আমরা সবাই জানি, শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। আগামী জীবনে এগিয়ে যেতে হলে এবং শিশুর উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হলে তাদেরকে জ্ঞান, বিজ্ঞান, মেধা ও মননে পারদর্শী হতে হবে। শিশুকে পরিপূর্ণ একজন আলোকিত মানুষ হতে গেলে বই পড়ার ভূমিকা অপরিসীম। ছোটবেলা থেকেই যদি শিশুর হাতে পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি গল্পের বই, ছড়ার বই এবং বয়স উপযোগী অন্যান্য বিজ্ঞান ভিত্তিক বই তুলে দেওয়া যায় তাহলে অবশ্যই তাদের মেধা ও বুদ্ধিবৃত্তির পরিপূর্ণ বিকাশ হবে। ছোটবেলা থেকেই শিশুকে বই পড়ার প্রতি উৎসাহিত করতে হবে। শিশু, কিশোরদের সৃজনশীল মননশীলতা গড়ে তুলতে হলে বই পড়ার কোনও বিকল্প নেই। শিশুরা স্বভাবতই চঞ্চল এবং কৌতূহলী মনের হয়ে থাকে। তাদের মনের হাজারো প্রশ্ন আর এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে হলে তাদেরকে অবশ্যই বই পড়তে হবে। এক্ষেত্রে শিশু বই পড়ে আনন্দ পেলেই তার মধ্যে বই পড়ার প্রতি আগ্রহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হবে। তাই সেই ধরনের বই শিশুর হাতে তুলে দিতে হবে যে বই পড়ে সে আনন্দ পাবে। সহজ ও সাবলীল ভাষায় লেখা বই শিশুদের বই পড়ায় আগ্রহী মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে। শিশুদের আত্মিক, বুদ্ধি ভিত্তিক, শারীরিক, সামাজিক গুণাবলী অর্জনে বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে টেলিভিশন, ইন্টারনেট, ভিডিও গেমস, নেটফ্লিক্স ইত্যাদির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে শিশুরা এগুলোর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। সঠিক সময়ে এ ধরনের কুঅভ্যাসগুলো থেকে শিশুদের ফিরিয়ে আনতে না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এ জন্য পারিবারিক সচেতনতা সৃষ্টি করার প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষত এক্ষেত্রে পরিবারের মা অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ, পরিবারই হচ্ছে শিশুর প্রথম বিশ্ব ও প্রথম বিদ্যাপীঠ। মা হচ্ছেন তাদের কেন্দ্রবিন্দু। একজন মাকেই সর্বপ্রথম ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের পরিবর্তে শিশুর হাতে তুলে দিতে হবে বই। শিশুরা স্বভাবতই কল্পনা প্রবণ। তাদের কল্পনা শক্তিকে উজ্জীবিত করার জন্য প্রয়োজনে প্রথমে মাকে ছোট ছোট গল্প পড়ে শোনাতে হবে। এতে করে পড়ার প্রতি তার আগ্রহ জন্মাবে। আর আগ্রহ জন্মালে শিশু আস্তে আস্তে নিজেই বই পড়বে। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। স্বভাবতই অন্যদের যা করতে দেখে ওরা সেটাই করার চেষ্টা করে। তাই পরিবারের বাবা মাকে প্রথমে শিশুকে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে এগিয়ে আসতে হবে। শিশু যদি প্রতিদিন তার বাবা–মাকে গল্পের বই কিংবা অন্যান্য বই পড়তে দেখে। তার ভেতরও বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি হবে। জন্মদিনে কিংবা বিশেষ কোনো দিনে শিশুকে বই উপহার দেওয়া, বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত বইমেলায় শিশুকে নিয়ে যাওয়া এবং বই কিনে দেওয়ার মাধ্যমেও বই পড়ার প্রতি অনাবিল আগ্রহ সৃষ্টি করা যায়। বই পড়ার পাশাপাশি শিশুকে যদি বই সংগ্রহের ব্যাপারে উৎসাহিত করা যায় তাহলে তাও বই পড়ার অভ্যাসের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মা বাবার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও শিশুদের বই পড়ায় আগ্রহী করে তুলতে পারেন। পড়াকে আনন্দদায়ক করে তোলার জন্য গান, গল্প, ছড়া ইত্যাদি অন্যতম মাধ্যম হতে পারে। শিশু যদি আনন্দ নিয়ে না পড়ে তাহলে তাদের শিখন কখনো স্থায়ী হয় না। তাই শিশুদের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে বই পড়া আবশ্যক। বই পড়ার মাধ্যমে শিশুদের চিন্তাশক্তিরও উন্নয়ন হয়। শিশু তার চারপাশের পরিবেশ, মানুষ, সমাজ, দেশ এবং বিশ্ব সম্পর্কে প্রকৃত ধারণা এবং নানা প্রশ্নের উত্তর বই পড়ার মাধ্যমে পেতে পারে। তাই একটি শিশুর আলোকিত মানুষ হওয়ার ক্ষেত্রে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার কোনও বিকল্প নেই।