শীতেও টিকে আছে এডিস মশা, ডেঙ্গু থামছে না

| শনিবার , ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৯:১৯ পূর্বাহ্ণ

শীতকাল অর্ধেক পার হতে চললেও এডিস মশা টিকে আছে বেশ। প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে শীতের সময়ও এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে ডেঙ্গু রোগ এখন সারা বছরই থাকবে। মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে তবেই নিয়ন্ত্রণে থাকবে এ রোগের বিস্তার। খবর বিডিনিউজের।

বাংলাদেশে পৌষ ও মাঘ মাস শীতকাল। ইংরেজি মাসের হিসেবে মধ্য নভেম্বর থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত। তবে শীতশীত ভাব আরও একটু আগে শুরু হয়, আর শীতের আমেজ থাকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বাংলাদেশে গত কয়েক বছরের তথ্যে দেখা গেছে, জুলাই মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু সংক্রমণ চূড়ায় অবস্থান করে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় নভেম্বরডিসেম্বর, এমনকি জানুয়ারি মাস পর্যন্ত।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৭ জন রোগী। এদিন সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন ২৭৯ জন। বছরের প্রথম ১১ দিনে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬০৭ জন। এ সময় মৃত্যু হয়েছে চারজনের। ২০২৩ সালের জানুয়ারির প্রথম ১১ দিনে ২১০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। ওই সময় ১ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

ঢাকায় এখনও মশার উপস্থিতি : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এইডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় গত বছরের ৮ থেকে ১৮ ডিসেম্বর ঢাকার ৯৯টি ওয়ার্ডে বর্ষা পরবর্তী মশার জরিপ চালায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপের ফল অনুযায়ী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৯টি ওয়ার্ডের ১৮১৫ বাড়ি পরিদর্শন করে ২২৪টি বাড়িতে পাওয়া গেছে এডিস মশার লার্ভা। অর্থাৎ ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বাড়িতেই এখনও এডিস মশার লার্ভা আছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪০টি ওয়ার্ডের ১৩৩৪টি বাড়ি জরিপ করে ১৫৫টি বা ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।

কোনো এলাকার ব্রুটো ইনডেঙ ২০এর বেশি হলে সেখানে মশার ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বিবেচনা করা হয়। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিদর্শন করা ৫৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২১টির ব্রুটো ইনডেঙ ২০এর বেশি। অর্থাৎ ৩৫ দশমিক ৬০ ওয়ার্ডে মশার উপস্থিতি এখনও ঝুঁকিপূর্ণ। ডিএনসিসির ৪০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টি ওয়ার্ডের ব্রুটো ইনডেঙ ২০এর বেশি। অর্থাৎ ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ ওয়ার্ডে মশার উপস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, এডিস মশা এখন সারা দেশে সারা বছরই থাকবে। কারণ এডিস মশা প্রজননের জন্য যে তাপমাত্রা দরকার তা সারা বছরই থাকে। এর সঙ্গে পানি যোগ হলে এডিস মশার প্রজনন হবে। মশা তার প্রজননের জন্য কিছু কিছু জায়গায় এখনও পানি পেয়ে যাচ্ছে। নির্মাণাধীন ভবন, বহুতল ভবনের পার্কিংয়ে গাড়ি ধোয়ার জায়গা, বাসায় পানি জমিয়ে রাখার স্থানে এডিস মশা পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, এডিস মশা যেহেতু পাওয়া যাচ্ছে সেহেতু ডেঙ্গুও থাকবে। তবে শীতকালে মশা কম পাওয়া যাবে। ডেঙ্গু থেকে আমাদের মুক্তি নাই।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, মশা কমলেও একেবারে শূন্যের কোটায় আসবে না। কারণ তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে কম হলে মশার লার্ভা জন্মাতে পারে না। দেশে এখনও তাপমাত্রা এর নিচে নামেনি। তাছাড়া আমাদের দেশে অপরিচ্ছন্নতার কারণে বৃষ্টি ছাড়াও নিত্য ব্যবহার্য পানি জমে থাকছে। বোতলে, কন্টেনারে পানি জমে থাকছে। আমরা আমাদের পরিবেশকে নোংরা করে ফেলেছি।

তিনি বলেন, ডেঙ্গু এখন সারা বছরই থাকবে। এতে কিছু মানুষ ঝুঁকিতে রয়েছেন। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, গর্ভবতী নারী ও শিশুরা আক্রান্ত হলে তাদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি। বাংলাদেশে যেহেতু ডেঙ্গুর অনেকগুলো সেরোটাইপ পাওয়া গেছে, তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত গুরুতর রোগীর সংখ্যাও অনেক বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশীতের কাপড় কেনার ধুম
পরবর্তী নিবন্ধবছরের শুরুতে রেলে বড় নিয়োগ