শীতে কাবু জনজীবন

ভর দুপুরেও কুয়াশা, বিকেল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি বৃষ্টি হতে পারে আজ এবং কালও

মোরশেদ তালুকদার | বৃহস্পতিবার , ২৫ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৭:০৪ পূর্বাহ্ণ

মাঘের শীতে বাঘ কাঁপে’। মাঘ মাসে শীতের তীব্রতা বুঝানো হয়েছে প্রাচীন এ প্রবাদে। চলছে মাঘ মাস। সুন্দরবন ও চিড়িয়াখানা ছাড়া অন্য কোথাও বাঘের দেখা মিলছে না। কিন্তু শীতের তীব্রতা ঠিকই অনুভব করছেন চট্টগ্রামসহ সারা দেশের লোকজন। গতকাল বুধবার দিনের সিংহভাগ সময় কুয়াশায় ঢাকা ছিল নগরের আকাশ। তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। সাথে ছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। ফলে নগরবাসীর কাছে শীতের অনুভূতি এ দিন যেন একটু বেশিই ছিল। এছাড়া গতকাল সীতাকুণ্ড উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বিভাগে আজ এবং আগামীকালও বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া চলতি মাসের বাকি সময়জুড়ে শীত থাকবে।

এদিকে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জনজীবনে নেমে আসে দুর্ভোগ। বিশেষ করে ভাসমান, ছিন্নমূল ও বস্তি এলাকার লোকজনের কষ্ট বেড়েছে। গতকাল নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শীত থেকে বাঁচতে খড়কুটো দিয়ে জ্বালানো আগুন পোহাচ্ছেন ছিন্নমূল লোকজন। এমনকি বিকেলেও অনেক এলাকায় এ চিত্র দেখা গেছে।

সকালে মুরাদপুর এলাকায় আনুমানিক ৫৫ বছরের রিকশা চালক শফিউল আজাদীকে জানান, সাধারণত সকাল ৮টা৯টার দিকে রিকশা নিয়ে বের হন তিনি। কারণ এ সময় কর্মস্থল এবং স্কুলকলেজমুখী শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের উপস্থিতি বেশি থাকে সড়কে। এসময়ে আবার রাস্তায় জ্যাম থাকে না। তাই সকালের কয়েক ঘণ্টায় অল্প সময়ে বেশি ভাড়া মারা সুযোগ থাকে। কিন্তু কুয়াশা এবং শীতের তীব্রতার জন্য গতকাল সকালে বের হতে পারেননি তিনি। তাই আয়ও কম হয়েছে তার। পারভেজ নামে এক পথচারী বলেন, মাঘের শীতে নাকি বাঘ কাঁপে। যা শীত পড়ছে তাতে মনে হচ্ছে সত্যিই বাঘ কাঁপছে।

আবহাওয়াবিদরা জানান, সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান ১০ ডিগ্রি এর নিচে আসলে বাড়ে শীতের অনুভূতি। এ ব্যবধান যত কমবে শীতের অনুভূতিও তত তীব্র হয়। গতকাল এ ব্যবধান ছিল ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই হিসেবে গতকাল শীতের অনুভূতি কিছুটা কম হওয়ার কথা। কিন্তু এ দিন কুয়াশা ও বৃষ্টি থাকায় আবহাওয়া ছিল শীতল। তাই বেড়েছে শীতের তীব্রতা।

আবহাওয়াবিদের ভাষায়, সাধারণত মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতের সময় ধরা হয়। এ সময় সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থান করে। ফলে বাংলাদেশে সূর্যের রশ্মি পড়ে তীর্যকভাবে। তাই কমতে থাকে তাপমাত্রা। ঝাঁকিয়ে বসে শীত। অবশ্য এ বছর ডিসেম্বর মাসে খুব বেশি শীত অনুভূত হয়নি নগরে। শীতের তীব্রতা বাড়ে চলতি জানুয়ারি মাসে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ১১ জানুয়ারি উত্তরাঞ্চেলে অনেক জেলায় মৃদু শৈত্য প্রবাহ হয়েছে। এসময় বয়ে যায় ঠাণ্ডা বাতাসও। যা ২০ জানুয়ারি এসে বেড়ে যায়। এসময় কুয়াশার ঘনত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় বিমান চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে। বাড়ে ঠাণ্ডাজনিত রোগবালাইও।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ সুমন সাহা জানান, গতকাল নগরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২২ দশামক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। এছাড়া শূন্য দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সামান্য বৃষ্টিপাত হয়েছে বলেও জানান তিনি। গতকাল তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

আজকের আবহাওয়া পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সাময়িকভাবে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সে সাথে অস্থায়ীভাবে গুঁড়ি গুঁড়ি বা হালকা বৃষ্টি হতে পারে। মাধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ঝরতে পারে। দেশের অন্যত্র আকাশ আংশিক মেঘলা এবং আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। এছাড়া রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা থাকতে পারে; কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত চলতে পারে কুয়াশার দাপট। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটতে পারে।

আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা জানান, চলমান শৈত্য প্রবাহ কিছু প্রশমিত হলেও জানুয়ারি মাস জুড়ে শীত থাকবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখালি প্যাডে ডাক্তারের স্বাক্ষর, বন্ধ করে দেয়া হল প্রাইভেট হাসপাতাল
পরবর্তী নিবন্ধসুইজারল্যান্ড সিংগাপুর থেকে আনা হবে দুই জাহাজ এলএনজি