শিশুর স্বপ্নের জগৎ বু বু ওয়ার্ল্ড বর্ষপূর্তিতে নবরূপে রঙিন সাজে

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৪ নভেম্বর, ২০২০ at ১০:১৮ পূর্বাহ্ণ

বয়স তার আড়াই বছর হবে হয়তো। ছোট্ট পায়ে একাই সে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভয়-ডর তার অভিধানে নেই। বাস্কেটবল ছাড়া আর কোনোটা তার আয়ত্তে নেই। জাহিন নাম তার। সাথে এসেছে তার ভাই জাবির। শিশু যে শহরে নিরাপদ, সে শহরে সকলে নিরাপদ। এই নগরীতে শিশুরা নিরাপদে হাঁটতে পারে না। তাদের খেলাধূলার জন্য পার্ক ও খেলার মাঠ নেই বললে চলে। শহরের শিশুরা খেলাধূলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তারা শারীরিক চর্চা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে তারা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে বেড়ে উঠছে। তাদের যথাযথ শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বিনোদন, খেলাধূলার বিকল্প নেই। জাহিন, জাবির, আলভিরাসহ এক ঝাঁক শিশু এসেছে বাবা-মার সাথে বু বু ওয়ার্ল্ডে। আর এসেই হারিয়ে যাচ্ছে স্বর্গরাজ্যে। খেলছে বিভিন্ন ধরনের গেম। হেলিকপ্টারের মতো একটি খেলনা রয়েছে। যেখানে বসলেই মনে হয় যেনো আকাশে উড়ছে। জাবিরের মতো আজ অনেক শিশু এসেছে বু বু ওয়ার্ল্ডে। চট্টগ্রাম বাঁচলে দেশ বাঁচবে- এমন কথা বলেই শেষ। এই শহরে শিশুদের বিনোদনের জন্য তাদের নিজের মতো করে খেলার সুযোগ নেই, বিকাশের সুযোগ নেই- এটা উচ্চারিত হয় বিশেষ দিবসে। যে দুয়েকটা পার্ক রয়েছে, সেখানে বড়দের প্রাধান্য। আর পরিবেশও একটি অন্তরায়। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামের শিশুদের নিজেদের জন্য আলাদা কোনো জগত ছিল না। কিন্তু চট্টগ্রামে আবাসন শিল্পে সাড়া জাগানো রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান সিপিডিএল শিশুদের জন্য সেই জগত নিয়ে হাজির হয়। নগরীর জামাল খানের শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ রোডে গড়ে তোলা হয় বু বু ওয়ার্ল্ড নামে শিশুদের বিনোদনের নতুন এক জগত। গত বছর বিশ্ব শিশু দিবসে অর্থাৎ ২০ নভেম্বর চালুর পর তা শিশুদের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে শিশুদের জন্য ১৮টি গেম রয়েছে। আকর্ষণীয় গেমগুলো হচ্ছে – এয়ার হকি, অ্যালিয়েন ফাইট, বু বু ৩ ডি কার, হ্যারিকেন চপার, রোড রাশ, পনি ক্যারোসেল, প্রো বাস্কেটবল, পেনিনসুলা রাইড, রেজিং স্ট্রম, রাইড অন মাস্ট্যাং, স্পিন দ্য ওয়ার্ল্ড, থ্রো ইট টু উইন ইট, দ্য লস্ট ওয়ার্ল্ড, ইউনিকর্ন রাইড, ভিআর ম্যাজিক কার্পেট, ৯ডি ভিআর ইত্যাদি। আর এই গেমগুলো খেলতে হয় কয়েন দিয়ে। কয়েন দিলেই চলবে রোমাঞ্চকর এই সব গেম। কয়েনগুলো টাকা দিয়ে কিনতে হয়। প্রত্যেকটি রাইডের সাথে থাকা নির্ধারিত কিডস অ্যাম্বাসেডররা খেলার নিয়ম দেখিয়ে দেওয়ার জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত। এখানে থাকা রাইডগুলোর দুটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কিছু রাইড খেলতে শরীরের শক্তি প্রয়োজন হবে এবং কিছু রাইড খেলতে মস্তিষ্কের ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ, শিশুদের মানসিক, শারীরিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশকে প্রাধান্য দিয়ে রাইডগুলো সেট করা হয়েছে। প্রযুক্তির পরশে এমন অনেক রাইড রয়েছে যেগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে শিশুরা বিভিন্ন মুভিও দেখতে পাবে। এসব খেলার মধ্যে আবার পুরস্কারও রয়েছে। এদের মধ্যে উইনিং ক্ল নামে একটি গেম রয়েছে – এ গেমটি জিততে পারলে শিশুরা একটি খেলনাও পাবে। অর্থাৎ, শিশুদের মনন বিকাশের সব ব্যবস্থাই রয়েছে এই জগতে। রাইডগুলো খেলতে সর্বনিম্ন একটা থেকে সর্বোচ্চ তিনটি কয়েন পর্যন্ত লাগে। প্রতিটি কয়েন ৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। এছাড়া কিছু সাশ্রয়ী গেম কয়েন প্যাকেজও রয়েছে। শিশুদের খেলতে দিয়ে যাতে অভিভাবকরাও খেলতে পারে এজন্য তাদের জন্যও রয়েছে কিছু রাইড। এতে করে আভিভাবকদের আর অলস বসে থাকতে হবে না। শিশুরা খেলার মাঝে বা খেলা শেষে হাঁপিয়ে উঠতে পারে। সেজন্য এই বু বু ওয়ার্ল্ডের ভেতরেই রয়েছে রেস্টুরেন্ট সুবিধা। সুলভ মূল্যে সবাই যাতে এখানে খেতে পারে সেই ব্যবস্থাও রয়েছে। রয়েছে পর্যাপ্ত ওয়াশরুম। করোনাকালেও থেমে নেই বু বু ওয়ার্ল্ডের কার্যক্রম। তবে প্রবেশ করতে সবার মাস্ক লাগবে। আর প্রবেশের সময় হাতে স্যানিটাইজার দেয়া হবে এবং পরিমাপ করা হবে তাপমাত্রাও। একইসাথে প্রতিটি রাইড একটি শিশু ব্যবহারের পর আবার স্যানিটাইজ করে পরবর্তী শিশুর ব্যবহারের জন্য প্রস্তুতি করা হয়। খেলাধূলা এবং খাবারের পাশাপাশি বু বু ওয়ার্ল্ডে জন্মদিন, ক্লাস পার্টি, ফ্যামিলি প্রোগ্রাম, গেট টুগেদারসহ বিভিন্ন ধরনের পার্টি করার সুব্যবস্থা রয়েছে।
গত ২০ নভেম্বর বিশ্ব শিশু দিবসের সাথে পালিত হল বু বুর বর্ষপূর্তিতে মাতি ফূর্তিতে। এ উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী নানা আয়োজনের উদ্বোধনী দিনে শিশুদের নিয়ে কেক কেটে প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপনের সূচনা করেন সিপিডিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেন। এছাড়া, উন্মুক্ত শিশু চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, আকর্ষণীয় ফেস পেইন্টিং, মজার গল্প বলার আসর, বুক কর্নার ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, ক্র্যাফটিং ও পোর্ট্রেট স্কেচ, শেষ দিনে জনপ্রিয় যাদুশিল্পী রাজীব বসাকের পরিবেশনা। করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বু বু ওয়ার্ল্ড প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত। এখানে শিশুরা স্বপ্নের রঙিন ডানা মেলতে পারবে। বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে সপ্তাহব্যাপী আয়োজনে থাকছে ৭৯০ টাকার ফ্যামিলি প্যাকেজ। যেখানে ফ্যামিলি প্ল্যাটারের সাথে তিনশ টাকা সমমূল্যের গেম কয়েন ফ্রি।
সিপিডিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেন জানান, শিশুদের জন্য একটি জগত গড়ে তোলার স্বপ্ন থেকে বু বু ওয়ার্ল্ড। গত এক বছরে অভাবনীয় সাড়া পেয়েছি। যেখানে শিশুদের হাত ধরে অভিভাবকরা আসবে। এখন করোনাকালে শিশুরা ঘরবন্দী, তাই তাদের মনন বিকাশের জন্য সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বজায় রেখেও যাতে বিনোদনের সযোগ দেয়া যায় সেই চেষ্টা করছি। আমি একে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যেতে চাই। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই জগতে শিশুরা নিজেদের মতো করে বিচরণ করতে পারবে। শিশুর মনন বিকাশে বু বু ওয়ার্ল্ড অনন্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম। বৈশ্বিক মহামারিতেও শিশুদের এটা যথাযথ বিনোদন স্থান। বু বু ওয়ার্ল্ড সময়ের সাথে চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেবা ছড়িয়ে দিতে পারবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসেই প্রতারক কর্মচারী অবশেষে কারাগারে
পরবর্তী নিবন্ধসিআরবিতে বেসরকারি হাসপাতালের নামে উচ্ছেদ মেনে নেয়া হবে না