ছোট্ট শিশুটি মায়ের পাশে বসে মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে মনোযোগ দিয়ে। অপরপ্রান্তে তার শিক্ষক তাকে গল্প বলার ছলে নানা কিছু শেখাচ্ছেন। ছবি দেখাচ্ছেন, গল্প বলছেন এক কথায় তাকে আনন্দের সাথে শেখানোর জন্য যা যা করা দরকার সবকিছুই করছেন। করোনা মহামারীর মধ্যে যখন সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ তখন পড়াশোনা চলছে অনলাইনে। বড়রা অনলাইন ক্লাসগুলোতে নিজে থেকেই যোগ দিলেও ছোটদের এসব ক্লাসে ধরে রাখা খুবই কঠিন ব্যাপাার। তাই তাদেরকে মনোযোগী রাখার জন্য চিত্তাকর্ষক নানা কিছু করতে হয়। আর এরকম সবকিছুই করা হচ্ছে রেড-গ্রিন একাডেমির অনলাইন ক্লাসে।
শিশুদের জন্য অনলাইন ক্লাসগুলোকে আকর্ষণীয় করে তুলতে স্কুলটির প্রিন্সিপাল সারা’ তানভী নিয়েছেন নানা উদ্যোগ। তিনি তার ল্যাপটপে যখন ক্লাস করাতে বসেন তখন শুধু কিছু বইয়ের পাতা উল্টিয়েই যান তা কিন্তু নয়। তিনি তার স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীদের বইয়ের পড়া পড়ানোর সময় তাদের সঙ্গে গল্প করেন, সুন্দর সুন্দর উদাহরণ দেন, হাসাহাসি করেন। মোট কথা একটা শিশু যেন অপরপ্রান্তে মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারের সামনে বসে যেন কোনোভাবেই মনে না করে যে সে ক্লাসে নেই। সারাহ ম্যাডাম তার অনলাইন ক্লাসে চেষ্টা করেন তার স্কুলের শিশুদের অনলাইনেই একটা বাস্তব ক্লাসের আবহ তৈরির। তার শিশু শিক্ষার্থীরা যেন কোনোভাবেই না ভাবে যে তারা স্কুলের ক্লাসে নেই সেজন্য তিনি ব্যবহার করেন তার সৃষ্টিশীলতাকে।
কেন শিশুদের জন্য একটি স্কুল শুরু করতে গেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রিন্সিপাল সারা’ তানভী বলেন, “আমি অনেক দেশ ঘুরেছি। কয়েকটা দেশের স্কুলও দেখতে গিয়েছি। সেখানে দেখেছি শিশুরা কী আনন্দের সাথে তাদের পড়াশোনা করে। তখন আমারও মনে হলো আমাদের দেশের শিশুদেরও যদি শুধু বই মুখস্ত না করিয়ে নানা রকম বাস্তব উদাহরণ দিয়ে শেখানো যায় তাহলে তাদের শিক্ষাটি হবে আনন্দের ও দীর্ঘস্থায়ী। এ পড়া তারা সহজে ভুলবে না। সেই চিন্তা থেকেই আমার রেড-গ্রিন একাডেমি শুরুর উদ্যোগ।”
নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি এলাকার আরেফিন নগরের আল বারাকা হাইটসে অবস্থিত স্কুলটি শুরু করতে তার উদ্যোগে এগিয়ে এসেছেন সাবেক লায়ন্স গভর্নর কামরুন মালেক সহ শিক্ষানুরাগী ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব এবং বিদ্যালয় পরিচালনায় দক্ষ পরিচালকবৃন্দ। তাঁরা তাঁকে শুরু থেকেই নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছেন একটি ভিন্নধর্মী স্কুল গড়ে তোলার ব্যাপারে। তাছাড়াও সৃষ্টিশীলতার সাথে স্কুলটি পরিচালনায় তাঁর কাজকে গতিশীল করতে তাঁর সাথে রয়েছে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের একটি দল।
করোনা মহামারীর কারণে স্কুল বন্ধ থাকলেও সেটিতে অন্তর্ভুক্ত আছে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন পাঠ্যসূচি বহির্ভূত কর্মকাণ্ড। এগুলোর মধ্যে আছে তায়েকোন্ডো, সাঁতার, এথলেটিঙ, স্পিকার্স ক্লাব ও মিউজিক। সমৃদ্ধ পাঠ্যসূচিতে সাধারণ পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি আছে আল-কোরান, সংস্কৃত, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল শিক্ষার ব্যবস্থা যাতে সব ধর্মের শিশুরাই ধর্মের মানবিক মর্মবাণীটি বুঝতে পারে। রেড-গ্রিন একাডেমিতে বিস্তৃত খেলার মাঠ ছাড়াও আছে সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, কম্পিউটার ল্যাব ও সায়েন্স ল্যাব। ১৬ হাজার বর্গফুটের স্কুলটিতে সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার পাশাপাশি আছে ক্যান্টিন ও শিক্ষার্থীদের স্কুলে আনা-নেয়ার ব্যবস্থাও।
স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে শিক্ষার্থীদের নৈতিক, মানসিক, সামাজিকভাবে স্বতন্ত্র চিন্তাধারার মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা-এমনটাই জানালেন রেড-গ্রিন একাডেমি ট্রাস্ট-এর চেয়ারপার্সন কামরুন মালেক। তিনি বলেন, “বিশ্ব সমাজ ব্যবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থী স্বভাব ও নৈতিকতা, কর্মদক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা ও সৃজনশীলভাবে গড়ে ওঠার স্বপ্নপূরণে রেড-গ্রিন একাডেমি গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি প্রতিটি শিশুর মাঝেই লুকিয়ে আছে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিভা। তাদের প্রতিভাগুলোকে চিহ্নিত ও চর্চার ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে আমাদের স্কুলটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে কাজ করে যাবে। স্কুলে শুধু বইয়ের পড়া পড়লেই হবে না সেই সাথে শিখতে হবে মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন নানা কিছু। আর এসব কিছু শিখতে হবে উচ্ছ্বাস আর আনন্দের সাথে।”
প্রবীর বড়ুয়া