রাঙ্গুনিয়ার শীর্ষ মাদক কারবারি আজিজুল হক শামীম ওরফে অ্যালেন শামীমের (৩৫) আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে র্যাব–৭। অভিযানে তিনটি দেশীয় অস্ত্র, বিপুল পরিমাণ মাদক, সিসিটিভি ক্যামেরাসহ আস্তানা নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় অ্যালেন শামীম পালিয়ে গেলেও তার তিন সহযোগী গ্রেপ্তার হয়। তারা হলেন উপজেলার দক্ষিণ কোদালা এলাকার আবদুল হামিদের ছেলে ওমর ফারুক (২২), রাউজানের নোয়াপাড়া এলাকার মোহাম্মদ মফিজের ছেলে মোহাম্মদ আরিফ (২২) এবং নোয়াখালী এলাকার মোহাম্মদ আলী মুন্সির ছেলে মোহাম্মদ সাকিল (২১)। পলাতক শামীম পৌরসভার উত্তর ঘাটচেক এলাকার মৃত ফয়েজ আহমেদের ছেলে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম কোকানিয়া ছিড়াটিলা গ্রামে এই অভিযান চালানো হয়।
অভিযানকালে সরেজমিনে পারুয়ার ইউনিয়নের গহীন জঙ্গলে গিয়ে দেখা যায়, র্যাব–৭ এর একটি দল সেখানে অভিযান চালাচ্ছে। ছিড়াপাহাড় নামক একটি স্থান থেকে লোহার দুটি বক্সের ভেতর টিনের দুটি বড় বক্স পাওয়া যায়। বক্সের লকার ভাঙতেই ভেতরে পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণ মাদক। যেখানে আনুমানিক ২০ কেজি গাজা, ৪০ বোতল ফেন্সিডিল, বিপুল ইয়াবা, মাদক সেবনের বিভিন্ন উপকরণ পাওয়া যায়। এসময় শামীমের তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে তিনটি দেশীয় শর্ট গান পাওয়া যায়। সড়কের বিভিন্ন বাঁকে বাঁকে অত্যাধুনিক ভয়েস রেকর্ডার সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো ছিলো। এছাড়া আস্তানার ভেতর শামীমের বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের প্রমাণ সংগ্রহ করে র্যাব। শামীমকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানান অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া র্যাব–৭ এর কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট তৌকির।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাদকের কারবার এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে শীর্ষ সন্ত্রাসী শামীম। তার এই কাজ চালিয়ে নিতে থানার কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা এবং সরকার দলীয় বেশ কিছু নেতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বছর দেড়েক আগে উপজেলা যুবলীগের এক নেতার উপর প্রকাশ্যে হামলা চালানোর পর থেকে প্রথম আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর পোমরা ইউনিয়নের গোচরা বাজারে কাপ্তাই সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে দিনদুপুরে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে হামলা চালানোর কয়েকদিনের মধ্যেই মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয় শামীম। সম্প্রতি জেল থেকে বেরিয়ে আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছিল সে। তার নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ঘাটচেক কেন্দ্রীক এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতো। যার হেডকোয়ার্টার হিসেবে সে পারুয়া ইউনিয়নের কোকানিয়া পাহাড়ি জনপদকেই বেছে নিয়েছে। আস্তানায় স্থাপিত অত্যাধুনিক সিসিটিভির সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা হতো আস্তানার মাদক কারবার।
এই ব্যাপারে কোকানিয়া এলাকার কৃষক নুরুল ইসলাম জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় কৃষি কাজ করতেন। তবে শামীম আস্তানা স্থাপনের পর থেকেই তাকে সেখানে যেতে বাধা দিতো। এরপরও নিজ কৃষি ক্ষেতে যাওয়ার চেষ্টা করলে শামীমের লোকজন তাকে কয়েকবার ব্যাপক মারধর করে।
কথা হয় স্থানীয় কৃষক আব্দুল মান্নান, মো. ইব্রাহিম ও মোহাম্মদ জাফরের সাথে। তারাও জানান, শামীম ঘাটচেকে বসে সিসিটিভির সাহায্যে কোকানিয়া এলাকার আস্তানা নিয়ন্ত্রণ করতো। দিনদুপুরে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করতো। গভীর রাত পর্যন্ত চলতো তার মাদকের কারবার। তার বিরুদ্ধে এলাকার মানুষ প্রশাসনকে মৌখিকভাবে অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।