রবি মৌসুম সময় শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই শীতকালীন সবজির আবাদ শুরু করেন শঙ্খনদের চর ও তীরবর্তী অঞ্চলের কৃষকরা। কিন্তু বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় চলতি মৌসুমে এখনো পুরোপুরি শীতকালীন সবজি উৎপাদনে যেতে পারেনি এ অঞ্চলের কৃষকরা।
বিগত মৌসুমগুলোতে অক্টোবর মাসের শুরু থেকেই আগাম শীতকালীন সবজি বাজারে বিক্রি করে প্রচুর লাভবান হতেন তারা। চলতি মৌসুমে আগাম শীতকালীন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষকরা ২ মাস আগে থেকে জমি প্রস্তুত করে বেশ কয়েকবার সবজির আগাম বীজ রোপন করলেও বৃষ্টিতে তা নষ্ট হয়ে যায়। এভাবে একেক জন কৃষক ২ থেকে ৩ বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকে জমি প্রস্তুত করে রাখলেও এখনো বীজ রোপন করতে পারেননি।
তবে গত সপ্তাহ থেকে কৃষকরা জমি প্রস্তুত ও শীতকালীন সবজির বীজ রোপন করা শুরু করেছেন। তাই চলতি মৌসুমে শঙ্খচরের সুস্বাদু শীতকালীন অন্যতম সবজি মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, টমেটো, ধনেপাতাসহ অন্যান্য সবজি পেতে ভোক্তাদের আরো ২ থেকে ৩ মাস অপেক্ষা করতে হবে। ইতিমধ্যে অনেক কৃষক লোকসান দিয়েছেন। এরমধ্যে দেরীতে শীতকালীন সবজি উৎপাদনে যেতে বাধ্য হওয়ায় চলতি মৌসুমে উৎপাদন খরচ তোলা নিয়েও দুঃশ্চিতায় রয়েছেন কৃষকরা।
সরেজমিন দেখা যায়, শঙ্খের চরে এখনো খালি পড়ে রয়েছে চাষযোগ্য বিস্তীর্ণ জমি। অনেক কৃষক জমি প্রস্তুত করে ফেলে রেখেছেন। আবার অনেকেই মাত্র জমি প্রস্তুত শুরু করেছেন। কিছু জমিতে কৃষকরা সবজির বীজ রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অল্প জমিতে সবজির চারা গজিয়ে উঠেছে। অথচ বিগত মৌসুমগুলোতে অক্টোবর মাসের এই সময়ে হরেক রকম সবজিতে পুরো চরাঞ্চল সবুজে সবুজে ভরে উঠতো। পুরোদমেই শীতকালীন সবজি বাজারে বিক্রি শুরু করতো তারা। এখন অক্টোবর মাসে এসে কৃষকদের জমি প্রস্তুত, নতুন চারা রোপন, সার, কীটনাশক প্রয়োগসহ ক্ষেতের পরিচর্যা করতে হচ্ছে।
শঙ্খচরের কৃষক নুরুল ইসলাম নুরু ও মোজাম্মেল হক জানান, গত মৌসুমে সেপ্টেম্বর–অক্টোবর মাসের মধ্যেই একই জমি থেকে শীতকালীন অন্যতম সবজি মুলা দুই চালানের মতো বিক্রি শেষ করেছিলেন। কিন্তু চলতি মৌসুমে বৃষ্টি যেন থামছেই না। একবার জমি প্রস্তুত করলেই নেমে আসছে অঝোরধারায় বৃষ্টি। এতে প্রস্তুতকৃত জমি নষ্ট হয়ে যায়। এভাবেই কেটে গেছে ২ মাস। বর্তমানে নতুনভাবে জমি প্রস্তুত করে পুনরায় সবজি চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন শঙ্খচরের প্রবীন ও সবচেয়ে সফল কৃষক নুরুল ইসলাম নুরু। তিনি প্রতি মৌসুমে শঙ্খের চরে প্রায় ১০ থেকে ১২ কানি জমিতে বিভিন্ন প্রকারের শীতকালীন সবজির আবাদ করেন। বিগত ২ মাস ধরে জমি প্রস্তুত করতেই তার প্রায় ৮ লাখ টাকার উপরে খরচ হয়েছে। সামনে আবারো বৃষ্টির বাধা আসলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে।
কৃষক আবু তৈয়ব জানান, তিনি দেড় মাস আগে একবার জমি প্রস্তুতের পর বৃষ্টি এসে তা নষ্ট হয়ে যায়। বিগত ১৫ দিন আগে পুনরায় জমি প্রস্তুতের পর ধনে পাতার বীজ রোপন করেন। দেড় মাস আগে বীজ রোপন করতে পারলে এতদিনে ধনেপাতা বিক্রি শেষ করতে পারতেন।
কৃষক আহমদ নবী, মো. মোস্তফাজ্জামান, আবদুল আজিজ মুন্সি, মো, হাসান, মো. মারুফসহ অনেকেই জানান, শ্রাবণ মাসের শেষ থেকেই শীতকালীন অন্যতম সবজি মুলা, বেগুন, বরবটি চাষ শুরু করেন। তা কার্তিক মাসের শুরু থেকেই বাজারে বিক্রি শুরু করতেন। ফুলকপি ও বাঁধাকপির চারা আশ্বিন মাসের শেষের দিকে রোপন শুরু করেন। অথচ অব্যাহত বৃষ্টিতে চলতি মৌসুমে শীতকালীন সবজি চাষে ঘটলো ছন্দপতন।
কৃষকরা জানান, এখানকার শীতকালীন সবজি আগাম চাষাবাদ করতে পারলেই লাভবান হন তারা। আশ্বিন মাসের শেষের দিকে ও অগ্রহায়ন মাসের শুরু থেকেই সকল প্রকার শীতকালীন সবজি বাজারে পুরোদমে বিক্রি করেন। কিন্তু চলতি মৌসুমে দেড় দুই মাস পিছিয়ে পড়ায় এবার লোকসান গুনতে হবে তাদের। কারণ ইতিমধ্যে উত্তর বঙ্গের কিছু কিছু সবজিও বাজারে আসতে শুরু করেছে। চলতি মৌসুমে চন্দনাইশের শীতকালীন সবজি বাজারে আসতে দেরী হওয়ায় সবজির দামও নাগালের বাইরে রয়েছে। বর্তমানে সব রকমের সবজিই প্রকারভেদে বাজারে ৮০ থেকে ১৫০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আজাদ হোসেন জানান, আগামী ১৬ অক্টোবর থেকে শুরু হবে রবি মৌসুম। চলতি মৌসুমে ২ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি জানান, আগাম শীতকালীন সবজির মধ্যে ইতিমধ্যে খরিপ–২ এর আওতায় ৭০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বৃষ্টিপাত থাকায় এরমধ্যে ৪০০ হেক্টরের মতো জমিতে কৃষকরা সবজির চাষাবাদ করতে পেরেছেন। উপ–সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নানা পরামর্শ প্রদান করছেন। আরো কিছুদিন পর জানা যাবে রবি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীত কী পরিমাণ জমিতে কৃষকরা শীতকালীন সবজি চাষাবাদ করেছেন। বৃষ্টিপাত থাকায় চলতি মৌসুমে শীতকালীন সবজি চাষাবাদে কিছুটা ছন্দপতন হওয়ার কথা জানান তিনি।