লুইস দে লা ফুয়েন্তে, যাকে কোচ গড়ে তোলার কারিগর বলা হয়। তার অধীনেই কোচিংয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার ডাগআউটে অল্প সময়েই আলোড়ন সৃষ্টি করা লিওনেল স্কালোনি। গুরু–শিষ্য দুজনই দুই মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠেছেন। ইউরোতে স্পেন আর কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনা। অথচ স্প্যানিশ শিরোপার স্বপ্ন দেখানো লা ফুয়েন্তে দলের সাফল্য পাওয়ার দিকে এতটাই মগ্ন ছিলেন যে, টুর্নামেন্ট জুড়ে দিনে মাত্র তিন ঘণ্টা করে ঘুমিয়েছেন। এক সাক্ষাৎকারে নিজেই এই তথ্য জানিয়েছেন এই স্প্যানিশ মাস্টারমাইন্ড। লা ফুয়েন্তে বলেছেন, ‘আমরা খুবই অল্প সময় অবসর পাই। আমি আমার রুটিন মেনে খুব দ্রুত উঠে যাই, এরপর সকাল ৯টা থেকে রাত ১–২–৩ কিংবা কখনও ৪টা পর্যন্তও কাজ করেছি। অর্থাৎ আমার খুব বেশি ঘুমানোর সুযোগ নেই, কোনো কোনো দিন মাত্র তিন ঘণ্টা। অন্য সময়ে (টুর্নামেন্টের বাইরে) চার–পাঁচ ঘণ্টা ঘুমাই। খাওয়ার পর কিছুক্ষণ ঘুমানোর অভ্যাস আছে, তবে সেটি বেশিক্ষণ নয়।’ এ সময় সঞ্চালক জুয়ান্মা ক্যাস্টানো চাপের কারণে ঘুম কম হয় কি না জিজ্ঞেস করলে লা ফুয়েন্তে বলেন, ‘একদমই না, এখানে অনেক কাজ থাকে। ম্যাচের আগে সময়টা খুব কম। আমাদের নিজেদের পরিকল্পনা ও প্রতিপক্ষ নিয়ে গবেষণা করতে হয়। দলীয় প্রস্তুতির আগে আলোচনা, তারপর অনুশীলন ও ফুটবলার ভেদে কাজ।’ তবে লা ফুয়েন্তের বয়সে এত অল্প সময় ঘুমানো কিছুতেই স্বাস্থ্যসম্মত নয় বলে মন্তব্য করেছেন স্প্যানিশ ঘুম বিশেষজ্ঞ ওরিওল মার্কাদে। মাত্র তিন ঘণ্টা ঘুমালে সৃষ্টিশীল মনোভাব কিংবা স্বাস্থ্য দুটোই নষ্ট হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তবে স্প্যানিশ কোচের এই স্বল্প–নিদ্রা যে দলের সাফল্যে বেশ ভূমিকা রাখছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। স্পেন গ্রুপপর্ব শেষ করেছিল সবার শীর্ষে থেকে। জর্জিয়াকে ৪–১ গোলে হারানোর পর, জার্মানি–ফ্রান্সকে হারিয়েছে সমান ২–১ ব্যবধানে। এভাবে ২০১২ সালের পর এই প্রথম তারা কোনো বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালেও উঠে গেছে। তাদের সামনে এখন আর কেবল একটাই বাধা, ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ইউরোর শিরোপা ছোঁয়াই বড় লক্ষ্য ৬৩ বছর বয়সী লা ফুয়েন্তের। যদিও স্প্যানিশদের ডাগআউটে শুরুটা এমন সুখকর ছিল না এই কোচের জন্য। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে স্পেন বিদায় নিয়েছিল শেষ ষোলো থেকে। মরক্কোর কাছে টাইব্রেকারে হারের পর সমালোচনার মুখে দায়িত্ব ছাড়তে হয় লুইস এনরিকেকে।
এরপর তৎকালীন স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি লুইস রুবিয়ালেসের অনুরোধে দায়িত্ব নেন লা ফুয়েন্তে। গণমাধ্যম থেকে শুরু করে ফুটবল সংশ্লিষ্টরা যা সহজভাবে নেয়নি। ফলে লা ফুয়েন্তের জন্য শুরুটা ছিল ভুলে যাওয়ার মতো। এরপর নারী ফুটবলারকে অযাচিত চুমু খেয়ে পুরো ফুটবলবিশ্বের তোপের মুখে পড়েন রুবিয়ালেস। যা চাপ তৈরি করেছিল স্প্যানিশ কোচ লা ফুয়েন্তের জন্যও। সে সময়ের পরিস্থিতি নিয়ে আলভারো মোরাতা, দানি কারভাহাল ও লামিনে ইয়ামালদের এই গুরু বলছেন, ‘আমি কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছিলাম, আমি হয়তো সেটি ডিজার্ভ করতাম। পরে আমি ক্ষমা চেয়েছি, পুরো পরিস্থিতি সুখকর ছিল না। এ ধরনের চাপ ও আবেগপূর্ণ মুহূর্ত আমি কখনোই মোকাবিলা করিনি। ওই সময় শুধু ভেবেছি আমাদের ইউরোতে কোয়ালিফাই করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’ সে সময় পেরিয়ে এখন হয়তো ফুয়েন্তে তার স্পেন দল নিয়ে সুখের সমুদ্রে সাঁতার কাটছেন। যা পূর্ণতা পাবে ইউরো চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে।