলায় আসেনি হকাররা। তাই দুর্ভোগও কমেনি নাগরিকদের। এ অবস্থায় ঘনিয়ে আসছে চসিক নির্বাচন। ফুটপাতে নির্বিঘ্নে হাঁটতে না পারা লোকগুলোর প্রত্যাশা, নির্বাচিত মেয়র অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের সমস্যার সমাধান করবেন। বাধাহীন ফুটপাতে নিরাপদ পথ চলার ব্যবস্থা করবেন।
এ কথা বলা জরুরি যে, ফুটপাতগুলো দখলে থাকায় যারপরনাই ভোগান্তির শিকার হয় সাধারণ মানুষজন। যানজটের নিগড়ে পিষ্ট মানুষের কাছে এ যেন গোদের ওপর বিষফোঁড়া। সাধারণত হকাররাই ফুটপাতগুলো দখল করে রাখে। এজন্য ফুটপাতগুলো হকারমুক্ত রাখা প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেকারত্ব এখন দেশের একটি বড় সমস্যা। আগেকার দিনে বেকারত্ব বলতে প্রধানত বোঝাতো মধ্যবিত্ত শিক্ষিত লোকদের কর্মসংস্থানের অভাব। এখন বেকারত্বের হার অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। ফুটপাতে হকারদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি হওয়া বেকারত্বেরই প্রতিফলন ছাড়া আর কিছু নয়। যারা আজ ছিঁচকে চোর, মাদকদ্রব্য বহনকারী, রাস্তাঘাটে ছিনতাইকারী, পকেটমার নানাভাবে খুনখারাবি করছে তাদের অধিকাংশের উদ্ভব বেকারত্বের কারণে। তারা নানা ধরনের অপরাধ করে জীবিকা অর্জন করছে।
সেজন্য এ প্রশ্নও ওঠা স্বাভাবিক, হকারদের উঠিয়ে দিলে তারা কী করে খাবে? তাদের মধ্যে অপরাধের মাত্রা বাড়বে। উচ্ছেদের বদলে তাদের পুনর্বাসিত করা যায় কিনা, তা ভাবতে হবে। শহরে দিন দিন জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে। মফস্বল থেকে মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। এরাই জায়গা না পেয়ে প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে টাকার বিনিময়ে ফুটপাতে দোকান বসাচ্ছে। সমন্বয় ও আলোচনার মাধ্যমে এদের নিজ নিজ এলাকায় পুনর্বাসিত করা যায় কিনা সেই বিষয়টিও ভেবে দেখা উচিত। ফুটপাতে যারা দোকান বসিয়েছে, তাদের উঠিয়ে দিলে তারা যাবে কোথায়। তাদের জন্য ২ থেকে ৩টি সড়ক খালি রাখতে হবে, যেন ওই সড়ক দিয়ে কোনো গাড়ি চলাচল করতে না পারে। সেখানেই হকারদের পুনর্বাসন করা যেতে পারে। তাহলে অবৈধভাবে ফুটপাত দখলের বাজার থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যেতে পারে।