ঢাকা–চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী বিরতিহীন ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। বর্ধিত এই ভাড়া আগামী ২৫ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। সমপ্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক আদেশ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, নতুন ভাড়া অনুযায়ী, সুবর্ণ এক্সপ্রেসে শোভন চেয়ার শ্রেণির প্রতি আসনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০৫ টাকা, যা আগে ছিল ৩৮০ টাকা। এ ছাড়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) কোচে আসনপ্রতি ভাড়া ৬৩০ টাকা (ভ্যাটসহ ৭২৫ টাকা) থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। এখন থেকে সুবর্ণ এক্সপ্রেসের স্নিগ্ধা (এসি) সিটের ক্ষেত্রে ভ্যাটসহ একজন যাত্রীকে ৮০৫ টাকা ভাড়া গুণতে হবে। অর্থাৎ শোভন শ্রেণির ভাড়া ২৫ টাকা আর স্নিগ্ধার ভাড়া ৮০ টাকা বেড়েছে। ঢাকা–চট্টগ্রাম রুটে দুটি বিরতিহীন ট্রেন চলাচল করে। তবে দুই ট্রেনের ভাড়া দু‘রকম ছিল। এবার সুবর্ণ এক্সপ্রেসের ভাড়া বাড়ানোর ফলে এখন থেকে এই রুটের বিরতিহীন আরেক ট্রেন সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের সমান ভাড়া দিতে হবে। সুবর্ণ ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেস দুটিতেই গন্তব্যে পৌঁছাতে সোয়া পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগে। রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী জানান, সুযোগসুবিধা সমান হওয়ায় সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলার ভাড়া সমান করা হয়েছে।
সাধারণ জনগণ রেলের ভাড়া বৃদ্ধিতে তেমন উষ্মা প্রকাশ না করলেও তাঁরা যাত্রীসেবার মান নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত। আমাদের পাঠক মাত্রই অবগত যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আগ্রহে রেল নিয়ে আলাদা মন্ত্রণালয় হয়েছে ২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর। বলা চলে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই রেল খাতকে পুনর্জীবন দেওয়ার কাজ শুরু হয়। বন্ধ রেলপথগুলো চালু করার পাশাপাশি নতুন নতুন রেলপথ তৈরি করা হচ্ছে। এক যুগ ধরে বরাদ্দও বাড়ছে। তবু বাড়ছে না যাত্রীসেবার মান। রেলওয়ের তৈরি করা এক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে, প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় যাত্রীসেবার মানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশের রেল। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির সমপ্রতি করা এক জরিপেও ৭২ শতাংশ যাত্রী রেলের সেবা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। অথচ যাত্রীসেবা না বাড়িয়েই গত এক যুগে রেলের ভাড়া বেড়েছে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ।
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব গণপরিবহন হিসেবে রেলপথ সারা দুনিয়ায় সবচেয়ে জনপ্রিয়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও গড়ে উঠেছে আধুনিক রেল যোগাযোগব্যবস্থা। নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণের মাধ্যম হিসেবে রেল সবখানেই যাত্রীদের প্রথম পছন্দ। শুধু বাংলাদেশে রেলওয়েকে সব সময় চরম অবজ্ঞা করা হয়েছে। এখানে অনিয়ম–অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি যাত্রীসেবার মান তলানিতে এসে ঠেকেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতিবছর রেলের সেবা সপ্তাহে কর্তৃপক্ষ যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও সার্বিক অব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে খুব একটা পরিবর্তন আসে না। বস্তুত দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূর করা না হলে রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রীসেবায় খুব একটা পরিবর্তন আসবে না। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, গত এক যুগে রেলে প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে; চলমান রয়েছে আরও বিপুল অঙ্কের অর্থের উন্নয়ন প্রকল্প। তারপরও যাত্রীসেবার মান বাড়ছে না; দুর্ভোগ যেন যাত্রীদের নিত্যসঙ্গী। জরাজীর্ণ রেলপথ আর চরম ঝুঁকিতে থাকা লেভেল ক্রসিংয়ে প্রতিনিয়তই ঝরছে প্রাণ। তাঁরা বলেন, অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি দূর করার পদক্ষেপ না নিলে যত অর্থই বিনিয়োগ করা হোক না কেন, তার সুফল পাওয়া নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। অদক্ষতার কারণে সংশ্লিষ্টরা বরাদ্দকৃত অর্থ সময়মতো খরচও করতে পারেন না। দেশে ভয়াবহ যানজট, বেহাল সড়ক ব্যবস্থাপনার প্রেক্ষাপটে রেল লাভজনক সংস্থায় পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও এ সংস্থার রুগ্ণ দশাই কাটছে না।
আমাদের মনে রাখতে হবে যে, শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, মানবসম্পদ উন্নয়নে কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি অংশীদারীত্বের ভিত্তিতে নতুন একটি পদ্ধতি সৃষ্টি করতে পারে সরকার। ভাড়া বৃদ্ধিতে যে মনোযোগ রয়েছে, তেমনি সেবাতেও মন দিতে হবে। তাহলেই যাত্রীদের সন্তুষ্টি আসবে।